রেলের বিশৃঙ্খলা-অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে
২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৫ এএম
বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের প্রাচীনতম আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা। আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বৃটিশ আমলে শুরু হওয়া রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়লেও শুধুমাত্র দুর্নীতি ও অব্যস্থাপনার কারণে অনেক সম্ভাবনাময় রেলওয়ে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। রেলওয়ে তার পুরনো সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। একইভাবে শত শত কোটি টাকার সরকারি বিনিয়োগ ও সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে একে একটি লাভজনক খাত হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশিত নির্ভরযোগ্য রেলকাঠামো গড়ে তোলা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি সবচেয়ে নিরাপদ বাহন হিসেবে পরিগণিত রেল পরিবহনকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মরণফাঁদ হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। গত সোমবার ভৈরবে সংঘটিত মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। আহত শতাধিক। ময়মনসিংহের এক পরিবারের পিতামাতা ও তাদের দুই সন্তানসহ চারজনের মৃত্যুর ঘটনা সারাদেশের মানুষের অন্তরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা কোনো নতুন বিষয় নয়। বার বার একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। একেকটি দুর্ঘটনার পর ১২-২৪ ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ থাকায় রেলের শিডিউল বিপর্যয় এবং যাত্রীদের অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত ৫ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১ হাজার ১১৬ দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনার সাথেই অদক্ষ চালক, চালকের সিগন্যাল অমান্য এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে একই লাইনে কসবায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী তুর্না নিশিথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনকে আঘাত করলে অন্তত ১৫ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
ভৈরবের সিগন্যালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কন্টেইনারবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারোসিন্ধু এক্সপ্রেস ট্রেনটির পেছনে ধাক্কা দিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের চালক (লোকোমোটিভ মাস্টার), সহকারী মাস্টার ও গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত এবং একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। অতীতেও এ ধরনের দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্তসহ এমন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুসারে কখনো প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের বিচার কিংবা জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুসারে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে কসবায় রেল দুর্ঘটনার আগে দুর্নীতি দমন কমিশন রেলের চরম অব্যবস্থাপনা ও ১০ খাতে দুর্নীতি সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণ ও ১৫ দফা সুপারিশ প্রকাশ করেছিল। রেলওয়ের ১০ খাতে দুর্নীতির মধ্যে স্টেশন সিগন্যালিং ব্যবস্থার পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছিল। প্রতিমাসেই রেলের বিভিন্ন স্টেশনে ছোটখাট দুর্ঘটনায় যে সব হতাহতের ঘটনা ঘটে, তার বেশিরভাগই হয় সিগন্যালের ত্রুটি ও চালকের সিগন্যাল অমান্যের কারণে।
দেশের স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থায় গণপরিবহনের একশ্রেণির মালিক-চালকদের সিন্ডিকেটেড দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। এদেরকে কেউ কেউ পরিবহন মাফিয়া বলেও অভিহিত করেন। যথেচ্ছ ভাড়া নির্ধারণ, অদক্ষ চালকদের ভুলে যত্রতত্র দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা, যখন-তখন কর্মবিরতি, অস্বাভাবিক যানজট ইত্যাদি বিড়ম্বনার কারণে গণপরিবহন হিসেবে রেলপথ হচ্ছে মানুষের আস্থা, নির্ভরতা ও নিরাপদ আশ্রয়। রেলের পুরনো ঐতিহ্যের সাথে সমন্বিত আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির এসব বিনিয়োগ তেমন কোনো কাজে আসেনি। যে যন্ত্রাংশ খোলাবাজারে ১৯ হাজার টাকায় পাওয়া যায়, রেলকর্তৃপক্ষ কিনেছে ৩ লাখ টাকায়, ৬৫ হাজার টাকার মেশিন ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় কেনার পুকুর চুরির মতো দুর্নীতির চিত্র পাওয়া গেলেও এর প্রতিকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। একদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়ম সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানি ও দেউলিয়া করে তুলেছে। অন্যদিকে অদক্ষ চালক-কর্মচারী, সিগন্যালিং ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা, টিকিটিং ও প্রমোশনের দুর্নীতি রেলওয়েকে দুর্ঘটনাপ্রবণ, ঝুঁকিপূর্ণ, যাত্রীদের বিড়ম্বনা ও অনাস্থার জন্ম দিচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ ও চালক-কর্মচারীদের ভুলের কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার পরিববারগুলোর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা দূর করে বাংলাদেশ রেলওয়ের সময়োপযোগী আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রেলওয়ের ওপর সাধারণ মানুষকে আস্থাশীল করে একে একটি লাভজনক খাত হিসেবে গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল