পবিত্র লাইলাতুল বরাত
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৮ এএম | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৮ এএম
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও রিজিক বৃদ্ধির উসিলা হিসেবে কিছু ফজিলতময় দিন ও রাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। পবিত্র লাইলাতুল বরাত তার অন্যতম। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে একে ‘লাইলাতুম মুবারাকাতুন’ বা বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস শরীফে রাতটিকে ‘লাইলাতুম মিন নিসফি শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত এই মহিমান্বিত রাতের পরিধি বিস্তৃত। ফারসি ভাষায় এ রাতকে শবেবরাত বা সৌভাগ্যরজনী বলে অভিহিত করা হয়। উপমহাদেশে রাতটি এ নামেই সমধিক পরিচিত। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী শাবান মাসে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) অধিক সংখ্যক রোজা রাখতেন এবং মধ্য শাবানের দিবাগত রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রাত আসবে, তোমরা রাতে জাগ্রত থাকবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। সূর্যাস্তের পর থেকে এই রাতে আল্লাহতায়ালা স্বীয় তাজাল্লিসহ নিকটবর্তী আসমানে অবস্থান করেন এবং বান্দাদের প্রতি এই আহবান জানাতে থাকেন: কোনো ক্ষমা প্রার্থী আছে কি, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দান করবো। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। ফজর ওয়াক্ত পর্যন্ত আল্লাহপাক এ আহবান জানাতে থাকেন।
এ রাতের মহিমা ও ফজিলত কত উচ্চ এ থেকেই তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। মহান আল্লাহর ক্ষমা, তার কাছ থেকে রিজিক, বিপদ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য এ রজনী এক বিরাট সুযোগ এবং আল্লাহপাকই সে সুযোগ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর বান্দাদের জন্য। এ রাতে নিবিষ্টচিত্তে তার দরবারে তওবা করা, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা, নফল নামাজ আদায় করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা, দান-খয়রাত করা, তসবিহ-তাহলিল করা, মোনাজাত করা, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, কবর জেয়ারত করা এবং আল্লাহপাকের রেজামন্দি হাসিলের জন্য সারারাত ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা বান্দার জন্য অপরিহার্য হিসেবে গণ্য। লাইলাতুল বরাতে আল্লাহর অসীম রহমত ও নৈকট্য লাভের এই সুযোগ থেকে খোদাভীরু বান্দারা নিজেদের বঞ্চিত রাখতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন: ‘যারা (অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়) তওবা করে নিজেদের সংশোধন করে ও সত্য প্রকাশ করে আমি তাদের তওবা কবুল করি। আর আমি তওবা গ্রহণকারী ও করুণাময়।’ আরেক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন: ‘হে রাসূল, আপনি আমার সব বান্দাকে বলুন, যারা নিজের ওপর নিজেরাই অপরাধ করে সীমা লংঘন করেছে, তারা যেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সব অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন।’ পবিত্র এই রাতে কয়েক শ্রেণির মানুষ, যেমন মুশরিক, গণক, যাদুকর, ঈর্ষাপরায়ণ, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, আত্মীয়সম্পর্ক ছেদনকারী, পরস্পর শত্রুতাপোষণকারী, জালিম শাসক ও তার সহযোগী, বাদক, মদ্যপ, ধর্ষণকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যতাকারী ছাড়া সবাইকেই আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন।
বরকতময় এ রাতে যারা ইবাদত-বন্দেগি করবে, তারা নিশ্চিতভাবেই সুফল লাভ করবে। ক্ষমা, বর্ধিত রিজিক এবং বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তি লাভ করবে। ইমাম সুবকি (রহ.) তার তফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জুমার রাতের ইবাদতের উসিলায় সারা সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়। লাইলাতুল বরাত নিয়ে আসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের আগমন বার্তা। স্বীকার করতেই হবে, বিশ্বে এখন একটি ক্রান্তিকাল চলছে। বাংলাদেশও এ থেকে মুক্ত নয়। অতিমারি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। অন্যদিকে ইসরাইল গত বছরের অক্টোবরের শুরু থেকে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর নির্বিাচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের দাম আরো বেড়েছে। বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আগেই দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। এখন তা চরম আকার ধারণ করেছে। নি¤œবিত্ত শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তের অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা, তারা না পারছে সংসারের চাহিদা পূরণ করতে, না পারছে কারো কাছে হাত পাততে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া এখন একান্ত কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনে স্থিতিশীল করা সরকারের দায়িত্ব। দেশের বিত্তবান ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে দরিদ্র-মধ্যবিত্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, দরিদ্রকে সহায়তা করা, বিপন্নকে উদ্ধার করা এবং বিপদগ্রস্তকে বিপদমুক্ত করার চেয়ে বড় ইবাদত আর নেই। পবিত্র লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে নফল নামাজ, কোরআন তেলওয়াত, দোয়া-দরুদ, ওজিফা, তসবি-তাহলিলের মাধ্যমে আল্লাহপাকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এই মহাসংকট থেকে মুক্তি কামনা করতে হবে। সেই সাথে যতদিন পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন না ঘটে, বেশি বেশি দান-খয়রাত ও সাহায্য-সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, অতি বরকতময় ও ইবাদত-বন্দেগির এ মহান রাতকে অনেকে আনন্দ-উল্লাসের উপলক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। এ রাতে আতশবাজি, পটকা ফোটানো, হৈ হুল্লড়ে মেতে উঠতে দেখা যায় তাদের। এসব অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশু-কিশোর-তরুণরা যাতে এসব না করতে পারে, অভিভাবকদের তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে মহান আল্লাহপাক আমাদের সর্বক্ষেত্রে মঙ্গল, কল্যাণ, স্বস্তি ও নিরাপত্তা দান করুন, এই কামনা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণপিটুনিতে দুই মাসে ৩৩ জনের মৃত্যু
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রশ্ন তুললেন জয়
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়