ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আগামী জাতীয় সংসদে কে হবে বিরোধীদল?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৯ এএম

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার গঠন করবে কে, এ প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করবে। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসবে কে, এ প্রশ্ন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দলও এ প্রশ্ন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে করেছে। এর পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি। বর্তমান জাতীয় সংসদের জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধীদল হিসেবে থাকলেও তার কথা উচ্চারিত হচ্ছে না। যদিও দলটি প্রায় পৌনে তিনশ’র বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, তারপরও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসন দেনদরবার করে চেয়ে নিয়েছে। তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী লেখা হয়েছে। ধরা যায়, এই ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে জিততে সহায়তা করবে আওয়ামী লীগ। তবে এসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই দলটির নেতা। তারপরও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা এই আসনগুলোর সব পাবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। ফলে জাতীয় পার্টির বিরোধী দলের আসনে বসার বিষয়টি অনিশ্চয়তার দোলাচালে রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে ২৬৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। পাশাপাশি ২১৯ আসনে দলটির নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগের মার্কা ঈগল। এরপর রয়েছে ট্রাক। আওয়ামী লীগ তার নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য। নিজেদের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্যও কাজটি করছে। দলটি শুরুতেই বলে আসছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়া। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল কি করল না, তাতে কিছু যায় আসে না।

দুই.
৭ জানুয়ারিতে যে নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে তা যে, নির্বাচন নামে আরেকটি প্রহসন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গণতন্ত্রে সক্রিয় ও শক্তিশালী বিরোধীদলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে দাবি, তা এ নির্বাচনে অনুপস্থিত। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিরোধীদল নেই। দলটি নিজেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিক করে নিয়েছে। তার অনুগ্রহপ্রাপ্ত তথাকথিত বিরোধীদল ও স্বদলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। এটি অনেকটা সিনেমার মতো। পরিচালক যাকে যে চরিত্রে অভিনয় করার উপযুক্ত মনে করেন, তাকে সে চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেন। এসব চরিত্র পর্দার হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগও একইভাবে কোন আসনে কে প্রার্থী হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। ফলে এ নির্বাচনটি যে একটি ‘অভিনয়ের নিবার্চনে’ পরিণত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। পাত্র-পাত্রী ঠিক, এখন শুধু শুটিং শুরু হওয়ার অপেক্ষা। ৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী একটি বিশাল ক্যানভাসের সিনেমা নির্মিত হতে যাচ্ছে। এ সিনেমার প্রযোজক সরকার, পরিচালক নির্বাচন কমিশন। সিনেমার প্রচারণায় পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট সাঁটানোসহ ব্যাপক আয়োজন চলছে। সিনেমার মতো গানও বাজানো হচ্ছে, নাচানাচি হচ্ছে, আবার অ্যাকশন দৃশ্যও রয়েছে। সিনেমা হলে দর্শক আনার জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালক যে ধরনের প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটার আনার জন্য একই ধরনের প্রচারণা চলছে। জোর করে হলেও ভোটারদের আনার জন্য নানাবিধ হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগে খাদ্যমন্ত্রীর কথা থেকেই তা বোঝা যায়। তিনি নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বলেছেন, যারা ভোট দিতে না আসবে, তাদের সরকারি সহায়তার জন্য যেসব কার্ড দেয়া হয়েছে, সেগুলো নির্বাচনের পর বাতিল করে দেয়া হবে। একজন দরিদ্র মানুষ যে কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য কেনেন, তার কার্ড যদি বাতিল করা হয়, তাহলে তার বিপদে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তার খাওয়া-দাওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে। মন্ত্রী মানুষের এই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এখানে ভোট দিতে না যাওয়ার ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই। জমিদার হুকুম করেছে, এ হুকুম অমান্য করার কোনো সুযোগ প্রজার নেই। ৭ জানুয়ারি যে একটি জমিদারির নির্বাচন হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা থেকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এ জমিদার সরকার আর তার পাইক-পেয়াদা দলের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মী। তারা জোর করে হলেও ভোট নামক খাজনা আদায় করে জামিদারের জমিদারি টিকিয়ে রাখার জন্য মাঠে নেমেছে। ৭ জানুয়ারি খাজনা দেয়ার দিন এবং এই ঐদিন বাধ্যতামূলকভাবে খাজনা দিতে হবে। বাংলাদেশ যে একটি গণতান্ত্রিক ধারার দেশ, এ ধারণা মানুষকে ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র এখন মানুষের কাছে স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটুকু স্বপ্ন রয়েছে, তা বিতাড়িত করার সব আয়োজনই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিগত দেড় দশকের শাসনামলের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। আমাদের দেশের নাম যেহেতু ইংরেজিতে ‘রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ’ বাংলায় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, তাই ক্ষমতাসীন দল ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ থেকে ‘গণ’ বাদ দিয়ে ‘প্রজা’কেই বেছে নিয়েছে। দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের ‘গণ’ মনে না করে ‘প্রজা’ হিসেবেই গণ্য করছে। স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য গণতন্ত্রের জন্য মানুষ যুদ্ধ করলেও, স্বাধীনতার পর ‘গণ’-এর সাথে ‘প্রজা’ যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তা নাহলে, বাংলাদেশের নামটি গণপ্রজাতন্ত্র না হয়ে ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ হতে পারত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ‘রিপাবলিক’ শব্দের বাংলা অর্থ কয়েকভাবে করা হয়েছে। যেমন প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র, জনতন্ত্র, সাধারণতন্ত্র, গণরাজ্য ইত্যাদি। আমরা ‘গণ’-এর সাথে ‘প্রজা’ যুক্ত করে ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ বেছে নিয়েছি। অর্থাৎ পুরোপুরি প্রজাতন্ত্রও নয়, গণতন্ত্রও নয়। এখানে দুটো অপশনই রাখা হয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলেই ‘গণ’ বা গণতন্ত্র বেছে নিতে পারেন। কেউ ‘প্রজাতন্ত্র’ বেছে নিতে পারেন। ক্ষমতাসীনদল এ দুটোর মধ্যে মুখে গণতন্ত্র উচ্চারণ করছে বটে, তবে কর্মে ও আচরণে রাজা হয়ে জনগণকে প্রজা মনে করছে। তার কথায়ই তা বোঝা যায়। তা নাহলে, কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়নের নীতি গ্রহণ করবে কেন? এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্ষমতাসীনদল প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ক্ষমতায় থাকতে এবং গণতন্ত্র বোঝাতে নামকাওয়াস্তে বা অভিনয়ের নির্বাচন বেছে নিয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দিলে তার ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

তিন.
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যে সংসদ গঠিত হবে, তাতে যে একটি অভিনীত বিরোধীদল থাকবে, সেটা এখন স্পষ্ট। অনেকেই এখন ধারণা করছেন, এই বিরোধীদল হবে ‘স্বতন্ত্র লীগ’। সরকার ইতোমধ্যে তার অনুগত জাতীয় পার্টির মাধ্যমে বিরোধীদলের ভূমিকায় অভিনয় করিয়েছে। এখন সে নিজেই বিরোধীদলের ভূমিকায় অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে নায়ক-নায়িকা ও সঙ্গীতশিল্পীরাও আছেন। খেলোয়াড়ও আছেন। সব ঠিক করে নির্বাচন নামক সিনেমাটির নির্মাণের আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সিনেমায় যেমন মিছামিছি মারামারি দেখায়, নির্বাচন নামক সিনেমায়ও ক্ষমতাসীন দলের মনোনিত প্রার্থী ও এবং অমনোনিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মারামারি লাগিয়ে একটা সিনেমাটিক অ্যাকশন দেখাতে চাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। এতে একজনের মৃত্যু ও অনেকে আহত হয়েছে। শুটিংয়ের সময়ও নায়ক-নায়িকারা দুর্ঘটনার শিকার হন। বলিউডের অমিতাভ বচ্চন ‘কুলি’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েছিলেন। হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা জ্যাকি চ্যান অ্যাকশন দৃশ্যে কোনো ধরনের ডামি ব্যবহার না করে নিজে অভিনয় করতে গিয়ে অসংখ্যবার আহত হয়েছেন। তার হাত-পাসহ শরীরের এমন কোনো হাড় নেই যা ভাঙ্গেনি। তার ডামি ব্যবহার না করার কারণ হচ্ছে, যাতে দর্শক তা ফেইক মনে না করেন এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়। একজন জাত অভিনেতা এমন ঝুঁকিই নিয়ে থাকেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে স্বতন্ত্র নামক ‘ডামি’ প্রার্থী দিয়েছে, তারাও ক্ষমতাসীন দলের মনোনিত প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে মারামারি করে নির্বাচনটিকে প্রতিযোগিতামূলক দেখানোর অভিনয় করছেন। যদি মারামারি নাই লাগে, তাহলে তো প্রতিযোগিতা হচ্ছে, এটা বোঝানো যাবে না। ভাই ভাই হয়ে থাকলে নির্বাচনী উত্তেজনা থাকবে না। উত্তেজনা না থাকলে নির্বাচন হচ্ছে, তা বোঝা যাবে না। কাজেই অভিনয় করে হলেও নির্বাচনী উত্তেজনা ও উত্তাপ ছড়াতে হবে। নিজ দলের নেতা হলেও সমালোচনা ও বিরোধিতা বোঝাতে হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক নেতা নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচন করেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচন রাতে সিল মেরেছি। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। গত ২৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নোঙ্গর মার্কার মুহাম্মদ শরীফ বাদশার প্রচারণায় গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজিজুল হক নৌকার প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিককে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি যেবার (২০১৪) প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছেন। আপনাকে ভোট দেয়া লাগে নাই। এরপর যেবার (২০১৮) আপনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন ঠিক রাতের ১২টা ১ মিনিটে আমাদের কাছে মেসেজ আসে, স্ব-স্ব কেন্দ্রে আপনারা ৬০ শতাংশ ভোট নিয়ে ফেলেন, যেন আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হয়। সেবার রাতে ১২টা ১ মিনিটে যে ভোট নেয়া হয়েছে, সে ভোটে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, নিজ দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে সমালোচনার পথ অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বেছে নিয়েছেন। যদিও বিরোধিতা করতে গিয়ে উত্তেজনাবশত সত্য কথা বলেছেন। বিগত দুটি নির্বাচন কেমন হয়েছিল, তার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। আবার অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে কোনো কোনো নেতা বলেছেন, আমাদেরকে এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার আনতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা দেখাতে ভোটার উপস্থিতি বাড়িয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে হবে। এ থেকে বোঝা যায়, আগামী নির্বাচনে যারা জিতবে তারা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো ক্ষমতাসীনদলেরই এমপি হবে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাউকে কাউকে জিতিয়ে এনে বিরোধীদলে বসানো হবে। জাতীয় পার্টি যেমন সরকারের অনুগত, পোষা ও গৃহপালিত হয়ে কিংবা ধার করা বিরোধীদলের ভূমিকায় অভিনয় করেছে, এবার আর গৃহপালিত বা ধার করা নয়, আওয়ামী লীগ নিজের প্রার্থীদেরই বিরোধীদলে বসাবে। অর্থাৎ সংসদে সর্বজনস্বীকৃত ও সক্রিয় কোনো বিরোধীদল থাকবে না।

চার.
বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে স্বীকৃত ও সক্রিয় বিরোধীদল ছিল না। আতাউর রহমান খান, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও জাসদের তিনজন সদস্য ছিলেন। দশম (২০১৪) ও একাদশ (২০১৮) সংসদ ছাড়া সব সংসদেই মোটামুটি শক্তিশালী বিরোধীদল ছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে গৃহপালিত বিরোধীদলের প্রচলন শুরু হয়। তার সময় জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব বিরোধীদলের আসনে বসেছিলেন। তিনি গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে পরিচিতি পান। তারপর এরশাদের সেই জাতীয় পার্টিই ২০১৪ সালের পর থেকে গৃহপালিত বা পোষা বিরোধীদলে পরিণত হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তারা এই পোষ্য অবস্থায় থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, এবার আওয়ামী লীগেরই শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ২১৯ আসনে রয়েছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১৩০ আসনে তারা আসনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তবে তাদের ভয়ও রয়েছে যে, ভোটের দিন প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে ভোটের ফল উল্টে দেয়া হয় কিনা। এ থেকে বোঝা যায়, সরকার এসব আসন থেকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী প্রার্থী জিতিয়ে আনতে পারে। জিতিয়ে এনে বিরোধীদলের আসনে বসাবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সুযোগ এবার নেই বললেই চলে। অবধারিতভাবেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসবে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদল এখন চাচ্ছে, সরকারে এবং বিরোধীদলে তারাই থাকবে। ফলে আগামী সংসদ যে, বাকশালের মতো প্রকৃত ও স্বক্রিয় বিরোধীদলহীন হবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো