চিকিৎসকদের আচার-ব্যবহার সহৃদয় ও মানবিক করতে হবে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর চিকিৎসাপ্রার্থীদের আস্থার অভাব অনেক দিনের। এর কারণ প্রধানত দু’টি। প্রথমত, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে রোগীদের জিম্মি করে যথেচ্ছ অর্থ আদায় করা। দ্বিতীয়ত, চিকিৎসকদের আচার-ব্যবহার ও নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন। অধিকাংশ চিকিৎসকের কথাবার্তা, আচরণ চিকিৎসকসুলভ নয়। রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি তাদের আচরণ স্বাভাবিক ও সহৃদয় নয়। সেবামূলক পেশায় নিয়োজিত থাকলেও তাদের অর্থ লোভ প্রচণ্ড। প্রয়োজন হলে তো বটেই, না হলেও টেস্টের ব্যবস্থাপত্র দেয়া ও নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে কমিশনবাজি করার অভিযোগ অতি পুরোনো। চিকিৎসকদের এ ধরনের নৈতিক স্খলন রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজন যেমন পছন্দ করে না, তেমনি চিকিৎসকদের দক্ষতার অভাব বা ঘাটতিও তাদের হতাশ ও বিব্রত করে। দেশজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে, যার অধিকাংশের বৈধ অনুমোদন ও উপযুক্ত মান নেই। চিকিৎসার নামে ব্যবসা বা অর্থ হাতানোর জন্য এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই যদি বাস্তবতা, তাহলে চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা গড়ে উঠবে কীভাবে? এই আস্থাহীনতা, এই নির্ভরতার ঘাটতি, অনাচার ও দুর্নীতি রোগীদের বিদেশমুখী হতে বাধ্য করছে। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য দলে দলে রোগীরা যাচ্ছে। এই মিছিল কমছে না বরং বাড়ছে। এজন্য প্রতিবছর বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার বেহাল ও দুর্বলতা কাটছে না কোনোভাবেই। চিকিৎসাব্যবস্থাকে জনবান্ধব, সেবামুখী, সাশ্রয়ী ও কার্যকর করার তাগিদ অরণ্যরোদনে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ইতিবাচক তৎপরতা কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তি, পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। কমিটেড চিকিৎসক হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি ক’দিন আগে বলেছেন, অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সর্বদা নিরপেক্ষ থাকবেন। তার এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের চিকিৎসাসেবা নিয়ে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট নন, সে কথা তিনি স্পষ্ট করেছেন আগেই। স্বাস্থ্যসেবায় কোনো অরাজকতা সহ্য করা হবে না, এমন হুঁশিয়ারিও জানিয়েছেন তিনি। সরকারি চিকিৎসাসেবা সুশৃংখল ও বেসরকারি চিকিৎসাসেবা সুনিয়ন্ত্রিত করার পথে তিনি এগুচ্ছেন, যা পরিস্থিতি উত্তরণে জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তরফে হাইকোর্টে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে তাতে দেশে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর অনুমোদন বা লাইসেন্স আছে ১৫ হাজার ২৩৩টির। যদিও অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ। জানা গেছে, অবৈধ চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলো আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) বন্ধ হয়ে যাবে। নিঃসন্দেহে এতগুলো অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া একটা বড় ঘটনা। মানহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ চিকিৎসাসেবাদায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে অপচিকিৎসার নামে নির্বিচারে লুণ্ঠন অনেকটাই কমবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু এ পদক্ষেপেই উন্নত ও মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা দিতে এবং রোগীদের বিদেশমুখিতা রহিত করতে যথেষ্ট হবে না। একই সঙ্গে চিকিৎকদের আচার-ব্যবহার ও দক্ষতা উন্নত করার ব্যবস্থাও নিতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা, চিকিৎসাঅবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা আমাদের চেয়ে খুব বেশি উন্নত নয়। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকদের আচার-ব্যবহার অত্যন্ত মানবিক। ফলে বাংলাদেশ থেকে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষ চিকিৎসার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারতে যাচ্ছে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে ভারতীয় উৎসের বরাতে বলা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়াদের ৮৪ শতাংশ বাংলাদেশি। বছরে প্রায় ২৪ লাখ ৭০ হাজার মেডিকেল ট্যুরিস্ট বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়। এ খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতে চলে যাচ্ছে। ভারতের হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিকরা বাংলাদেশ থেকে রোগী আকর্ষণের জন্য বিরাট অংকের বিনিয়োগও করেছে। এটা বলাই বাহুল্য, আমাদের দেশের অবৈধ ও মানহীন চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিলে এবং সেইসঙ্গে চিকিৎসকদের আচার-ব্যবহার উন্নত করা সম্ভব হলে ভারতসহ অন্যান্য দেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া লোকদের সংখ্যা আপনি আপনিই কমে আসবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, মানসম্পন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার যেমন প্রয়োজন তেমনি ভালো, নীতিনিষ্ঠ নির্লোভ ও সেবকসুলভ চিকিৎসকও প্রয়োজন। কথায় বলে, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও চিকিৎসকদের চেহারা, আচার-ব্যবহার দেখে রোগীর রোগ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়।
বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার একটি আঞ্চলিক হাব হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনাই বিদ্যমান রয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। তার পাশেই ভারতের অন্তত ৭টি রাজ্য রয়েছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাস। এসব রাজ্যে চিকিৎসাসেবার অবস্থা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো নয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে ভারতের ওইসব রাজ্যের চিকিৎসাপ্রার্থীরা বাংলাদেশকে তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিতে পারে। অন্যান্য দেশ থেকেও মানুষ চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসতে পারে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে যদি আমরা যেতে পারি, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের রোগীরা যদি যেতে পারেÑ তবে পার্শ্ববর্তী ও দূরবর্তী দেশ থেকে মানুষ চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসবে না কেন? আমরা যদি তেমন ব্যবস্থা নিতে পারি তাহলে দু’দিক থেকে লাভ হবে। দেশের মানুষের চিকিৎসা দেশেই হবে এবং বিদেশিদের চিকিৎসাসুবিধা দিয়ে বড় অংকের অর্থ লাভও হবে। এ ব্যাপারে সরকারের, বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা সুচিন্তিত রোড ম্যাপ তৈরি করা উচিত। চিকিৎসা শুধু রোগ নিরাময় নয়, সেবাও বটে। তাই বলা হয়, ‘চিকিৎসাসেবা’। সেবার মান বাড়িয়েই চিকিৎসার জন্য মানুষকে আকর্ষণ করতে হবে। এ জন্য চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীকে দক্ষ, মানবিক ও সেবাব্রতী হতে হবে। প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত