আমরা কোন দেশে আছি?
২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গত ১০ অক্টোবর র্যাবের পরিচয়ে একদল ডাকাত মাদার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে যায়। ডাকাত দল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খিলক্ষেত প্রাইম ডেন্টাল কলেজের সামনে থেকে ওই কর্মকর্তাদের বহনকারী গাড়ি ঠেকিয়ে নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে ৩০০ ফুট সড়কের বোয়ালিয়া ব্রিজের কাছে নামিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাত ব্যক্তিকে ঢাকা ও পটুয়াখালী থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাইভেট কার, র্যাবের পোশাক, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন, ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ডাকাতির টাকায় কেনা ২৩ ভরি স্বর্ণলংকার জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর ডিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৫ জেলায় ডাকাতির মামলা রয়েছে। এই ঘটনায় দুটি বিষয় বিশেষভাবে প্রতিভাত হয়। প্রথমত, দেশের সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই কোনো নতুন ঘটনা নয়। এমনকি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও এসব অপরাধের আশংকামুক্ত নয়। দ্বিতীয়ত সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো অপরাধীরা এতটাই নির্ভয় ও বেপরোয়া যে, র্যাব-পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহারের স্পর্ধা দেখাতেও পিছপা হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারী মানুষ ও যানবাহন মোটেই নিরাপদ নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি, রাহাজানি, মালামাল ছিনতাই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রাজধানীর সড়ক-মহাসড়ক অধিকতর নিরাপদ মনে করা হলেও দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো এলাকার ডাকাত-ছিনতাইকারীদের অভায়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ফ্লাইওভারে পর্যন্ত ডাকাতি-ছিনতাই হচ্ছে। ডাকাত-ছিনতাইকারীরা অর্থ ও মালামালাই লুণ্ঠন করছে না ক্ষেত্র বিশেষ প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে গণডাকাতি, মালামাল লুট কখনো বা মালামালসহ ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। ঢাকা এলিভেটেড প্রক্সপ্রেসওয়ে যোগাযোগের অগ্রযাত্রায় অন্যতম মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত। কিছুদিন আগে এর অংশবিশেষ (কাওলা থেকে তেজগাঁও) উদ্বোধন করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, উদ্বোধন হলেও এর নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তাব্যবস্থা যথাযথ হলে আলোচ্য ডাকাতির ঘটনা ঘটতে পারতো না।
নিরাপদ সড়কের জন্য অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। ক’বছর আগে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। সরকারের আশ্বাসে তাদের আন্দোলন থামলেও সরকার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি। সড়ক এতটুকু নিরাপদ হয়নি। বরং সড়ক আগের চেয়ে আরো অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান থেকেই এর প্রমাণ মেলে। গত মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০২টি। এতে নিহত হয়েছে ৪১৭ জন। এক হিসাবে বলা হয়েছে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়। আহতের সংখ্যা যে আরো অনেক বেশি, সেটা বলাই বাহুল্য। দুর্ঘটনায় কারণে কত পরিবার যে বিপন্ন ও অবলম্বহীন হয়ে যাচ্ছে, তার ইয়াত্তা নেই। শুধু সড়ক-মহাসড়কই নয়, ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়েতেও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। হতাহত হচ্ছে মানুষ। ঢাকার হানিফ ফ্লাইওভারে ১০ বছরে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ জন। একথা কারো অজানা নয়, দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন মহাসড়ক হলো, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানী ও পদ্মাসেতুর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্রেসওয়েকেও দুর্ঘটনামুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। এ মহাসড়কেও দুর্ঘটনা ঘটছে হর হামেশা। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুরে সংঘটিত দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়। যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ওই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ডাকাতি, এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা, আমরা আছি কেন দেশে?
আমাদের সড়ক-মহাসড়ক কি কখনোই নিরাপদ হবে না? চোর, ডাকাত, রাহাজান ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে সর্বদা শংকার মধ্যে থাকতে হবে কেন? যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়ে হতাহত হতে হবে কেন? সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ আছে। সড়ক ও সেতুর জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ও আছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিভিন্ন বিভাগ যথোচিৎ ভূমিকা পালন করলে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই এবং দুর্ঘটনা এত বৃদ্ধি পেতে পারে না। সড়ক- মহাসড়কে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পুলিশের অমনোযোগ, দায়িত্বে অবহেলা ও ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজস দায়ী। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও পুলিশের দায় আছে। এই সঙ্গে দায় আছে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের। দেশে ফিটনেসবিহীন ৫ লাখের অধিক গাড়ি দিব্বি চলাচল করছে। এছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষণবিহীন চালক গাড়ি চালাচ্ছে। এই যদি বাস্তবতা হয়, তবে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই, বাড়বেই। যাবতীয় উপদ্রব, আশঙ্কা এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ করতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ, সড়ক বিভাগ প্রভৃতি কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল