পরিবেশ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা সীমাহীন
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে নির্মল বায়ু ও বিশুদ্ধ পানির সংস্থান থাকে, যা বাসপোযোগিতার প্রধানতম শর্ত। দুঃখজনক হলেও দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতিনিয়ত জীবনধারণের এই দুই শর্ত বিনষ্ট হচ্ছে। বায়ু ও পানিদূষণ নিরন্তরভাবে চলছে। রাজধানীসহ সারাদেশে পরিবেশ দূষণের মহোৎসব চলছে। বলা বাহুল্য, পরিবেশ নিজে নিজে দূষিত হয় না। মানুষের অপকীর্তির কারণে পরিবেশ দূষিত ও ধ্বংস হয়। এর বিশুদ্ধকরণের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি দৈনিকে পরিবেশ দূষণের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে পানি ও বায়ুদূষণের নানাবিদ কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এর মারাত্মক কুফল সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকার বায়ুদূষণ প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ অবস্থানে আছে। এর কোনো উন্নতি নেই। চিকিৎসাবিদরা বলেছেন, বায়ুদূষণের শিকার হয়ে মানুষ ক্যানসার, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, টিউবারকুলোসিস, ব্রংকাইটিস, স্কিন ডিজিজ, ডাইরিয়া, চোখের রোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণের শিকার হয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অকাল মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণের যোগসূত্র রয়েছে। শুধু বায়ুদূষণই নয়, পানিদূষণের কারণেও মানুষ মারাত্মক রোগবালাইতে আক্রান্ত হচ্ছে। শব্দদূষণে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত ও শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে। মারাত্মক এসব দূষণে জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে ও হচ্ছে। পরিবেশবিদরাও নানা আন্দোলন করছেন। তাতে যে খুব একটা লাভ হচ্ছে না, তা দূষণ অব্যাহত ও অবনতি থেকে বোঝা যায়। অথচ রাজধানীসহ দেশের সবধরনের দূষণ রোধে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ওয়াসা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা কি কাজ ও দায়িত্ব পালন করছে, তা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। রাজধানীতে দূষণ এতটাই মারাত্মক যে, এখানে বসবাস অসম্ভব পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এখানে সবধরনের দূষণ অব্যাহত রয়েছে। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে যানবাহন, ইটভাটা, কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও উন্নয়ন কাজের ধুলোবালি অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ থাকলেও তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করায় বায়ুদূষণ এতটুকু কমছে না। যত্রতত্র বর্জ্যের স্তুপ রাজধানীকে রীতিমতো বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করেছে। দুই সিটি করপোরেশন সড়কের পাশের গৃহস্থালী ও অন্যবর্জ্য সরানোর কাজ করলেও বিভিন্ন খাল ও জলাশয় পরিস্কার এবং উদ্ধারে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এক সময় রাজধানীর ভেতর দিয়ে শিরা-উপশিরার মতো অর্ধশতাধিক খাল বয়ে যেত। এখন হাতেগোণা কিছু ছাড়া সিংহভাগেরই অস্তিত্ব নেই। অবৈধভাবে দখল হয়ে সেখানে সড়ক ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বোঝার উপায় নেই, একসময় সেখানে খাল ছিল। ঢাকা ওয়াসার অধীনে থাকা ২৬টি খাল প্রায় তিন বছর আগে ন্যস্ত হয় দুই সিটি করপোরেশনের হাতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর খাল উদ্ধারে বেশ জোর দিলেও এখন পর্যন্ত একটি খালেরও পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ কিংবা দখলমুক্ত করতে পারেনি। এসব খাল অবৈধ দখলে ও বর্জ্যরে ভাগাড় হিসেবেই রয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে লোকদেখানো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করলেও কিছুদিন পর আর কোনো খবর থাকে না। অন্যদিকে, দুই সিটি করপোরেশনের আওতা ঢাকার আশপাশে বাড়লেও সেসব এলাকায় উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া এখন পর্যন্ত লাগেনি। উত্তরখান-দক্ষিণখানের এলাকাবাসী সীমাহীন দুর্দশার মধ্যদিয়ে জীবনযাপন করছে। রাজধানীর জলাভূমি, খাল ও চারপাশের নদী উদ্ধারে উচ্চ আদালত একাধিকবার নির্দেশ দিলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। অবৈধ দখলও উচ্ছেদ হচ্ছে না। বলা বাহুল্য, পরিবেশ নির্মল রাখতে নদনদীর স্বাভাবিক গতি ও জলাশয়ের পানির স্বচ্ছতা থাকা আবশ্যক। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীসহ সারাদেশের নদনদী ও জালাশয় অবৈধ দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কলকারখানাসহ গৃহস্থালির সবধরনের বর্জ্য নদনদী ও জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে এগুলোর স্বাভাবিক বিশুদ্ধতা নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্য এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটি এমন এক বর্জ্য যা অপচনশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক পাঁচশ’ বছরেও পঁচে না। মাটিতে বা নদীর তলদেশে জমে থাকে। এতে মাটির উর্বরতা বিনষ্টের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নদীর পানিতে থাকা প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম কেমিক্যালের কণিকা মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিল রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়।
সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়নের কথা বললেও মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য যে উন্নত পরিবেশের প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। পরিবেশ নির্মল করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনসহ যেসব কর্তৃপক্ষ রয়েছে তারা পরিবেশ উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। মেয়রদের মুখে কেবল বড় বড় কথা শোনা যায়। এ তুলনায় কাজ করতে দেখা যায় না। শহরসহ গ্রামের প্রত্যেক সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে মেয়র, কাউন্সিলর এবং চেয়ারম্যান থাকলেও তাদের কাজের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। পরিবেশ উন্নয়নে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। অথচ তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। তাদের এই ব্যর্থতা নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। তারা জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণকে সুস্থ পরিবেশ দিতে পারছে না। পরিবেশ দূষণ রোধে জনগণকে সচেতন করার কাজটুকুও করছে না। অথচ যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে স্বল্প সময়েই পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা যায়। দেশে এমন একটি নগর নেই, যেখানে নির্মল পরিবেশ রয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। উন্নত দেশের কথা বাদ রেখেও বলা যায়, উন্নয়নশীল দেশের অনেক শহর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের সড়কে এতটুকু আবর্জনা, একটুকরো কাগজও দেখা যায় না। পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সেখানের কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও আইন যেমন কঠোর, তেমনি জনগণও সচেতন। আমাদের দেশে পরিবেশ উন্নয়নের সব প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ এবং আইন থাকলেও কোনোটিই যথাযথভাবে কাজ করছে না। আর কবে তাদের টনক নড়বে? পরিবেশ দূষণের দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আমরা মনে করি, পরিবেশ বিশুদ্ধ করার দায়িত্ব যাদের তাদেরকে বিচ্ছিন্ন কিছু কাজ দিয়ে বাহবা নেয়ার মানসিকতা পরিহার করে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পরিবেশ বিনষ্টের কারণ দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে সোচ্চার ও তৎপর হতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল