প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সাথে জান্তা বাহিনীর চরম যুদ্ধ চলছে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনাও তাদের আভ্যন্তরীণ সংঘাতেরই ফল। ক্রমশ জটিল ও রক্তক্ষয়ী আকার ধারণ করার পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের অনুগত বাহিনী এখন বিদ্রোহীগ্রুপগুলোর হাতে চরমভাবে মার খেয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে সীমান্তের ওপারে যাই ঘটুক, এতদিন বাংলাদেশে তার পরোক্ষ প্রভাব পড়লেও এবার বাংলাদেশের সীমান্ত জনপদ সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে বেশকিছু গুলি ও মর্টার শেল বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়েছে। এতে কয়েকজন বাংলাদেশী হতাহত হয়েছে। গত সোমবার তমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশের জলপাইতলি এলাকায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে অন্তত ২ জন নিহত হয়। বিদ্রোহীদের আক্রমণের শিকার হয়ে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সদস্য ও তার সীমান্তরক্ষী বিজিপি’র সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সশস্ত্র বিজিপি সদস্য সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ২৩০ জন ছাড়িয়েছে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিরোধ ও আভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিবদমান গ্রুপগুলো প্রায়শ বাংলাদেশের স্থল ও আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে আসছিল। এবার তাদের সংঘাত সরাসরি বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সময় মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভাগ্য দেশটির সামরিক জান্তার হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। তবে দেশটির সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যকার গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক প্রত্যাশা এবং জাতিগত বিরোধ মিমাংসার প্রশ্নে জান্তা সরকার কখনোই সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে পারেনি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অং সান সুচির নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও সামরিক জান্তার হস্তক্ষেপের কারণে তা ভেস্তে যায়। বলা বাহুল্য, মায়ানমারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনোই স্থায়ী ভিত্তি লাভ করেনি। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যেমন তারা ব্যর্থ হয়েছে, একইভাবে জান্তা সরকারের একপেশে নীতির কারণে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির রাজনৈতিক ও জাতিগত বিরোধ আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মোট ৪১২টি আসনের মধ্যে ৩৪৬টিতে নির্বাচিত হয় অং সান সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। নির্বাচনে সেনা-সমর্থিত ইউএসডিপি মাত্র ৩৩টি আসন পেয়েছিল। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন হওয়ার কথা থাকলেও সেদিনই এক সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে। গণতান্ত্রিক বিশ্বও জান্তা সরকারকে মেনে নেয়নি। এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তবে জান্তা সরকারের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জাতিগত অংশীদারদের বিরোধ ক্রমেই সংঘাতে পরিনত হয়েছে। এ সরকার এখন চরম সামরিক ও রাজনৈতিক পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা সরকার। রাখাইনে এখন দখলদারিত্বের লড়াই চলছে। এর জেরে বাংলাদেশের সীমান্ত অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
মিয়ানমার সীমান্তের সংঘাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলাগুলি, মর্টার শেলে নাগরিক হত্যা এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর শত শত সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি এক জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়েছে। দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তির একটি খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান নিরপেক্ষ এবং কোনো ধরনের উসকানিতে পা দিচ্ছে না। সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সীমান্তে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান ও ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের বিচক্ষণতা প্রকাশিত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা যথোচিত এবং সময়োপযোগী। তবে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী এবং সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থেকে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক-বেসামরিক অনুপ্রবেশের ঘটনা অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। কারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য, ভূমিকা ও পরিচয় বিস্তারিত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে খোঁজ নিতে হবে। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্বার্থ ও পরাশক্তিগুলোর যে ভূমিকাই থাক না কেন, ধৈর্য ও সতর্ক অবস্থানে থেকে আমাদের নিরাপত্তা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকেই নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত যাতে বাংলাদেশকে আক্রান্ত করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সমঝোতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল