মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৭ এএম
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সমাজসেবক, সাবেক মন্ত্রী এবং দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর ১৮তম ইন্তেকাল বার্ষিকী আজ। ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭১ বছর বয়সে এই মনীষীর জীবনাবসান ঘটে। আজকের এইদিনে আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি। বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রপূর্ণ জীবনের অধিকারী দেশের এই কৃতী সন্তান আমৃত্যু দেশ ও মানুষের খেদমতে নিবেদিত ছিলেন। তাঁর জীবন পরিসরে তিনি এত কাজ করেছেন, জাতীয় ও জনকল্যাণে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন যে, তা বলে শেষ করা যাবে না। দেশ ও জনগণ এবং ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধের প্রচার-প্রসার এবং তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে তাঁর নিরলস শ্রম-সাধনা, ধ্যান-জ্ঞান, উদ্যোগ, বাস্তবায়ন যেমন মাইলফলক হয়ে রয়েছে, তেমনি অনুসরণীয় হয়ে রয়েছে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি দেশ, জাতি, শিক্ষা ও ইসলামের সেবায় অতিবাহিত করেছেন। যৌবন থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা মহৎ কর্মে, নানা পরিচয়ে তিনি নিজেকে সমুজ্জ্বল ও ভাস্বর করে গেছেন। তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মাদরাসার একজন শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীতে জাতির একজন অপরিহার্য শিক্ষকে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর অসংখ্য ছাত্র সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তিনি শুধু শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, শিক্ষকদের আদর্শ ও অবিসংবাদিত নেতা। তিনি ছিলেন মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এবং বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারী ও শীর্ষ নেতা। ছিলেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত দৈনিক ইনকিলাবের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। ঢাকার মহাখালীতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দেশের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ‘মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্স’। তার এসব কীর্তি অবিস্মরণীয় ও অমোচনীয়। তার কীর্তির চেয়েও তিনি ছিলেন মহান।
জাতীয় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর বিপুল অবদানের মধ্যে দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইনকিলাব শুধুমাত্র একটি দৈনিক সংবাদপত্র নয়, এটি একটি দর্শন। ইনকিলাবকে অবলম্বন করে একটি দর্শনের প্রকাশ, প্রচার, প্রতিষ্ঠা ছিল মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর স্বপ্ন। স্বাধীনতার পর শাসক শ্রেণি ও বামপন্থী বলে কথিত নাস্তিকরা এক জোট হয়ে দেশের ইসলামী ভাবধারা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার মিশনে শামিল হয়েছিল, যা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতির অস্তিত্বের জন্য ছিল হুমকিস্বরূপ। মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইনকিলাব প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা করে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি লক্ষ্য স্থির করেন যে, ইনকিলাবকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, জাতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইসলামী শিক্ষা ও মুসলিম বিশ্বের পক্ষে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় নিয়োজিত করবেন। তাঁর এই চিন্তা ও অভিপ্রায় কতটা প্রয়োজনীয় ও সমায়নুগ ছিল, তা ইনকিলাব প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই এর অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তাই প্রমাণ করে। ইনকিলাব স্বীয় নীতি-আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র চ্যুত হয়নি এত বছরেও। এখনো ইনকিলাব দেশ ও জনগণের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, ইসলামের পক্ষে, মাদরাসা শিক্ষার পক্ষে এবং নাস্তিক্যবাদ ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় ও সোচ্চার। পর্যবেক্ষক-গবেষকরা একমত, ব্রিটিশ আমলে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ দৈনিক আজাদ প্রকাশ করে যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন স্বাধীনতার পর মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশ করে সেই একই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সুযোগ্য পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীন পিতার আদর্শ ও পদাংক অনুসরণ করে ইনকিলাবের দর্শন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে তিনিও পিতার মতোই মিশনারী, দৃঢ় ও নিরাপোস।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর মতো বিদ্বান, যোগ্য, বিজ্ঞ আলেম, দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও কর্মীপুরুষ বাংলাদেশে খুব বেশি জন্মাননি। তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষেই একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তার মতো বহুদর্শী ও দেশ-জাতিপ্রেমী মানুষ এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দেশ সব দিক দিয়েই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। সর্বত্র বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপসংস্কৃতি বিস্তার লাভ করেছে। পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শাসন-বারণ উপেক্ষিত হচ্ছে। এক অস্থির ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কবলে পড়েছে দেশ। মানুষ হতাশ-দিশাহারা। মুসলিম বিশ্ব অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত। বৈরী শক্তিগুলোর দ্বারা মুসলমানরা নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার। ফিলিস্তিন, ভারত, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে মুসলমানরা নির্বিচারে নিহত ও নির্যাতিত হচ্ছে। এ হেন দৈশিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে, আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর মতো বিচক্ষণ, প্রজ্ঞাবান ও কর্মনিষ্ঠ মানুষের খুবই প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তাঁর মতো এমন উদ্যোগী ও উদ্যমী মানুষ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। আজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর কথা আমাদের বিশেষভাবে মনে পড়ছে। মনে পড়ছে, দেশে ইসলামী শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষা সংকোচন, কারিকুলাম নিয়ে বিতর্কের কারণে। আজ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদ, ধর্মহীনতা এবং মূল্যবোধ ও নৈতিকতাবিমুখ জাতি গঠনের প্রয়াস অনেক বেশি জোরদার হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায়, তিনি জীবিত থাকলে মোটেই নীরব থাকতেন না। তিনি ছিলেন দেশের আলেম সমাজের মধ্যে সর্বজনশ্রদ্ধেয়। অন্যদিকে বহির্বিশ্বে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রনায়কদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ সময় তিনি জীবিত থাকলে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারতেন। তিনি নেই এবং তার অভাব পূরণ হবার নয়। তবে তার আদর্শ ও কর্ম চিরজাগরুক ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজকের এ দিনে আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল