রফতানি প্রণোদনা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট ও টানপোড়েনের এ সময়ে রফতানি বাণিজ্যে শীর্ষ অবদান রাখা গার্মেন্ট খাতের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ আইটেমসহ বেশ কিছু পণ্যের রফতানিতে নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ডলার সংকট ও অর্থনীতির এই সংকটময় সময়ে রফতানি প্রণোদনা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এ কথা অনস্বীকার্য যে, রফতানি শিল্পে ভর্তুকি ও প্রণোদনা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। অনির্দিষ্টকাল এটা চলতে পারে না। তবে বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় হঠাৎ করে মাঝপথে রফতানি প্রণোদনা বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে কোনো ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। রফতানি বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দেশীয় রফতানিকারকদের সক্ষমতা ধরে রাখা এবং ডলার আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতেই সরকার নগদ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছিল। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক বাস্তবতায় নগদ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। তবে রফতানি প্রণোদনায় অস্বচ্ছতা, শত শত কোটি টাকার ঘাপলা, ভুয়া রফতানি দেখিয়ে প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদি বিষয়গুলোও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
অর্থনীতি এখন বহুমাত্রিক দুষ্টচক্রে আবর্তিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে লক্ষকোটি টাকা খরচ করে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেও ডলার সংকটের কারণে গ্যাস ও জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় বিদ্যুতের লোডশেডিং সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাকেই সংকটাপন্ন করে তুলেছে। রফতানিমুখী পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে কৃষি উৎপাদন এবং জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে চলেছে। সংকট কাটাতে প্রথমেই রফতানি ও উৎপাদনশীল খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করে ডলার সংকটের এ সময়ে রফতানি খাতের নগদ সহায়তা বন্ধে সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ধরে নেয়া যায়। তৈরি পোশাক, চামড়া শিল্প ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি খাতের নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয়ার বাস্তবতায় এসব খাতের রফতানি আয় আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কাকে ত্বরান্বিত করা হলো। একটি জটিল অর্থনৈতিক সংকটের সময় রফতানিতে নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা ও মতবিনিময় করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
রফতানি বাণিজ্যে উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উৎসাহিত করতে এবং ডলারের প্রবাহ বাড়াতেই নগদ সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। শুরুতেই এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও আদতে সে দিকে তেমন কোনো নজর দেয়া হয়নি। গত বছরের মাঝামাঝিতে একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৩৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে রফতানি খাতের নগদ সহায়তার ২৪১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জালজালিয়াতির মাধ্যমে অস্তিত্বহীন এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিজের বলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ৩৭টি ব্যাংকের ৮৯টি শাখা থেকে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়। এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও বিষয়টির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়নি। ভুয়া রফতানি বাণিজ্য ও নগদ সহায়তার অপচয়-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের মতো গুরুতর ঘটনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের লক্ষ্যে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শর্ত মেনে ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা আগেই বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজনীয়তা মোটেই অস্বীকার করা যায় না। শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন, কমপ্লায়েন্স এবং সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক কারখানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজনে দরকষাকষিতে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যবসায়ে সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্নীতি ও কালক্ষেপণের প্রবণতা বন্ধ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগই সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে প্রত্যাশিত। প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যখন রফতানি খাতের প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে, সেখানে আমাদের প্রণোদনা কমিয়ে দেয়া হলে বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়তে পারে। চলমান বাস্তবতায় বাজার সম্প্রসারণ, রফতানি বহুমুখীকরণ এবং বিনিয়োগ ও রফতানিতে ব্যাংকিং সহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগই প্রত্যাশিত।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল