দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা
০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গত কিছুদিন ধরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। অবশেষে বাড়িয়েছে। শুরুতে মার্চ থেকে বাড়ানোর কথা বলা হলেও এখন একমাস আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে ৮.৫০ শতাংশ এবং পাইকারি পর্যায়ে ৫.০৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে নিচের দিকে ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা এবং উপরের দিকে ৭০ পয়সা দাম বাড়বে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ সম্পর্কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ডলারের কারণে ভর্তুকি বেড়েছে। গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে বাজারের সাথে দাম সমন্বয় করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের টানাপড়েনের জীবনকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেবে।
গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাদের দিন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়লেও তাদের আয় বাড়েনি। বরং টাকার মান কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে। উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অসংখ্য মানুষের এখন দুবেলা খাবার যোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারিও উপেক্ষিত হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য অতি লোভী এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়নের নজির দেখা যাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি লোকদেখানো বা কথার কথা। কারণ, তারা সরকারেরই ঘনিষ্ট। সরকার যেমন তাদের দ্বারা সুবিধা পায়, তেমনি সরকারও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। ফলে এসব ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে। সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের কষ্টের চেয়ে এসব ব্যবসায়ীর গুরুত্ব বেশি। সরকার সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তা কাজ করেছে, তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ যে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে, তা বহাল রয়েছে। এতে দরিদ্র অতিদরিদ্রে, নি¤œবিত্ত দরিদ্রে, মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। বেকারের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে যে নিত্যপণ্যের মূল্য আরও বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। গ্যাস, বিদ্যুৎ এমন এক জ্বালানি, যা ছাড়া কোনো কিছুই চলে না। উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সবক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য। এর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সর্বত্র পড়ে। সরকার বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করছে, তবে পণ্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের আয়ের সাথে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নতুন করে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কাছে এখন ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে উঠেছে। এ থেকে তাদের পরিত্রাণ পাওয়া কিংবা ‘ত্রাতা’ হয়ে যে কেউ পাশে দাঁড়াবে সেই সুযোগও তাদের নেই। কারণ, সরকার নিজেই তা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পূর্বে গণশুনানি করা হতো। সরকার সে পথও বন্ধ করে দিয়েছে। নিজেই দাম সমন্বয়ের কথা বলে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষের হাহাকার করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিকে পর্যবেক্ষকরা সাধারণ মানুষের উপর সরকারের ‘জুলুম’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। এটা দেশবাসীর সঙ্গে একধরনের ‘প্রতারণা’ও বলছেন। বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি মার্চে কার্যকর করার কথা বলা হলেও, তা একমাস আগেই কার্যকর করা হয়েছে। এ ধরনের আচরণকে জনগণের সাথে শঠতা ছাড়া আর কী বলা যায়? বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা ছুঁতোয় সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এবারও তাই করেছে। অথচ বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন, চুরি ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে পারছে না। বিদ্যুৎ খাতে এই বিপুল অর্থ অপচয়ের পুরো দায়ভার নিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এক্ষেত্রে সরকারের ছাড় দেয়ার কোনো মানসিকতা নেই। সব দায় যেন সাধারণ মানুষকেই শোধ করতে হবে। সরকারের এ প্রশ্নসাপেক্ষ ও অবিবেচনাপ্রসূত ধরনের আচরণ পরিত্যাগ করে মানুষের কষ্ট লাঘবের চিন্তা করতে হবে। সব রকম ছলচাতুরি কিংবা প্রতারণা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন খুলছে আজ
বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব আর নেই
জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের