ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কারাগারে মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

অক্টোবর থেকে গত তিন মাসে দেশের বিভিন্ন জেলে ৭ জন আসামীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এদের সবাই বিএনপি’র নেতাকর্মী। দলটির মতে, জেলে নেতাকর্মীর মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে দ্বিগুণের মতো। চলতি ডিসেম্বরেই ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ যেন কারাগারে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছে গাজীপুরের কাপাশিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি ৭২ বছর বয়সী মো. শফিউদ্দিন মাস্টার। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি বিভিন্ন অসুস্থতা জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব আসামীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অসুস্থতার কথা বলা হচ্ছে। তাদের পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় নির্যাতন করা হয়েছে এবং আদালত তাদের জেলে পাঠানোর পর উপযুক্ত চিকিৎসা হয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের মৃত্যুও বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-ের শামিল। তাদের মতে, পুলিশ হেফাজতে কিংবা কারাহেফাজতে থাকা অবস্থঅয় মত্যৃর সঙ্গে সঙ্গে মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মী হত্যা ও জোর করে উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা বেড়েছে। আবার বিচারবর্হিভূত হত্যাকা- ও গুম ফিরে এসেছে।

কারাগারে এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নতুন কোনো ঘটনা নয়। রিমান্ডের নামে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতন এবং কারাগারে মৃত্যু যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তার প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ রিমান্ডে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনো নির্যাতন করা যাবে না বলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা অমান্যর বিষয়ে আসামীর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হলেও কাউকে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়ে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না। উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশনা প্রদান করছে না। ফলে পুলিশ হেফাজতে আসামি নির্যাতন এবং নির্যাতনের পর আদলতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হলে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে আসামীর মৃত্যু হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা দলটির নেতাকর্মীদের ওপর কয়েকশ’ মামলা দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আসছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব মামলায় ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে তুলে নিয়ে খোঁজ না দেয়ার অভিযোগও দলটি করেছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জেলখানাগুলোতে এখন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। মোট ৬৮টি কারাগারে ৪২ হাজার ৪৫০ জন আসামী থাকার ব্যবস্থা থাকলেও এখন তা দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। এতে কারাগারগুলোতে আসামীর থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, কারাগারগুলোতে অমানবিক পরিস্থিতি চলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আসামীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি’র নেতাকর্মী। প্রতিদিনই দলটির নেতাকর্মী যেমন গ্রেফতার হচ্ছে, তেমনি পুরনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাচ্ছে। এ বছরের মাঝামাঝি থেকেই সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো সচল করে দ্রুত সাজা নিশ্চিত করতে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, একের পর এক মামলা অত্যন্ত দ্রুত এমনকি রাতের বেলা আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে নিষ্পত্তি ও সাজা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২শ’র বেশি নেতাকর্মীর সাজা দেয়া হয়েছে। এসব মামলার প্রায় সবগুলোরই পুলিশ বাদী এবং পুলিশই সাক্ষী। ফলে এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রেফতার ও সাজার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই জেলখানায় আসামীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোয়ালের গরুর মতো সেখানে গাঁদাগাদি করে আসামীদের থাকতে হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, কারাগারগুলো এখন অনেকটা ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যম্পে’ পরিণত হয়েছে, যেখানে সুস্থভাবে থাকা সম্ভব নয়। সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সেখানে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কারণ, অনেক জনস্বার্থ ও জনকল্যাণ বিষয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আসামীর নির্যাতন ও মৃত্যু নিয়েও আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোগ বা নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। আইনবিদদের অনেকে অভিযোগ করে বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মী হলেই তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আদালতের উচিৎ এ বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া। আদালতে প্রতিদিন যেভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জামিন বাতিল এবং দ্রুত গতিতে মামলা চালিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে, তা নজিরবিহীন। বলা হয়ে থাকে, ‘জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড।’ আইনজ্ঞদের মতে, গায়েবি ও অসত্য মামলায় যেভাবে তড়িঘড়ি করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিচার ও সাজা হচ্ছে এবং জেলে পাঠানো হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্টরা কখনোই দায় এড়াতে পারবে না। জনতার আদালতে একদিন না একদিন তাদের বিচার হবে। আল্লাহর আদালতেও বিচার হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো