ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকায় জনচাপ ও রিকশার দাপট কমাতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম

মাহে রমজান ও ঈদ আসলে রাজধানী ঢাকায় পণ্যমূল্য বাড়ে, ভিক্ষুক বাড়ে, মানুষের সংখ্যা বাড়ে, রিকশা বাড়ে, যানজট বাড়ে, নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা ধরনের সংকট বাড়ে। এ চিত্র প্রতি বছরই দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার নয়। ইতোমধ্যে সব আলামতই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আর কয়েক দিন পরেই শুরু হবে মাহে রমজান। এর দেড়-দু’মাস আগে থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। চাল, আটা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ-রসুন, মাছ, গোশত, মুরগি, দুধ, তরিতরকারি, শাকসবজি ইত্যাদি কোনো পণ্যই সাধারণ ও নি¤œ আয়ের, এমনকি মধ্যআয়ের লোকদেরও নাগালের মধ্যে নেই। সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও কৌশলের কাছে সরকার যে ব্যর্থ, লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিই তার প্রমাণ। এর আগেই পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, গ্রাম থেকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে। গ্রামে কাজ কম, ঢাকায় কাজের সুযোগ বেশি, এমন ধারণায় গ্রাম থেকে কর্মহীন, বেকার, দরিদ্র লোকজন দলে দলে ঢাকায় আসছে। ঢাকার ভিক্ষুকের সংখ্যাও যে আগের চেয়ে বেড়ে গেছে, তেমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। রোজার সময় খাবারদাবার ও দানখয়রাত পাওয়ার আশায় ঢাকায় প্রকৃত ভিক্ষুক ছাড়াও সাময়িক ভিক্ষুকের সংখ্যা অসম্ভবরকম বেড়ে যায়। রোজা শুরু হলে ভিক্ষুকের সংখ্যা যে আরো বাড়বে, সেটা ধরেই নেয়া যায়। এখনই ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার দিকে তাকালে অসংখ্য রিকশা, অটো রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং অন্যান্য দ্রুত ও ধীরগতির যানবাহন দেখা যায়। এর ফলে যানজট আগের চেয়ে বেড়েছে। মেট্রোরেল-এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর যানজট কমার কথা, অথচ না কমে বেড়েছে। কারণ, ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে সব ধরনের রিকশা ও অটো এখানে প্রবেশ করেছে। রমজানে এসব যানবাহনের সংখ্যা আরো বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।

ইনকিলাবে গতকাল ‘রিকশার দখলে ঢাকা’ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওই খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকা এখন রিকশার শহর। বিভিন্ন সড়কজুড়ে রিকশা চলাচল করছে। এর প্রকৃত সংখ্যা যে কত, সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষই তা বলতে পারে না। রিকশার মধ্যে বৈধ কতটা, কতটা অবৈধ, কতটা সনাতন কতটা বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত, কারো জানা নেই। একই কথা অটোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ঢাকায় ১১ লাখ রিকশা চলাচল করছে। গত ৫ বছর এ সংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে, সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগ সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ভেতরে চলাচল করে, এমন বৈধ ও অবৈধ রিকশার সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। বলা বাহুল্য, উত্তর সিটিতেও এর খুব একটা কম হওয়ার কথা নয়। অনুমিত হিসাবে প্রায় দুই লাখ ব্যাটারি চালিত রিকশা এখন ঢাকায় চলাচল করছে। এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ব্যাটারি চালিত অটোর সংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা ও অটো চলাচলের অনুমোদন নেই। বড় কয়েকটি সড়কে কোনো ধরনের রিকশার চলাচলও নিষিদ্ধ। অথচ দেখা যায়, ওই কয়টি বড় সড়ক বাদে ঢাকার অন্যান্য সড়ক, লেন-বাইলেন সব ধরনের রিকশা ও অটো দিব্যি চলাচল করছে। অবৈধ বা অনুমোদনহীন যান অবাধে চলছে। সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই এই বেআইনী ও অবৈধ কারবার চলছে। বস্তুত রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা ও পুলিশের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া কোনো অপকর্ম, অপরাধ ও অবৈধাচার ঘটতে পারে না। একটি সড়কে বা রাস্তায় অনেক ধরনের যান চলাচল করে। প্রতিটা সড়কেই যান ধারণ ও চলাচলের সক্ষমতা আছে বা থাকে। এর বাইরে চলে গেলে যানজট অবধারিত, দুর্ঘটনার আশংকাও বৃদ্ধি পায়। ঢাকার প্রতিটি সড়কে অতিরিক্ত যান চলাচল করে। এতে অস্বাভাবিক, অসহনীয় যানজট তো সৃষ্টি হয়ই, একই সঙ্গে যখন তখন দুর্ঘটনাও ঘটে। মানুষ হত বা আহত হয়। সাম্প্রতিককালে মটর বাইকের সংখ্যা ও দৌরাত্ম্য রিকশা ও অটো দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণে পরিণত হয়েছে। অবৈধ ও নিষিদ্ধ যানচলাচল সম্পূর্ণ রহিত ও রাস্তাঘাটে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা হলে যানজট ও দুর্ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসতে পারে।

রাজধানীতে লোকচাপ বাড়ছেই। এখন লোকসংখ্যা প্রায় দুই কোটিতে পৌঁছেছে। তারপরও মানুষের ¯্রােত বন্ধ হয়নি। কর্মসন্ধানী, ভিক্ষাজীবী বা সাহায্যপ্রার্থী, শিক্ষাকামী, উন্নত জীবনপ্রত্যশীসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ নানা উপলক্ষে অবিরাম আসছেই। ঢাকা এক সময় ছিল পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ বসবাসস্থল। এখন তা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। সবচেয়ে দূষিত শহর এখন ঢাকা। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, মাটি দূষণসহ এমন কোনো দূষণ নেই, ঢাকা যাতে আক্রান্ত নয়। ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অনুপযুক্ত শহর। অতিরিক্ত জনসংখ্যার শহর, ধীরগতির শহর, যানজটের শহর হিসাবেও তার পরিচিতি বিশ্বময়। নগরবিদ, পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকাকে নিরাপদ, পরিবেশানুকূল, গতিশীল ও বসবাসযোগ্য করতে চাইলে প্রথমে লোকচাপ কমাতে হবে। পরিমিত লোকসংখ্যার শহর হিসেবে একে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব কিছুর রাজধানীকেন্দ্রিকতা পরিহার করে বিকেন্দ্রীকরণনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা চাহিদানুগ ও সুশৃংখল করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়-রোজগার যদি বাড়ে প্রয়োজন ও সেবাপ্রাপ্তি যদি নিশ্চিত হয় তবে মানুষ গ্রাম ছেড়ে ঢাকা বা অন্যান্য শহরে আসবে না। এ অবস্থা তৈরি করা অবশ্য সময় সাপেক্ষ। তবে এখন যে নানা কারণে জনচাপ বাড়ছে, খাদ্য-খাবার, বাসস্থান ও সেবার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অনিরাপত্তা, বিপদ-বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকায় লোকাগমন নিয়ন্ত্রণ, বৈধ রিকশা ও অটোর সংখ্যা হ্রাস এবং অবৈধ রিকশা ও অটোর চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হলে জনচাপ, যানজট, দুর্ঘটনা কমবে। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম হত্যা : ৮ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী