ফিলিস্তিনিদের কান্না শুনতে কি পাও?
২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৪ এএম
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
ইহুদিদের সঙ্গে মিতালি না করার নির্দেশ: ইয়াসরিব ছিল মদীনার পূর্ব নাম। রসূলুল্লাহ (সা.) এর হিজরতের পর তার নাম হয় মদীনা মোনাওয়ারা। তখন মদীনায় ইহুদিদের প্রধান তিনটি গোত্র বসবাস করতো: বনু কোরায়যা, বনু নাযির এবং বনু কায়নুকা। হুজুর (সা.) হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে মদীনা ও আশে-পাশে বসবাসরত গোত্রসমূহের সাথে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন যা, ‘মিসাকে মদীনা’ বা মদীনা সনদ নামে ইতিহাস খ্যাত। মদীনার বর্ণিত তিনটি ইহুদি গোত্র এই চুক্তি ভঙ্গ করে বিশ^াসঘাতকতার পরিচয় দান করে এবং তাদের কেউ কেউ মক্কার কোরেশদের সাথে মিলে যায়। তাদের মধ্য হতে কিছু কিছু মোনাফেকও বিশ^াস ঘাতকতা করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
হিজরি দ্বিতীয় সালের রমজান মাসে মুসলমানদের সাথে হক ও বাতিলের প্রথম যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে অভিহিত, মুসলমানদের ঐতিহাসিক বিজয় ও কাফের মোশরেকদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এর প্রতিশোধ হিসেবে মক্কার কাফেররা ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত করে। মুসলিম মোজাহেদীনের সাথে প্রথমে মোনাফেক ইহুদিরাও যোগদান করে। কিন্তু যাত্রাপথ হতে সাতশ’ ইহুদি মোনাফেক বিশ^াসঘাতকতা করে মদীনায় ফিরে যায়। এটি ছিল রসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে রণক্ষেত্রে মোনাফেক ইহুদিদের প্রথম প্রতারণা। মোনাফেক ইহুদি ষড়যন্ত্র-প্রতারণাগুলোর মধ্যে রসূলুল্লাহ (সা.)-কে হত্যাসহ ইসলামকে নির্মূল করার গোপন চক্রান্তের ঘৃণ্য ইতিহাস-কাহিনী সুদীর্ঘ, সীরাত গ্রন্থাবলীতে তার বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান। এসব কারণে কোরআন ও হাদীসের ঘোষণার প্রতি কিঞ্চিত দৃষ্টিপাত করা যাক। কোরআনে বলা হয়েছে: হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। ইহুদিদের এমন নানা অপকীর্তি-কুকর্মের কথা বহু আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রকৃত স্বরূপ জানার জন্য আল্লাহর উল্লেখিত ঘোষণাই যথেষ্ট। যাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন তাদের বদঅভ্যাসগুলো তারই ভালো জানা। আল্লাহ মোমেনদের তাদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন: এর পরও যদি কেউ তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে চায়, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
যাদের অন্তর আল্লাহ সিলমোহর মেরে দিয়েছেন, তাদের গুমরাহী তাদের যেমন দুনিয়ায় জিল্লাত ও অপমানের জীবন দান করে, পরকালেও কঠিন শাস্তির উপযোগী করে অভিশপ্ত ইহুদিরা তাদেরই অংশ। তাদের অন্তরে আল্লাহতাআলা বিরাট তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন, সত্য ও ন্যায় তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই জ্ঞানশূন্য হয়ে তারা উন্মাদের ন্যায় মানবতাবিরোধী ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত।
২০০৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীনে। এর আগে কিছুকাল ইহুদিবাদী ইসরাইলের কর্তৃত্বাধীনে ছিল। ইতিহাসের দিক থেকে গাজা প্রাচীন বৃহত্তর ফিলিস্তিন ভূখন্ডের অংশ ছিল। বর্তমানে গাজায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস বলে জানা যায়।
গাজার প্রচীন ইতিহাস: গাজার প্রচীন স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে। এর অবস্থান ফিলিস্তিনের দক্ষিণ দিকে ভূমধ্যসাগর তীরে ১৮০০০ ন্যটিক্যাল মাইল। প্রাচীনকালে এটি জন পোলের উপাসনালয় ছিল, শামশুন নামক জনৈক ইবরানী শাসক তা ধ্বংস করে দেয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৭২০ সালে দ্বিতীয় সার্জুন এটি অধিকার করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ সালে ইস্কান্দর আল-মাকদুনী, অতঃপর সেলজুকী, রোমান এবং ইহুদিরা এটি অধিকার করে। এরপর ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে এটি আরবদের দখলে আসে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন যুদ্ধে মিসরীয় বাহিনী গাজায় প্রবেশ করে। প্রথম মহাযুদ্ধকালে এই এলাকায় বহু রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে।
বাইজানটাইনিদের অধিকারে থাকাকালে ফিলিস্তিনকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়, যা ৪র্থ খ্রিষ্টাব্দ হতে আরব বিজয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা এসব অঞ্চলের অংশ বিশেষ হাতিয়ে নেয়। অতঃপর পশ্চিম তীর এবং ১৯৬৭ সালে গাজা দখল করে। বহু বছর গাজা ইহুদি অধিকারের থাকার পর ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন মুক্তিকামী সংস্থা হামাসের নিয়ন্ত্রণে আসে। ইসরাইলি ইহুদিরা এখন আবার তা পুনঃদখলের পাঁয়তারা করছে। অধিকৃত এলাকাগুলোতে আগ্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উপর অকথ্য জুলুম-নির্যাতন, উচ্ছেদ অভিযান, ইহুদি বসতি স্থাপন প্রভৃতির ধ্বংসাত্মক তৎপরতার মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি করে চলছে। গাজায় ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞের শেষ কবে হবে, তা বলা কঠিন।
ফিলিস্তিনের মূল ধারারদল পশ্চিম তীরের শাসক গোষ্ঠী ফাতাহ পার্টির নেতা মাহমুদ আব্বাসও নড়ে চড়ে উঠেছেন। ইসরাইলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে তিনিও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘যত চ্যালেঞ্জই আসুক নিজের ভূমি ছাড়ব না।’ কিন্তু ইসরাইলি আক্রমণ ও দমন নীতি বন্ধ করার হামাসের ন্যায় কোনো বাস্তব ভূমিকার কথা তিনি বলেছেন কিনা, তা প্রকাশিত খবর হতে জানা যায় না।
প্রসঙ্গক্রমে ইমাম জাওয়ালিকীর একটি কৌতুকপূর্ণ বক্তব্য এখানে উপস্থাপন করতে চাই। ‘আবু মনসূর মৌহুম নামক বিখ্যাত আরবি ব্যকরণিক আল-জাওলিকী নামে সুপরিচিত। তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল-মোক্তাজি বিল্লাহর পাঞ্জেগানা নামাজের ইমাম ছিলেন। তিনি প্রথমবার যখন খলিফার দরবারে উপস্থিত হন, খলিফাকে বললেন, আমীরুল মোমেনীন, কেউ যদি কসম খায় যে, খ্রিষ্টান ইহুদিদের মধ্যে ইলম (জ্ঞান) তাদের অন্তরের গভীরতায় নেই, তাহলে সে তার কসর ভঙ্গকারী হবে না, ঘটনা অনুযায়ী একেবারে বিশুদ্ধ কসম হবে। কেননা, আল্লাহতাআলা তাদের অন্তরে তালা মেরে দিয়েছেন, এসব তালা কেবলমাত্র ঈমান ও ইসলামই খুলতে পারে। খলিফা বললেন, আপনি খুব উত্তম কথা বলেছেন এবং একদম সঠিক। সে সময় উপস্থিত খ্রিষ্টান চিকিৎসক বক্তব্যটি শুনে অবাক হয়ে নীরবতা পালন করেন। অথচ তিনি জবরদস্ত খ্রিষ্টান আলেম ছিলেন। সেই আব্বাসীয় আমলে ইহুদিদের সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় মনোভাব আজকের দিনেও সমানভাবে বিবেচ্য। ইসলামকে সঠিকভাবে অনুধাবন না করে বিকৃতভাবে মনে করা এবং বিদ্বেষাত্মক চিন্তা-চেতনা নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ ইহুদিদের মজ্জাগত বিষয়। সত্য উপলব্ধির ক্ষেত্রে আল্লাহতাআলা তাদের অন্তরকে সিলমোহর করে দিয়েছেন। উপদেশ গ্রহণের শক্তিও আল্লাহ তাদের থেকে বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। ইমাম জাওয়ালিকী সে সত্যটি খলিফার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন সেই হাজার বছর আগে। অর্থাৎ এরা চিরকালের জন্য পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, হঠকারী জাতি হিসেবে গণ্য। (সমাপ্ত)
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল