ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

এখতিয়ার বহির্ভূত কাজে রাষ্ট্রীয় সংস্থার জড়ানো উচিত নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম

৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন যে ক্রেডিবল ও প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে হচ্ছে না, তা ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিদেশি বিভিন্ন নামকরা পত্রিকার প্রতিবেদনে ও সম্পাদকীয়তে এ নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। পাশাপাশি এ কথাও বলা হচ্ছে, প্রধান বিরোধীদল এবং অন্যান্য দলকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচন করা হচ্ছে, যা দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অচলাবস্থা ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নিপতিত করছে। কোনো কোনো পত্রিকা ও সংস্থা এ নির্বাচনকে ‘ওয়ান ম্যান শো’, ‘কর্তৃত্ববাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচন ‘ডামি’ নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ার কারণে এ পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক কিছু নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আওয়ামী লীগ ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ছাড় দেয়ার কারণে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে। এসব প্রার্থীর কাউকে কাউকে বিশেষ করে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক নেতাদের জিতিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনকে ব্যবহারের বিশেষ উদ্যোগেরও অভিযোগ উঠেছে।

যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীকে তার নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে বিজয়ী হতে সহায়তা করবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, যে নির্বাচনে সরকারের প্রবল প্রতিপক্ষ দলের অনুপস্থিতি থাকে এবং নিজ দলের প্রার্থী কিংবা অনুগত দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা থাকে, সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এবারের নির্বাচনে সেটাই দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো আসনে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত বিরোধীদলের প্রার্থী কিংবা সরকারের বিশেষ দৃষ্টির প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেসব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হচ্ছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও জাতীয় পার্টির যেসব প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার সংখ্যা এক ডজনের বেশি নয়। তাদের বিজয়ী করার জন্য ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ মহল ও নেতাকর্মীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের তৎপরতার অভিযোগ জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। বলা বাহুল্য, বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, প্রশাসন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রযন্ত্র হিসেবে এগুলো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কার্যক্রম নিরপেক্ষ হতে হয়। নির্বাচনে কোনো দল বা তার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা কিংবা জিতিয়ে আনার দায়িত্ব তাদের নয়। এ ধরনের কাজে জড়ালে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত তাদের নিজস্ব আইডলজি থাকলেও তা রাষ্ট্রীয় কাজে প্রতিফলিত না করাই বিধান ও পেশাদারিত্ব। দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটছে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না। এতে পুরো প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়।

রাষ্ট্রের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা শুধু রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। তার ওপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় কাজ, রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা তার পবিত্র দায়িত্ব ও আমানত স্বরূপ। কোনো দল বা বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। নির্বাচনে ‘বিশেষ প্রার্থীদের’ জিতিয়ে আনা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ নয় এবং তা করা উচিতও নয়। তাদেরকে কোনো দলের পক্ষে নয়, রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে থেকে ন্যায়-নিষ্ঠভাবে পালন করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তৃতির এ যুগে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। তা কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হয়েই যায়। মুহূর্তে দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছে যায়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকা-ও চলমান তথ্য প্রবাহের বাইরে নয়। তাদের এ ধরনের কর্মকা- ‘পাবলিক পারসেপশন’ হয়ে দাঁড়ায়, যা উপেক্ষা করা যায় না। আমরা আশা করি, দায়িত্বশীলরা এখতিয়ারের মধ্যে থেকে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো