এইডস থেকে সাবধান হতে হবে
০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম
এইচআইভি এইডস বর্তমান বিশ্বে এক ভয়াবহ আতঙ্ক। এইচআইভি একটি ভাইরাসের নাম। মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্টকারী ভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একেবারে শেষ হয়ে যায়। প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ দেখা যেতে না-ও পারে। দীর্ঘ দিন পর হয় এইডস। বছর দশেকও লাগতে পারে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা না থাকায় এইডস রোগীর যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদি যেকোনো অসুখ হতে পারে এবং অল্প দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যেতে পারে। এইডসের কোনো চিকিৎসা নেই। বিশ্বে প্রতিদিন সাত হাজারের মতো লোক এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত হয়। আর এইডসে দৈনিক মারা যায় হাজার ছয়েক রোগী। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় চার কোটি লোক এইচআইভি সংক্রমিত। কোনো দেশে কম, কোনো দেশে বেশি। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের লোকজনের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ব্যাপক, প্রতি পাঁচজনে প্রায় একজন।
আফ্রিকার অন্যান্য অংশেও এ রোগটি কম নয়। এ উপমহাদেশের ভারতে প্রায় ০.৩ শতাংশ লোক এইচআইভি আক্রান্ত। আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্যঝুঁকিবিষয়ক আলোচনায় করোনা বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় এইডসসহ অনেক জটিল রোগ তেমন গুরুত্ব পায়নি। অথচ, দেশে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক এইডস রোগীর মৃত্যু ও শনাক্ত হয়েছে। জানা যায়, ২০২৩ সালে নতুন করে এইডস শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৭৬ জনের। এ সময়ে এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ২৬৬ জনের। ১৯৮৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৮৪ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৮৬ জনের। এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয় ২০২২ সালে, সে সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৪৭ এবং মৃতের সংখ্যা ২৩২।
জানা যায়, কোনো মানুষের শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রোগলক্ষণ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় না। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি জানতে পারেন না যে তিনি এ প্রাণঘাতী ভাইরাস বহন করছেন। সরকার বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও দেশে এইডস আক্রান্তদের রোগ নির্ণয় বড় এক চ্যালেঞ্জ। কারণ, দেশের সব জেলায় এইচআইভি/এইডস পরীক্ষার সুযোগ নেই। তাই অনেকে সংক্রমিত হয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন না। এতে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। এইডসের চিকিৎসা অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার মতো নয়। কাজেই এ বিষয়ে সুফল পেতে হলে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিলে বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির ব্যবহৃত সিরিঞ্জ আবার ব্যবহারে নতুন কারও এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এ ছাড়া বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন প্রয়োজনে লোকজনের আন্তঃদেশীয় গমনাগমনের কারণে আমাদের দেশে এইচআইভি ও এইডসের ঝুঁকির মধ্যে আছে।
এইডসের কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত হলে নিশ্চিত মৃত্যু। সুতরাং প্রতিরোধই বিশেষ জরুরি। প্রতিরোধ করতে হলে রোগটি ছড়ানোর উপায় আগে জানতে হবে। আক্রান্ত রোগীর রক্তে, বীর্যে ও বুকের দুধে এ রোগের জীবাণু থাকে এবং এগুলো থেকে জীবাণু ছড়ায় সুস্থ মানুষের দেহে। ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমে, ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সুঁই বা সিরিঞ্জ ব্যবহারে করে শিরায় বা পেশিতে মাদক গ্রহণের মাধ্যমে। যৌনকর্মীর সাথে যৌনমিলন এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক ব্যবহার করে মাদকাসক্ত হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। ভাইরাস ছড়াতে পারে এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলার শরীর থেকে গর্ভফুল ও নাড়ির মাধ্যমে গর্ভবস্থায় শিশুর শরীরে। ছড়াতে পারে আক্রান্ত মহিলার সন্তান প্রসবকালে। এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত স্তন্যদানকারী মহিলার বুকের দুধের মাধ্যমেও শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে জীবাণু। সুতরাং অনিরাপদ যৌনমিলন পরিহার, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক বর্জন, পরীক্ষিত রক্তসঞ্চালন ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করে এইডস প্রতিরোধ করতে হবে। যৌনমিলন, সুচ-সিরিঞ্জের ব্যবহার এবং রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। সংক্রমিত মহিলাদের গর্ভধারণে বিরত থাকতে হবে। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে। এসব ব্যাপারে প্রয়োজন গণসচেতনতা।
প্রয়োজন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আন্দোলন। এইডসের কোনো চিকিৎসা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে মিতাচারী ও নৈতিক জীবনাচারের মাধ্যমে এইডস বিস্তার রোধ সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আজকাল ইন্টারনেটযুক্ত স্মার্টফোন ও অন্যান্য ডিভাইসের মাধ্যমে অনৈতিকতা ও যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় সয়লাব হয়ে যাচ্ছে, যা এইডস ও বিভিন্ন যৌনরোগ বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ঘাতকব্যাধি এইডস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ইমাম, খতিব, শিক্ষক, লেখক, জনপ্রতিনিধি, মোড়ল-মাতব্বর সবারই বিশেষ ভূমিকা পালন করা উচিত।
লেখক: চিকিৎসক
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো