ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগে বড় গচ্চা

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম

বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে লক্ষকোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অস্বচ্ছ, অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিমূলক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেয়া বিদ্যুৎ খাতের সেই বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সুফল কিংবা স্থিতিশীলতা বয়ে আনতে পারেনি। বিদ্যুত খাতের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে অন্তত ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও গত ১৫ বছরে এর ১০ ভাগেরও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিনিয়োগ ও বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করলেও এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত করতে পারেনি। উপরন্তু তা জনগণের জন্য বড় ধরণের বোঝা হয়ে উঠেছে। উচ্চমূল্যে কেনা বিদ্যুৎ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক না হওয়ায় জনগণের জন্য তা লায়াবিলিটিতে পরিনত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়লেও একই হারে তা উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহারে সরকারের কার্যকর কর্মপন্থা বা পরিকল্পনা না থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, গত দেড় দশকে শিল্পখাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার শতকরা ১০ ভাগের বেশি কমেছে। শিল্পখাতের পাশাপাশি কৃষিখাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি। এ সময়ে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ৩৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করলেও এই বিশাল বিনিয়োগ শিল্পখাতে প্রত্যাশিত চাহিদা ও মান পুরণ করতে না পারার ঘটনাকে অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করছেন দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের নি¤œমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে না পারায় শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

গত ১৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম-অস্বচ্ছতা ও হরিলুটের ঘটনাবলী নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। সরকারের দায়মুক্তি আইনের কারণে অনেক বিষয়ই স্বচ্ছ হয়নি। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অধীনে একজন উপসচিব বিদ্যুতখাত নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরী করেছেন। সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব এ গবেষণা প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন বলে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়। সেই সরকারি প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ‘গত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ৯০ হাজার কোটি টাকা ডলারে গচ্চা গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে। ভর্তুকির চক্র থেকে বিদ্যুৎখাতকে বের করার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ আসবে না, এই মিথ্যা থামাতে হবে।’ উৎপাদনে না থাকলেও বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে শত শত কোটি টাকা ডলারে পরিশোধের এই ব্যবস্থাকে ‘লুটেরা মডেল’ বলে আখ্যায়িত করেছে সরকারের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের রিপোর্ট। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী এই রিপোর্টের সাথে দ্বিমত করে তা সংশোধনের কথা বলেছেন। দেড় দশক ধরে এই লুটেরা মডেল চালু থাকার পরও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে সরকারের চুক্তি নবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতে অস্বাভাবিক উচ্চ হারে সর্বোচ্চ বরাদ্দ খরচ করেও এই বিশাল বিনিয়োগের অর্থনৈতিক ফলাফল নেতিবাচক হওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ খাতের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ শিল্প ও কৃষিখাতে সুফল বয়ে আনতে না পারলেও এ খাত ভারতীয় ও চীনা সরবরাহকারীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে বলে আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর ফলে, জাতীয় বাজেটকে খালি বা শুস্ক করে ফেলা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। যেন তেন প্রকারে বিদ্যুতের অবকাঠামো নির্মাণ করে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিকে একটি রাজনৈতিক গলাবাজির বিষয়ে পরিনত করলেও বিদ্যুতের মান এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথ্যাব্যথা না থাকায় এ খাতের বিনিয়োগ কোনো কাজে লাগছে না। এ কারণে দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ না আসায় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকও কাজে আসছে না। গতকাল নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়, দুটি অপ্রচলিত বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এ খাত নিয়ে নতুন এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ নেই। লক্ষকোটি টাকার বিনিয়োগের বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক ফলাফল নিয়ে ভাবতে হবে। লুটেরা মডেলের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা দিয়ে সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। গত ১৫ বছরে দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেয়ারবাজারের লুন্ঠন প্রবণতা এর বাস্তব পরিনতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। গতকাল প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেশের পুঁজিবাজারকে ঘিরে সংঘবদ্ধ কারসাজি চক্রের অপতৎপরতার কথা উঠে এসেছে। বন্ধ থাকা কোম্পানি শেয়ার পুঁজিবাজার ছেড়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নি:স্ব করে দেয়া এবং পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের সম্ভানাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত হিসেবে দেখতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিল্পবিনিয়োগ ও পুঁজিবাজার নিয়ে চলমান দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, কারসাজি ও লুটেরা মডেল বন্ধ করতে না পারলে জাতি সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো