ভোটার আনার দায়িত্ব রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের নয়
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বৃহৎ বিরোধীদলসহ অধিকাংশ রাজনৈতিকদল বর্জন করলেও নির্বাচনকে বিশ্বের কাছে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানতে ক্ষমতাসীনদলের নানামুখী তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দলের কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি পুলিশ, মাঠ পর্যায়ের জনপ্রশাসন কর্মকর্তা এমনকি নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও নির্বাচনে ভোটার আনতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে যেভাবে প্রয়োজন ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোথাও নগদ অর্থ দিয়ে ভোটার প্রলুব্ধ করা, কোথাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হুমকি-ধামকির কথা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণত ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে থাকে। কোনো প্রার্থী বা দলের পক্ষে কিংবা সম্মিলিতভাবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদলের ভোট বর্জনের প্রেক্ষাপটে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বিগত দু’টি নির্বাচনের চেয়েও এবার ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কায় সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো এখন আর গোপন থাকছে না। গতকাল কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনতে ডিএমপি কমিশনার সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সাথে সভা করেছেন। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করবেন এবং পুলিশ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত গহণ করা হয়।
ভোট প্রদান নাগরিকের অন্যতম অধিকার। ভোটদান থেকে বিরত থাকার অধিকারও তার রয়েছে। তবে জোর করে কিংবা বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে ভোট দিতে বাধ্য করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি কেমন হবে, তা ইতোমধ্যে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ থেকে সচেতন নাগরিক সমাজ আগাম বলে দিয়েছেন। এ নির্বাচনকে কেউ কেউ প্রহসন ও একতরফা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, প্রতিযোগিতা বিবেচনায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো নির্বাচনের পর্যায়ে পড়ে না। এটা কোনো নির্বাচনই না। নির্বাচনের যে সংজ্ঞা তার মধ্যেই পড়ে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বিরোধীদলের বর্জনের মধ্য দিয়ে কার্যত ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনটিও অগ্রহণযোগ্য ছিল। বর্হিবিশ্বে বিগত দুটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের তেমন কোনো সমস্যা পোহাতে হয়নি। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। পশ্চিমা বাণিজ্য অংশীদার ও উন্নয়ন সহযোগীরা অনেক আগে থেকেই একটি রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান এবং নানা ধরণের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছে। দেশি-বিদেশি সব আহ্বান, দাবি, চাপ উপেক্ষা করেই আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিরোধীদল তো বটেই, সাধারণ ভোটারদেরও তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এহেন বাস্তবতায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনতে সরকারদলীয়, ডামি প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বহির্ভূতভাবে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে একজন মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় বক্তব্য দেয়ার সময় বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে না গেলে সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত কার্ডধারীদের কার্ড বাতিল করা হবে। এর অর্থ হচ্ছে, হুমকি-ধমকি দিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য করার মতো এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বিএনপি ও অন্যান্য জনসমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ভোটারদের উপস্থিতি দেখানোর কাজে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছায় কিংবা আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে যুক্ত করা সমীচীন নয়। এটা তাদের কাজ নয়। এ কাজ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের। তারা ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারেন। তবে বাধ্য করতে পারেন না। এ ধরনের নির্বাচনী তৎপরতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ক্ষমতাসীনদল ও প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ভোটার আনার জন্য যে তৎপরতা চালাচ্ছে, তা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা এখনো একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে তাদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না করে, বিরোধীদলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে সম্ভব নয়, তা সবাই জানে। এ প্রেক্ষিতে, ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করার বিষয়টি নির্বাচনকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ কাজে ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো