যুক্তরাষ্ট্র এখন বুড়ো বাঘে পরিণত হয়েছে

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম

একদার প্রবল পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি ক্ষয়ীষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যতই হাকডাক দিক না কেন, তাতে তাকে আর কোনো দেশ খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। অনেকের মতে, দেশটি এখন ‘নখদন্তহীন’ বুড়ো বাঘে পরিণত হয়েছে, যে শুধু হুংকার দিতে পারে। তাতে কেউ ভয় পায় না। দেশটি বিশ্বে আগের মতো আর নিজের ইচ্ছামতো ছড়ি ঘোরাতে পারছে না। কোন দেশকে ধ্বংস, কোন দেশকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনঠাসা কিংবা যুদ্ধ করে পরাস্ত করতে পারছে না। তার খেয়ালখুশির তোয়াক্কা এখন বিশ্বের কোনো দেশই করে না। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশগুলো তার সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নীতি অবলম্বন করে চলেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষায় কঠোর হতে পারছে না। আগে যেমন দেশটি কোনো দেশের উপর নাখোশ হলে হুটহাট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অচল কিংবা সামরিক অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করে দিত, এখন আর তার সেই সক্ষমতা নেই। নাখোশ হলে বড় জোর সেই দেশের শাসক, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সাম্প্রতিক সময়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ক্ষুণেœর অভিযোগ তুলে কিছু দেশের সরকার প্রধান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম, উগান্ডা, বেলারুশ, নাইজেরিয়া, মায়ানমার ইত্যাদি দেশ রয়েছে। এছাড়া দেশটি অন্য যেসব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তা হচ্ছে, অর্থনৈতিক, সন্ত্রাস, তার পলিসির বাইরে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশেষ নীতি ও টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে, ইরান, ইরাক, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, কিউবা, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইথোপিয়া, লিবিয়া, মালি, ভেনেজুয়েলা, বলকানস, সোমালিয়া, সুদান, নিকারাগুয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, হংকং, ইরিত্রিয়া, লাইবেরিয়া, সাইপ্রাস ইত্যাদি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‌্যাব ও পুলিশের সাত কর্মকর্তার ওপরও ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

দুই.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার ¯œায়ুযুদ্ধ তথা ছায়াশক্তি প্রদর্শন প্রবল হয়ে উঠেছিল। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলত না। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই শক্তির প্রতিযোগিতার মধ্যে অনেকটা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নীতি নিয়ে চলত। দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কেজিবি সক্রিয় থেকে নজরদারি করত। দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তারে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত। আশির দশকের শেষের দিকে ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গরভাচেভ দেশটিকে রক্ষণশীল অর্থনীতি ও রাজনীতি থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও মুক্ত রাজনীতি প্রচলনের সিদ্ধান্ত নেন। এ নীতিকে তিনি ‘পেরেস্ত্রইকা’ আখ্যা দেন। এর অর্থ রাজনীতি এবং অর্থনীতির পুনর্গঠন। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ‘গ্লাসনস্ত’ নীতি প্রবর্তন করেন। তার এই নীতির কারণে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপ ঘটে এবং তার অধীনে থাকা বিভিন্ন এলাকা আলাদা ও স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বে যে ‘কোল্ড ওয়ার’ বা শীতলযুদ্ধ কিংবা ¯œায়ুযুদ্ধ চলছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার বিলুপ্তি ঘটে এবং বিশ্বে রাশিয়া তার প্রভাব হারিয়ে ক্ষয়ীষ্ণু পরাশক্তিতে পরিণত হয়। অন্যদিকে, এককভাবে বিশ্ব ‘মোড়ল’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা হয়ে থাকে, রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। এক্ষেত্রে মিখাইল গর্ভাচেভকে দায়ী করা হয়। কারণ, তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক ছিল। বিশ্বে একক শক্তিধর দেশ এবং কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্বে তার সা¤্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী নীতির সম্প্রসারণ করে। তার এই আধিপত্য ও সা¤্রাজ্যবাদের শুরু হয়, ইসলাম ও মুসলমানদের টার্গেট করে। ‘ওয়ার অন টেরোরিজম’র নামে শুরুতে ইরাকে হামলা চালায়। ইরাকে মানববিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে, এমন মিথ্যা অভিযোগে দেশটিতে হামলা চালায় এবং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে সমৃদ্ধ দেশটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নী বিভেদ সৃষ্টি করে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়া হয়। টুইন টাওয়ার নিজে ধ্বংস করে ওসামা বিন লাদেনের আল কায়দার ওপর দোষ চাপিয়ে তা নিধনের অভিযান শুরু করে। লাদেন ও আলকায়দাকে ধ্বংস করার জন্য দুই দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করে দেশটিকে ধ্বংস করে দেয়। এর পাশাপাশি, একশ্রেণীর বিপদগামী মুসলমানদের দিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার নামে আইএস সৃষ্টি করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্গেটেড স্থানে হামলা ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তার দায় স্বীকার করার মধ্য দিয়ে বিশ্বে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস শুরু করে। সন্ত্রাসী দমনের নামে অত্যন্ত সমৃদ্ধ সিরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো হামলা করে ধ্বংস করে দেয়। লাখ লাখ নাগরিককে উদ্বাস্তু ও হত্যা করা হয়। লিবিয়ার মতো সমৃদ্ধ দেশের প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফীকে হত্যা ও হামলা করে ধ্বংস করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র তার ‘ওয়ার অন টেরোরিজম’ নীতি করেছে শুধু মুসলিম বিশ্ব ও মুসলমানদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। আফ্রিকার থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত এমন কোনো মুসলমান দেশ নেই যেখানে সে হয় হামলা করেছে, নতুবা দেশগুলোর অভ্যন্তরে কোন্দল লাগিয়ে অশান্ত করে দিয়েছে। আরব বসন্তের নামে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে তো ঝড় বইয়ে দেয়া হয়। অথচ ইরাইল যে সন্ত্রাসী কায়দায় বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে চলেছে এ ব্যাপারে সে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইসরাইল কোনো ধরনের বাছবিচার না করে যেভাবে নিরীহ নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করছে, তার ন্যূনতম প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে না, উল্টো ইসরাইলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা দেশটি বললেও ফিলিস্তিনে যে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে, এ ব্যাপারে তার কোনো বিকার নেই। এমনকি, তার দেশের সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনে ইসরাইলিদের বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নিচ্ছে না।

তিন.
বিগত এক দশকের মধ্যে বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের একক মোড়লগিরিতে ব্যাপকভাবে আঘাত এবং খর্ব করেছে। বিশ্বে আবারও দুই ভাগে বিভক্তির রেখা ফুটে উঠেছে। এর মূলে রয়েছে চীনের উত্থান। সাথে রাশিয়া যুক্ত হওয়ায় তা যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য ও সা¤্রাজ্যবাদে দেয়াল উঠে গেছে। যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তার ও হামলা চালাচ্ছে, সেসব দেশের পাশে চীন ও রাশিয়া দাঁড়াচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কবল থেকে সেসব দেশ বের হয়ে আসছে। এতে বিশ্বে দেশটির বলয় ছোট হয়ে আসছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের মামলা ও নিষেধাজ্ঞা দিলেও রাশিয়াকে থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বরং রাশিয়ার ওপর গ্যাস ও জ্বালানিনির্ভর ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে দমাতে যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা খুব একটা কাজ করছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশ রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের নব্যমিত্র ভারতও রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক রেখেছে। অন্যদিকে, চীন রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে চীন ও রাশিয়া বলয়ে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ ঢুকে পড়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে। অনেক দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশও এখন তার কথা শুনছে না। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এতদিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক শক্তিধর দেশ হিসেবে যে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তা ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে। অবশ্য আধিপত্য বিস্তার করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ী হওয়ার নজির নেই। অত্যন্ত দুর্বল ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৯ সাল থকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর যুদ্ধ করেও জিততে পারেনি। সেখান থেকে তাকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ফিরতে হয়েছে। ইরাকে একতরফা হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও সেখানে লুটপাট করা ছাড়া তার বিজয় বলতে কিছু হয়নি। তাকে ধীরে ধীরে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হচ্ছে। সিরিয়া, লিবিয়াকে ধ্বংস করেও তার কোনো বিজয় নেই। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে ২০ বছর যুদ্ধ করেও রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে হয়েছে। যুদ্ধ বাদ দিলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ করে যেসব দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে অর্থনৈতিক ও টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেসব দেশে তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। দেশগুলোর পাশে নতুন পরাশক্তির বলয় যারাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় সেই চীন-রাশিয়া পাশে দাঁড়াচ্ছে। ফলে দেশগুলো অচল হয়ে যাচ্ছে কিংবা খুব একটা সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তা বলা যায় না। কারণ হচ্ছে, দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও সুসম্পর্ক জোরালো করে তুলেছে। বরং উল্টো যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর সাথে কাজ করে যাওয়ার কথা বলছে। এ থেকে বোঝা যায়, দুর্বলও যদি সাহস করে সবলের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে সবল থমকে যেতে বাধ্য। আমরা যদি বাংলাদেশের কথা ধরি, তাহলে দেখা যাবে, নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে। সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাস্তবে দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি-ধমকি কোনো কাজে আসেনি, তা তার লিপসার্ভিস ছাড়া কিছুই ছিল না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই শত্রু চীন ও রাশিয়া অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি তার নব্যমিত্র ভারতও সরাসরি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। পরোক্ষভাবে এ পরাজয় হয়েছে চীন ও রাশিয়ার কাছে। যুক্তরাষ্ট্র এই দুই বা তিন শক্তির বিপক্ষে গিয়ে তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র এখন যা বলে বা চায়, তা কেউ মানে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প কিংবা তার আধিপত্য ও খবরদারি উপেক্ষা করেও বিশ্বে চলার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে গেছে। অন্যদিকে, জো বাইডেনের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার ও তার সম্প্রসারণ করা। এজন্য প্রতিবছর প্রায় শতাধিক দেশ নিয়ে গণতন্ত্র সম্মেলন করে। তার এই প্রতিশ্রুতি যে কার্যকর হচ্ছে, তার নজির খুব একটা দেখা যায় না। যেসব দেশ গণতান্ত্রিক সেগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই গণতন্ত্র রয়েছে। যেসব দেশে হাইব্রিড, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র কিংবা কর্তৃত্ববাদী শাসন বিরাজমান, সেসব দেশ তেমনই রয়ে গেছে। এতে বাইডেনের গণতন্ত্র সম্প্রসারণ নীতি কোনো কাজ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এখন ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লে’র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমিদারি না থাকলেও জমিদারের ভাব ও হাঁকডাক আছে।

চার.
যুক্তরাষ্ট্রের এখন এমন পরিস্থিতি যে, তার আগামী নির্বাচনে যে দুজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বয়সজনিত কারণে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। কখন কি বলেন, মনে থাকে না। ভুলভাল বলেন। তার মানসিক শক্তি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জো বাইডেন মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে এক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ২০২০ সালে তার নির্বাচন ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য যে চেষ্টা হয়েছিল, তা নিয়ে সেই সময় জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোহল তার সাথে কথা বলেছিলেন। অথচ সেই সময় জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। হেলমুট কোহল মারা যান ২০১৭ সালে। এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি নেভাদায় এক অনুষ্ঠানে বাইডেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমানুয়েল মাখোঁর পরিবর্তে বলেন ফ্রাঁসোয়া মিতেরা। অথচ ফ্রাঁসোয়া মিতেরা মারা গেছেন ১৯৯৬ সালে। অর্থাৎ বাইডেন যদি এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিজয়ী হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র পাবে একজন স্মৃতিভ্রষ্ট প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। সম্প্রতি ঋণদাতাদের প্রলুব্ধ করতে নিজের স¤পদ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেখিয়ে প্রতারণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তাকে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার জরিমানা করেছেন নিউ ইয়র্কের একজন বিচারক। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। ফলে, তিনি যদি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে দেশটির পরিস্থিতি কি হবে, তা সহজেই অনুমেয়। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন, আগামীতে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে ভাল হবে। এ কথা শুনে ডোনাল্ড রেগে গিয়ে বলেছেন, পুতিনের এ মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তা সঠিক ছিল। অথচ অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে ডোনাল্ডের বিজয়ে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল। এসব ঘটনা থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন তার যোগ্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঠিক করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে এ দু’জন বুড়োর মধ্যে যিনি নির্বাচিত হবেন, তাদের নীতি ও কার্যক্রম বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায় নিয়ে যাবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। তার দর্প ও দম্ভ যে আরো খর্ব হবে, তাতে সন্দেহ নেই।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নারী বিশ্বকাপের সূচির জন্য শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা

নারী বিশ্বকাপের সূচির জন্য শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা

সরকার হটাতে গণবিপ্লব ঘটাতে হবে : আমিনুল হক

সরকার হটাতে গণবিপ্লব ঘটাতে হবে : আমিনুল হক

যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান

যুদ্ধ সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে: ভিসি ড. মশিউর রহমান

শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ

শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা - বদিউজ্জামান সোহাগ

ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

ব্রাহ্মণপাড়ায় পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

‘পানি তাল খাইয়া শরীরডা ঠান্ডা কইরা যায় সবাই’

‘পানি তাল খাইয়া শরীরডা ঠান্ডা কইরা যায় সবাই’

বাজিতপুরে বিশাল মাহফিল আজ

বাজিতপুরে বিশাল মাহফিল আজ

শ্রীনগরে ৭টি ঘর পুড়ে ছাই

শ্রীনগরে ৭টি ঘর পুড়ে ছাই

অসহনীয় গরম ও লোডশেডিংয়ে চরম জনভোগান্তি

অসহনীয় গরম ও লোডশেডিংয়ে চরম জনভোগান্তি

দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর নদীর বাঁধ অপসারণ

দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর নদীর বাঁধ অপসারণ

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ২৫

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ২৫

বড়াইগ্রামে নিজ ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

বড়াইগ্রামে নিজ ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

কাপ্তাই হ্রদ শুধু দেশের নয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্পদ

কাপ্তাই হ্রদ শুধু দেশের নয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সম্পদ

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে কমিউটার রেলের যাত্রা শুরু

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে কমিউটার রেলের যাত্রা শুরু

ফ্রি ফায়ারে পরিচয়ে বিয়ে ৬ মাস পর লাশ

ফ্রি ফায়ারে পরিচয়ে বিয়ে ৬ মাস পর লাশ

দৌলতপুরে আগুনে পুড়লো ব্যবসায়ীর ৫ ঘর ও নগদ ১২ লাখ টাকা

দৌলতপুরে আগুনে পুড়লো ব্যবসায়ীর ৫ ঘর ও নগদ ১২ লাখ টাকা

মাদারীপুরে জনজীবনে দুর্ভোগ

মাদারীপুরে জনজীবনে দুর্ভোগ

মির্জাপুরে তীব্র পানির সংকট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম চারটি স্থানে এমপি শুভর নলকূপ স্থানের উদ্যোগ

মির্জাপুরে তীব্র পানির সংকট নিরসনে শহরের ব্যস্ততম চারটি স্থানে এমপি শুভর নলকূপ স্থানের উদ্যোগ

ক্ষমতাসীনদের ইশারায় সারাদেশে লুটপাট হচ্ছে: মোনায়েম মুন্না

ক্ষমতাসীনদের ইশারায় সারাদেশে লুটপাট হচ্ছে: মোনায়েম মুন্না

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সামার ২০২৪ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সামার ২০২৪ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন