মেট্রোরেলে দুর্ঘট : জাপানি প্রতিষ্ঠানকে কথা বলতে হবে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
গত শনিবার মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল প্রায় ৪০ মিনিট। ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় দরজা খোলা ও বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা কাজ না করাতে এ বিপত্তি ঘটে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত বুধবার মিরপুরের কাজীপাড়ায় মেট্রোরেলের তারে ঘুড়ি আটকে পড়ায় ট্রেন চলাচল ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে। ওইদিনও যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে তারা যথাসময়ে তাদের গন্তবে যেতে পারেনি। অনেকে ট্রেন থেকে নেমে অন্যান্য পরিবহনে যেতে বাধ্য হয়। এভাবে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি, বিদ্যুতের নি¤œ প্রবাহ কিংবা মেট্রোরেলের তারে ঘুড়ি, ফানুস ইত্যাদি আটকে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গত চারমাসে কতবার যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। গত ২৩ দিনে অন্তত চারবার যাত্রীদের এরকম দুর্ঘটে পড়তে হয়েছে। ট্রেন চলাচল হঠাৎ বন্ধ হওয়ার প্রতিটি ঘটনায় যাত্রীরা প্রথমে ভীত-সন্ত্রস্ত, পরে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। মেট্রোরেলের প্রতি তাদের আস্থা, নির্ভরতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মেট্রোরেল একটা স্বপ্ন। এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে মানুষ সন্তষ্টই শুধু হয়নি, যারপরনেই আনন্দিত ও উল্লসিত হয়েছে। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে তাদের আবেগ-উচ্ছ্বাস এতটুকু কমেনি। রাজধানীর যানজটে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নাকাল। ১০ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায়ও যাওয়া যায় না। এমতাবস্থায়, মেট্রোরেল অশেষ স্বস্তি ও দ্রুত যাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। ট্রেন চলাচলে প্রায়শ বিঘœ ঘটা সত্ত্বেও মেট্রোরেলের যাত্রী বাড়ছে। যাত্রী বাড়ার কারণে ট্রেন চলাচলও বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহ নেই, মিরপুর-মতিঝিলের যাত্রীরা মেট্রোরেলের কারণে যানজটের শিকার হওয়া থেকে অনেকটাই রেহাই পেয়েছে। ট্রেন চলাচল বিঘœ মুক্ত হলে তাদের ও মেট্রোর অন্য যাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজ ও মসৃণ হবে।
মেট্রোরেল আমাদের দেশে নতুন। কিন্তু অনেক দেশেই অনেককাল ধরে তা একটি নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন হিসাবে পরিগণিত। বাংলাদেশ মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের আংশিক বাস্তবায়ন ও ট্রেন চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুটটি চালু হয়েছে। এ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপরেশন কোম্পানি (জাইকা)। এর কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে জাপান। বলা যায়, জাপানই মেট্রোরেল করে দিচ্ছে। জাইকা প্রতিষ্ঠান হিসাবে জগৎ-বিখ্যাত। আর কারিগরি উৎকর্ষের দিক থেকে জাপানের শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য। মেট্রোরেল তৈরিতে জাপানের অভিজ্ঞতাও কম নয়। সেই জাপানের আর্থিক ও কারগরি সহায়তায় তৈরি মেট্রোরেলে যখন তখন কারিগরি ত্রুটি, প্রযুক্তিবিচ্যুতি কিংবা সিস্টেমের সমস্যা দেখা দেবে কেন? পর্যবেক্ষকদের মনে এ প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, জাপান মেট্রোরেলের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি, যা কিছুই দিয়েছে, তা কি যথাযথ মানসম্পন্ন নয়? এর বাস্তবায়নে যে ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা হয়েছে তা কি ত্রুটিযুক্ত? যারা এর বাস্তবায়ন করছেন তারা কি যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ নন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুব প্রাসঙ্গিক। জাপানের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে হবে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, মেট্রোরেল জাপান করলেও এর পরিচালনা ও টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত আছে কিছু ভারতীয়। তাদের আন্তরিকতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তেমন কিছু থাকলে সেটাও পরিষ্কার করতে হবে। প্রকল্পটি যেহেতু ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের, সুতরাং মেট্রোরেল পরিচালনায় ত্রুটি-বিচ্যুতি, বিভ্রাট-বিপত্তির দায় কোম্পানি এড়িয়ে যেতে পারে না। কেন বার বার একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ট্রেন বন্ধ থাকছে, যাত্রীসেবা ব্যহত হচ্ছে, তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখে জনগণকে অবহিত করা কোম্পানির দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আমরা আশা করি, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেটা করবে। একই সঙ্গে সব ধরনের অসম্পূর্ণতা ও সমস্যা দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
জাপান মেট্রোরেলের পুরো কাজ পর্যায়ক্রমে করবে। মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়েও হবে। পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন: মাটির ওপর দিয়ে তৈরি মেট্রোরেলে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে, তা যদি মাটির নিচ দিয়ে তৈরি মেট্রোরেলেও দেখা দেয়, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? কারিগরি ত্রুটি বা বিদ্যুতের নি¤œ প্রবাহের কারণে ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীদের অবস্থা কী হবে? ভীতিকর ও শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। কাজই এখন থেকে আরো সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো গলদ যাতে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যন্ত্রপাতি, ইলেক্ট্রিক সামগ্রী উপযোগী ও মানসম্পন্ন হতে হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মেট্রোরেল ছাড়াও জাপান মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরো বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ওইসব প্রকল্পের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। কাজের নজরদারি ও উপযুক্ত জবাবদিহিতার বিকল্প নেই। প্রয়োজন হলে অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞ দিয়ে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জাপানের অর্থ ও কারিগরি সহায়তায় যা কিছুই হচ্ছে, তার জন্য আমাদের ঋণের বোঝা স্ফীত হচ্ছে। এ ঋণসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ আমাদের কড়ায়-গ-ায় পরিশোধ করতে হবে। সেকারণে ঋণের অর্থ যাতে জনগণের সার্বিক কল্যাণে কাজে আসে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি। দেশে দক্ষ লোকের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এ অভাব পূরণ করতে আমাদের বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অন্যান্য দেশ থেকে দক্ষ লোক আমদানি করতে হয়। এজন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানে তাদের বেতন ভাতা দিতে হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। তারা কোথায় কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে তা দেখভাল করাও অনেক সময় আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরির যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।