সীমান্তে বিএসএফ’র সীমাহীন বাড়াবাড়ি

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

গত ডিসেম্বরে রাজশাহী. সিলেট ও পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএসএফ নতুন উদ্যমে শুধু বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, জানুয়ারীর তৃতীয় সপ্তাহে যশোর সীমান্তে একজন বিজিবি সদস্যকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। দুই দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা যখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অনন্য উচ্চতার কথা বলছেন, তখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডে লাগাম টানার ভারতীয় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। সীমান্তে লিথ্যাল ওয়েপনস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হতাহতের ঘটনা শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকারসহ দুই সীমান্ত রক্ষি বাহিনীর রাখীবন্ধন, মিষ্টি খাইয়ে সৌর্হাদ্যের বাতাবরণ সৃষ্টির নাটকীয়তাও দেখা গেছে। তবে শান্ত সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিবর্ষণ এবং হতাহতের সংখ্যা কমেনি। জানুয়ারিতে বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিক এবং বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনায় জনমনে এক ধরণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সেই প্রতিক্রিয়ার রেশ না কাটতেই এবার ফেনী সীমান্ত এলাকা থেকে ২৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। গত বুধবার ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিএসএফ পূর্ব ছাগলনাইয়ার ৯৯ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছ থেকে এসব বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে ধরে নিয়ে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। প্রথাগতভাবে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আনুষ্ঠানিক প্রতাকা বৈঠকের আগেই আটক হওয়া ২৩ বাংলাদেশিতে জেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র বেপরোয়া-ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও প্রাণঘাতী আক্রমণের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশিরা। গত দেড় দশকে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী হত্যা ও সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও নাশকতার ঘটনা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ বেসামাল হয়ে পড়ার জন্য দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকে, নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের নতজানু নীতিকে দায়ী করা হচ্ছে। দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও যেন সরকারের নতজানু ভারততোষণ নীতিকেই অনুসরণ করছে। তারা একদিকে দেশের সীমান্তে অবৈধ পণ্য, মাদক-চোরাচালান রোধ করতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। যশোর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বিজিবি সদস্য হত্যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হল, বিজিবি এখন আত্মরক্ষায়ও ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ দেশের মানুষের রাজস্বে লালিত সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের গর্বে লালিত এই বাহিনী এখন দেশের অভ্যন্তরে পুলিশের পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের লাঠিয়াল হয়ে সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালাতেও কুণ্ঠিত হয়না। গত কিছুদিন ধরে নাইক্ষংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের যুদ্ধরত বাহিনীগুলোর ছোড়া মর্টার শেলে বাংলাদেশিরা হতাহত হচ্ছে, মিয়ানমারের শত শত সীমান্তরক্ষী এবং বেসামরিক নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকে পড়লেও বিজিবি এদের প্রতিরোধ বা নিবৃত্ত করতে পারেনি।

আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারত সফরে গিয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা-দিল্লী একসাথে কাজ করার কথা বললেও ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিবিধানের কোনো বাক্য উচ্চারণ করেছেন বলে শোনা যায়নি। দেশের সরকার এ বিষয়ে চোখ-মুখ বন্ধ রখে একপেশে বন্ধুত্বের জয়গান করলেও দেশের সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা থেকে ২৩ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানের অভিযোগে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনাকে কোনো বিচ্ছিন্ন বা তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ছাগলনাইয়া সীমান্ত থেকে অপহৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশিরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিএসএফ, বিজিপি এবং আরকান আর্মির সীমান্ত লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিজিবি’র নিস্ক্রিয়তা ও শৈথিল্য এখন দৃশ্যমান। কৌশলগত কারণে বিশেষ সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ধৈর্য ধারণ কিংবা কৌশলগত ভূমিকা থাকতেই পারে। তবে প্রতিবেশিসুলভ সম্পর্ক ও তথাকথিত ‘বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতা’র কথা বললেও সীমান্তে বিএসএফ’র লাগাতার বাংলাদেশি হত্যা, ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে তারা আধিপত্যবাদী আগ্রাসী নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। দেশের মানুষ এ ধরনের আচরণকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছে না। সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়ে জনগণের মনোভাব বুঝতে হবে। সীমান্ত ও নাগরিক নিরাপত্তায় সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চার ম্যাচ হাতে রেখেই লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল

চার ম্যাচ হাতে রেখেই লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল

ঘুরে দাঁড়িয়ে বার্সাকে হারিয়ে জিরোনার ইতিহাস

ঘুরে দাঁড়িয়ে বার্সাকে হারিয়ে জিরোনার ইতিহাস

হল্যান্ডে একাই দিলেন চার গোল,সিটির দাপুটে জয়

হল্যান্ডে একাই দিলেন চার গোল,সিটির দাপুটে জয়

নারী বিশ্বকাপের সূচির জন্য শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা

নারী বিশ্বকাপের সূচির জন্য শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা

সরকার হটাতে গণবিপ্লব ঘটাতে হবে : আমিনুল হক

সরকার হটাতে গণবিপ্লব ঘটাতে হবে : আমিনুল হক

যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান

যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান

শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ

শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ

ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

‘পানি তাল খাইয়া শরীরডা ঠান্ডা কইরা যায় সবাই’

‘পানি তাল খাইয়া শরীরডা ঠান্ডা কইরা যায় সবাই’

বাজিতপুরে বিশাল মাহফিল আজ

বাজিতপুরে বিশাল মাহফিল আজ

শ্রীনগরে ৭টি ঘর পুড়ে ছাই

শ্রীনগরে ৭টি ঘর পুড়ে ছাই

অসহনীয় গরম ও লোডশেডিংয়ে চরম জনভোগান্তি

অসহনীয় গরম ও লোডশেডিংয়ে চরম জনভোগান্তি

দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর নদীর বাঁধ অপসারণ

দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর নদীর বাঁধ অপসারণ

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ২৫

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ২৫

বড়াইগ্রামে নিজ ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

বড়াইগ্রামে নিজ ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

কাপ্তাই হ্রদ শুধু দেশের নয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্পদ

কাপ্তাই হ্রদ শুধু দেশের নয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্পদ

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে কমিউটার রেলের যাত্রা শুরু

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে কমিউটার রেলের যাত্রা শুরু

ফ্রি ফায়ারে পরিচয়ে বিয়ে ৬ মাস পর লাশ

ফ্রি ফায়ারে পরিচয়ে বিয়ে ৬ মাস পর লাশ

দৌলতপুরে আগুনে পুড়লো ব্যবসায়ীর ৫ ঘর ও নগদ ১২ লাখ টাকা

দৌলতপুরে আগুনে পুড়লো ব্যবসায়ীর ৫ ঘর ও নগদ ১২ লাখ টাকা

মাদারীপুরে জনজীবনে দুর্ভোগ

মাদারীপুরে জনজীবনে দুর্ভোগ