ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নয় কেন?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২২ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২২ এএম

গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে গত শুক্রবার। চারদিনের হলেও একে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের জনগণসহ যুদ্ধবিরোধী শান্তিকামী বিশ্ববাসী। শর্ত অনুযায়ী, এ চারদিনে হামাসের হাতে থাকা ৫০ জন ইসরাইলিকে মুক্তি দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পাবে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি। আর এ সময় গাজায় জ্বালানিসহ মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দেবে না ইসরাইল। প্রথম দিন ইসরাইলের ১৩ নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। চুক্তির বাইরে থাইল্যান্ডের ১০ জন ও ফিলিপাইনের একজনকেও মুক্তি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলের কারাগার থেকে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছে, যাদের মধ্যে ৩১ জন পশ্চিম তীরের এবং অবশিষ্টরা গাজার। বন্দি বিনিময় এবং নির্বাধে আরো অধিক পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য চারদিনের যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। মিসরের তথ্য পরিষেবা প্রধান জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে জোর আলোচনা চলছে। সমঝোতা হলে উভয় পক্ষে আরো অধিক সংখ্যক বন্দি মুক্তি পাবে। যুদ্ধবিরতিতে ফিলিস্তিনে আনন্দ-উল্লাসের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, রামাল্লায় ইসরাইলি কারাগারের সামনে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে সবুজ পতাকা নেড়ে, শ্লোগান ও হাততালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে। আতশবাজি ফোটানো ও সঙ্গীত বাজানো হয়েছে। আন্দাজ করা যায়, অন্যত্রও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গাজার অধিবাসীরা ৪৮ দিন পর নির্ভয়ে ঘুমাতে পেরেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। ওদিকে ইসরাইলেও স্বস্তির ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই প্রেক্ষাপটে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নয় কেন? যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের উদ্যোগ-প্রচেষ্টায় এই চারদিনের যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে। এই তিনদেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই প্রধান। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে বলেই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। সে চাইলে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিও হতে পারে। কাতার-মিসরের সমর্থন তো থাকবেই। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বাস্তবসম্মত সুযোগ আছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন; ‘আমি মনে করি, এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বাস্তবসম্মত সুযোগ আছে। গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ইসরাইল যতদিন যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, ততদিন হামাসও তা অনুসরণ করবে। অবশ্য আগে থেকেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির একটা প্রচেষ্টা বেশ জোরেশোরেই চলছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আগামী বুধবার। ওই বৈঠকে আরব-ইসলামিক লিয়াজোঁ কমিটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দেবে বলে জানিয়েছেন জর্ডানের পরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমান সাদাফি। তিনি বলেছেন, আমরা চাই, সাময়িক এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হোক। ইসরাইলের এই আগ্রাসনের সম্পূর্ণ অবসান ঘটুক।

অবরুদ্ধ গাজায় বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলি আগ্রাসন, অত্যাচার-নির্যাতন ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড এবং পবিত্র মসজিদ আল আকসার অবমাননা ও অন্যায় নিয়ন্ত্রণে অতিষ্ঠ হয়ে হামাস ৭ অক্টোবর ইসরাইলে এক আকস্মিক হামলা চালায় এবং কিছু সংখ্যক ইসরাইলি নাগরিককে ধরে নিয়ে আসে। ওইদিনই ইসরাইল গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। পরে এই সর্বগ্রাসী হামলায় যুক্ত হয় স্থলবাহিনী। ৪৮ দিন একনাগাড়ে ইসরাইল হামলা চালিয়ে গাজাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। হামলার অন্তত ১৫ হাজার ফিলিস্তিন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১০ হাজারের ওপর নারী ও শিশু। হাসপাতাল, আশ্রয় শিবির, পলায়নপর মানুষের মিছিল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা কোনো কিছুই ইসরাইলি হামলা থেকে রেহাই পায়নি। সাম্প্রতিককালের কোনো যুদ্ধে এরূপ পোড়ামাটি নীতির অনুসরণ, হত্যা ও ধ্বংস হতে দেখা যায়নি। এই প্রায় একতরফা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া ইসরাইলকে শুধু সমর্থনই করেনি, প্রয়োজনীয় সব রকম সহযোগিতা দিয়েছে। ইসরাইলের ভাষ্যমতে, হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২শ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। দু’ শতাধিক ব্যক্তিকে হামাস ধরে নিয়ে গেছে। ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে গত পৌনে এক শতাব্দিতে যুদ্ধ, ধ্বংসকাণ্ড ও প্রাণহানি কম হয়নি। কিন্তু সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলিরা দখলদার। তারা ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া প্রভৃতির যোগসাজসে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ফিলিস্তিনিরা নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়ে আছে। জাতিসংঘ থেকে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নির্দেশ করা হলেও আজো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পর্যবেক্ষক-বিশেষজ্ঞরা একমত, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ‘ফিলিস্তিন সমস্যার’ স্থায়ী সমাধান হতে পারে। ইসরাইল দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান মানতে চাইছে না। তার লক্ষ্য সমগ্র ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বৃহত্তর ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যেই সে কাজ করে যাচ্ছে।

গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলা ও গণহত্যা যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত কিংবা সমর্থনের বাইরে হয়েছে, এটা কেউ বিশ্বাস করে না। চারদিনের যুদ্ধবিরতি তার উদ্যোগ-সমর্থনেই হয়েছে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতিও তার ইচ্ছামতেই সম্ভবপর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইসরাইলের টিকে থাকা অসম্ভব। কাজেই, যুক্তরাষ্ট্র যা চাইবে তাই হবে। গাজায় ইসরাইলের হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। যুদ্ধবন্ধের দাবি উঠেছে সর্বত্র। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি, তার মিত্র রাষ্ট্রও বাদ যায়নি। সাময়িক যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে বিশ্বের শান্তিবাদী মানুষের দাবির প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমরা আশা করতে চাই, স্থায়ীভাবে যুদ্ধবন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকেই অগ্রভূমিকা নিতে হবে। পরিশেষে আমরা বলবো, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সময়ের দাবি। এটা কার্যকর করা জরুরি। এও মনে রাখতে হবে, স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়ই সমস্যার একমাত্র সমাধান। সুতরাং, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব হবে, যত দ্রুত সম্ভব এই সমাধান নিশ্চিত করা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো