কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
অপরাধ জগতে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে কিশোর গ্যাং সমাজে নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। হেনকোনো অপরাধ নেই যাতে তারা জড়াচ্ছে না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, জমি দখলে ভাড়া খাটা, নারীদের উত্যক্ত করা, হামলা, খুন, প্রভাব বিস্তার নিয়ে পারস্পরিক মারামারি থেকে শুরু করে ভয়াবহ সব অপরাধে কিশোর গ্যাং জড়িয়ে পড়েছে। এরা নামে কিশোর হলেও অধিকাংশের বয়স ১৮’র বেশি। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এদের গডফাদার হয়ে আছে। বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নানা অপরাধকর্মে ব্যবহারের পাশাপাশি রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের দমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। গ্যাংয়ের কোনো কোনো সদ্যস্যকে গ্রেফতার করলেও জেল থেকে বেরিয়ে তারা আরও বড় অপরাধী হয়ে উঠছে। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের সংশোধনাগারে পাঠিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
রাজধানীসহ সারাদেশে কিশোর গ্যাং ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে কিশোর গ্যাং রয়েছে অন্তত ১৭৩টি। এর মধ্যে রাজধানিতে ৬৬টি, চট্টগ্রামে ৫৭টি এবং অন্যান্য জেলায় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, ডেমরা, সূত্রাপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় কমবেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। রাজধানীতে গত বছর কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে ২৫ জন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জে নারীদের উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। ৩ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় খুন হয়েছে এক ব্যক্তি। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এতটাই বেপরোয়া যে, কোনো অপরাধ করতে দ্বিধা করে না। কোনো ধরনের শাসন-বারনের ধার ধারে না। গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়া তাদের কাছে তুচ্ছ ঘটনা। জামিনে বের হয়ে তারা আরও বড় অপরাধী হয়ে উঠে। কার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা, এ নিয়ে তাদের মধ্যে গর্ব থাকে। এক সময় ওয়ার্ড কমিশনার বা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ থাকলেও এখন তাদের অনেকে কিশোর গ্যাং ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকা- করে থাকে। পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ২১ কাউন্সিলর কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের সাথে যুক্ত। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। জনপ্রতিনিধিরাই যদি অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, তাহলে অপরাধ ও অপরাধীদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আগে সমাজে উঠতি বয়সী কিশোরদের শাসন-বারনের কাজটি পরিবার ও সমাজের অভিভাবকরা করতেন। তারা সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতেন। তারা কিশোরদের বখাটেপনা প্রশ্রয় দিতেন না। এখন এই সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে গেছে। অভিভাবকদের জায়গায় এলাকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গড়ে উঠা কিশোর গ্যাং প্রশ্রয় দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যও তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। এতে কিশোর গ্যাং কালচার দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন করার কথা, তারাই যদি পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠে, তাহলে অপরাধ কখনোই কমবে না। কিশোর গ্যাংও নির্মূল করা যাবে না। কিশোর গ্যাংয়ের বেশির ভাগ নি¤œবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেও অনেকে জড়াচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সমাজে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যাওয়ায় কিশোর গ্যাং গ্যাঙ্গরিনে পরিণত হয়েছে। সমাজে পচন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রতিরোধ করতে না পারলে এ থেকে কেউই নিস্তার পাবে না।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, কিশোর গ্যাং যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তা প্রতিরোধ করতে না পারলে পরিবার ও সমাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। কেউই নিরাপদ থাকতে পারবে না। পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় এখন নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সমাজের অভিভাবক শ্রেণীর মধ্যে গা বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা প্রবল হয়ে উঠেছে। জনপ্রতিনিধিরা অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ায় সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। এর সাথে দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশা জড়িয়ে আছে। আয় কমে যাওয়ায় দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা সন্তানদের খাদ্যসংস্থান থেকে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। অর্থনৈতিক সংকটে পরিবারগুলোর মধ্যে অস্থিরতা ও অশান্তি বিরাজ করছে। এতে সন্তানদের অনেকে বিপথে চলে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে, একশ্রেণীর অপরাধপ্রবণ জনপ্রতিনিধি ও চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। তারা কিশোর গ্যাংকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও ব্যাপক গলদ রয়েছে। পাঠ্যপুস্তকগুলোতে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠনে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এতে উঠতি বয়সি শিক্ষার্থীদের মন ও মননে ভাল-মন্দ বিচারে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক শাসন-বারন কমে যাওয়ায় তারা বিপথে চলে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং দুর্বীনিত হয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এসবের ঘাটতি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। জেলে বা সংশোধনাগারে নিয়ে এর প্রতিকার সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমাজ ও পরিবারের অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতা এবং উদ্যোগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের শুধু গ্রেফতার করে জেলে পাঠালেই হবে না, এই গ্যাং কেন, কি কারণে ও কিভাবে গড়ে উঠেছে, তার মূলে যেতে হবে। এ অপরাধ নির্মূলে প্রথাগত প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। জেল থেকে বের হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা যাতে পুনরায় জড়িত না হয়, তার জন্য জেলে আলাদাভাবে তাদেরকে নিয়ে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক মূল্যবোধ বিষয় যুক্ত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সময় পেছাল
এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা আজ
এবার চাঁদে যাচ্ছে পাকিস্তানও, যাত্রা শুরু শুক্রবার
গ্রেপ্তার ও সহিংসতার মাঝেই চলছে যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ
এবার রেলমন্ত্রীর ছেলেকে সতর্ক করে চিঠি দিলো ইসি
চাঁদপুরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের আমদানি বেড়েছে : দাম নাগালের বাইরে
অভিজ্ঞদের নিয়েই নেপালের বিশ্বকাপ দল
মহাকাশে ধুন্ধুমার, দুই ছায়াপথের লাখ লাখ সূর্যের সংঘর্ষে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা
ইউরোয় কোর্তোয়াকে দেখছেন না বেলজিয়ান কোচ
নিলামে উঠছে বিখ্যাত ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’
নিলামে উঠছে বিখ্যাত ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’
গাজায় জর্ডানের ত্রাণবহরে হামলা ইসরাইলিদের
চুয়াডাঙ্গায় রাতে আগুনে ৭০ বিঘা পানের বরজ পুড়ে ছাই
যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে রোবটের ব্যবহার বাড়ছে
এশিয়ার ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই বুয়েট-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অর্থ পাচার : চ্যাংপেং ঝাও এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বন্দী
দলের পারফরম্যান্সে খুশি নন আনচেলত্তি
তিউনিসিয়া থেকে ফিরছে আট বাংলাদেশির লাশ
বেগম জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধ করতে সক্ষম আমিই একমাত্র ব্যক্তি : ডোনাল্ড ট্রাম্প