ইমরান খানের দ্রুত বিচার ও শাস্তি
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে সাত বছরের কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে দেশটির একটি আদালত। শরীয়াহ আইন লংঘন করে বিয়ে করার দায়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই রায় দেয়া হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এই আদালতে রায় ঘোষণার সময় তারা উভয়েই উপস্থিত ছিলেন। আদালতে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইমরান খান বলেন, তাকে ও তার স্ত্রীকে হেনস্থা করার জন্যই এমন মামলা করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৩১ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী কম মূল্যে কিনে নেয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে একটি বিশেষ আদালত ১৪ বছর করে কারাদ- দেন। এর একদিন আগে ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের মামলায় ইমরান খানের ১০ বছরের কারাদ- হয়। একই মামলায় ইমরানের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট তোশাখানা সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় ইমরান খানকে ৩ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ইমরান খান এখন রাওয়ালপিন্ডির ওই কারাগারে আছেন। আর তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ইসলামাবাদে কারাগার ঘোষিত তাদের বাসভবনে রাখা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের আগে এক সপ্তাহের মধ্যে ইমরান খানের বিরুদ্ধে তিন তিনটি মামলার রায় ও দ- ঘোষণার ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলে বিস্ময় ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আদালত তথা বিচার ব্যবস্থাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করার নজির হিসাবে এই দ্রুত বিচার ও সাজার ঘটনা উল্লেখিত হবে। সরীয়াহ আইন লংঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার পর ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল তেইরিক-ই- ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) এক বিবৃতিতে সংক্ষিপ্ত শুনানি, সওয়াল-জবাবের সুযোগ না দেয়া এবং বিচারিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ না করার অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগে বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বলা হয়, বিলম্বিত বিচার বিচার না পাওয়ার শামিল। তেমনি দ্রুত বিচারও ন্যায়বিচার না পাওয়ার কারণ হতে পারে। ইমরান খানের বিচার ও সাজার ক্ষেত্রে যে দ্রুততা প্রদর্শিত হয়েছে তাতে তিনি সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, এ ধারণা দৃঢ়মূল হয়েছে।
একথা সবারই জানা, ইমরান খান ও তার সরকারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সরিয়ে দিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পেছনে একটি পরাশক্তি রয়েছে বলে স্বয়ং ইমরান খান অভিযোগ করেছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ইমরান খান সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী, যিনি ক্ষমতাচ্যুৎ হয়েছেন সেনাবাহিনীর দ্বারাই। তবে কোনো সামরিক অভ্যুত্থানে নয়। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল দলের ২২ জন এমপিকে কিনে নিয়ে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট পাশ করে তাকে অপসারণ করা হয়। তার পরের ইতিহাস বা ঘটনা প্রবাহ ওয়াকিবহাল মহলের জানা। ইমরান খান এখন পাকিস্তানে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। ১৯৭১ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানে যেমন ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭০ সালের নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয় লাভকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না দেয়ার পরিণাম কী হয়েছে, কারো অজানা নেই। ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তার জনপ্রিয়তা এত বেড়ে যায় যে, নির্বাচনে তার বিপুল বিজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যাতে তা না হয়, যাতে কখনোই ইমরান খান ক্ষমতায় আসতে না পারেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অসিম মুনির তার সমস্ত বন্দোবস্তই পাকাপাকি করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। তার পছন্দমত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বসিয়েছেন, বংশবদ একটি নির্বাচন কমিশন বানিয়েছেন, বিচার বিভাগকে কবজা করেছেন। কাজী ফাইজ ইসার মতো একজন দুর্বল প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন। প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন একযোগে একাট্টা হয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। পিটিআই নির্বাচনে যাতে ভালো করতে না পারে, সে জন্য ইমরানকে গ্রেফতার ও দ- দেয়া ছাড়াও তার ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার জন্য বিচারের নামে প্রহসন করে একের পর এক তাকে দ-িত করা হচ্ছে। তার দলের শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, যাতে তারা দলে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে না পারেন। পিটিআই-এর অন্তত ১৬ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সব সময়ই গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করেছে। তার খেসারতও সে দেশ ও দেশের জনগণ দিয়েছে। এখনও দিচ্ছে। বিচার বিভাগ দেশ ও জনগণের দুঃসময়ে যদি শক্ত-সবলভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতো তাহলে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব এতটা প্রবল ও নিরংকুশ হয়ে উঠতে পারতো না। কাজী ফাইজ ইসা পাকিস্তানের বিচার বিভাগকে একটি তাবেদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতাকে সংকুচিত করা হয়েছে। তিনি বা সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের পক্ষে এর বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব হয়নি। অদৃশ্য নির্দেশে বিশেষ আদালত বসিয়ে ইমরানসহ অন্যদের বিচার-সাজা দেয়া হচ্ছে; সুপ্রিমকোর্ট নিশ্চুপ। পুলিশ ও প্রশাসন পিটিআই’র নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার নির্যাতন করছে; আইন-আদালত কিছুই করছে না। একদিকে ইমরানকে সাজা দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে নওয়াজ শরীফকে লন্ডন থেকে দেশে এনে দ- মওকুফ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন পিটিআই’র ব্যাপারে যাচ্ছেতাই করেছে, দলীয় প্রতীক পর্যন্ত বাতিল করছে; অথচ, আইন-আদালত টু শব্দটি করছে না। বিচার ব্যবস্থার এই নতজানুতা, এই হীনতা দুর্ভাগ্যজনক। সর্বাবস্থায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা আদালত বা বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য। আল্লাহপাক সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। তিনি বিচারের নামে জুলুম করাকে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বলো, আমার প্রতিপালক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ সুরা আরাফ: ২৯। ‘আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায়পরায়নতার সঙ্গে বিচার করবে।’ সূরা নিসা: ৫৮। ‘আর তুমি যদি বিচার করো, তবে ন্যায়বিচার করো। আল্লাহ ন্যায়পরায়তাকে ভালোবাসেন।’ সূরা মায়িদা: ৪৫। আল্লাহপাকের এসব কথা থেকে বিচারকের দায়িত্ব-কর্তব্য কী, সেটা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। বিচারের নামে অবিচার ও জুলুম করার শাস্তি অবধারিত। বিচারকদের একথা মনে রাখতে হবে। শুধু পাকিস্তানের নয়, বিশ্বের সব দেশের সব বিচারকের ক্ষেত্রেই এটা সমান প্রযোজ্য। পাকিস্তানে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হোক, আমরা এই কামনাই করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল