ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিরোধীদলসমুহের আন্দোলন ও পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত দাবি ও চাপ অগ্রাহ্য করে আগামি ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একতরফা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিরোধীদলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় যে কোনো বিচারে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক কিংবা প্রতিদ্বন্দিতামূলক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ১২৬ নং অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুসারে, নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে সারাদেশে সব নির্বাচনী আসনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩ জানুযারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু করতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বা স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে প্রতিটি জেলা, উপজেলার নোডাল পয়েন্ট বা সুবিধাজনক স্থানে মোতায়েন থাকবে, রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে একেকজন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলো দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা যায়। সীমান্তবর্তী জেলা, দ্বীপজেলা ও উপকুলীয় অঞ্চলসহ প্রয়োজনানুসারে সেনা, নৌ, কোষ্টগার্ড, বিজিবি ও বিমান বাহিনীকে বিশেষ দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে সব বাহিনীর সমন্বয়ে সেল গঠন করা হয়েছে।

একটি একতরফা বা প্রতিদ্বন্দিতাহীন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে বাংলাদেশের বিগত প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ঐতিহ্য রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতা এবং বিরোধীদলের ভোট বর্জনের এক ভিন্নতর প্রেক্ষাপটে এবার দ্বাদশ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করতে চলেছে। দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার বাস্তবতায় এটি একটি অতি স্পর্শকাতর সময়। পুলিশ, বিজিবি, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনসহ দেশের সব সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যখন সরকারী দলের তল্পিবাহক হয়ে পড়েছে, তখন সশস্ত্র বাহিনীই একমাত্র ব্যতিক্রম। দেশের সাধারণ মানুষ সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেম, নিরপেক্ষতা ও পেশাদার ভূমিকার উপর সম্পূর্ণ আস্থাশীল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সশস্ত্র বাহিনী তার ভিত্তি লাভ করেছিল, সে বাহিনী নিঃসন্দেহে কোনো দলীয় সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার দ্বারা প্রভাবিত হবে না, জনগন এমনটাই বিশ্বাস করে। বিগত দু’টি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে অনেকটাই নিস্ক্রিয় দেখা গেছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনকল্যাণে প্রসংশনীয় ভূমিকা পালনের দীর্ঘ ঐতিহ্য ও সুনাম রয়েছে। নিজ দেশে সশস্ত্র বাহিনীর অনুরূপ ভূমিকাই প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। নির্বাচনে জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা ও দলমত নির্বিশেষে ঐক্য ও আস্থার প্রতীক। এ ক্ষেত্রে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হলে সেটা সমস্ত বাহিনীর মর্যাদা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বরখেলাফ হবে। দেশে দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে নতুন প্রজন্মের মার্কিন তরুনরা এখন সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে বলে জানা যায়। যে কোনো দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এটি অনেক বড় ক্ষতি।

দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এসব নির্বাচন সুষ্ঠু কিংবা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। দিনের ভোট রাতে হয়েছে, ভোটাররা প্রতারিত হয়েছে। অথচ এসব নির্বাচনেও বেশ কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনী মাঠে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে যেভাবে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে সীমার বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। সেটা উচিতও নয়। এবারের নির্বাচন একতরফা হলেও সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে তার আলামত দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে-পরে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমর্যাদা বলতে যা বুঝায়, সেটা অক্ষুণœ রাখতে হবে। আমরা আশা করব, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও অবহিত রয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী জাতির আস্থা ও গর্বের প্রতিক। এ বাহিনীর যে কোনো অমর্যাদা ও অনভিপ্রেত ভূমিকা দেশের মানুষকে ব্যথিত ও আশাহত করে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো