নারীদের এ চিত্র অত্যন্ত লজ্জাকর ও দুঃখজনক
১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম
প্রতি বছরই ৮ মার্চ দেশে সাড়ম্বরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রযাত্রা, উদ্যোগ ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এভাবে দেশের অর্থনৈতিক ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এই সম্মাননাই কি যথেষ্ট? সার্বিক নিরাপত্তা, কর্মসুরক্ষা থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীরা কতটা নিরাপদ? তারা কতটা নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারছে? কিংবা কর্মক্ষেত্রে আত্মনিয়োজিত হতে পারছে? বাংলাদেশে নারীদের পরিস্থিতি কি, তা সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২৪ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের চিত্র থেকেই বোঝা যায়। প্রতিবেদনে ১৯০টি দেশ ও অঞ্চলের নারীদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান ৭ নম্বরে। আফগানিস্তান শুধু বাংলাদেশের নিচে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে নেপাল, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। ১০০ পয়েন্টের সূচক ধরে এই তালিকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯.৪ পয়েন্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সুযোগ নিশ্চিতে যথেষ্ট আইনি সুরক্ষা নেই। এ সম্পর্কিত আইনকানুন যতটুকু আছে, তার বাস্তবায়নও ভাল নয়। এতে নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিতে আইনকানুন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন দুই ক্ষেত্রেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের নারীদের এ চিত্র অত্যন্ত অপমানজনক, লজ্জাকর এবং দুঃখজনক।
স্বাধীনতার পর কর্ম ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দেশে নারীদের অগ্রযাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলেও তা সন্তোষজনক নয়। এর অন্যতম কারণ নারীর স্বাভাবিক চলাফেরা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া। নারীরা এখনও ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। যেসব আইন কানুন রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়, কিংবা উল্টো হয়রানির আশঙ্কায় তারা আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে না। এমন পরিস্থিতিতেও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। শিক্ষা, ব্যবসা, চাকরিসহ অন্যান্য উদ্যোগের সাথে তারা এগিয়ে চলেছে। ’৯১ সাল থেকে মাঝে ২০০৭-০৮ সাল বাদ দিলে পুরো সময় দেশের সরকার প্রধান হিসেবে নারী দায়িত্ব পালন করে আসছে। সংসদের স্পীকার, বিরোধীদলের নেতাও নারী। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন ছাড়াও সরাসরি নির্বাচনে অনেক নারী এমপি হয়েছেন। তারপরও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আইনী সুরক্ষার ক্ষেত্রে নারীরা এত পিছিয়ে কেন, এ খুবই সঙ্গত প্রশ্ন। উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন, আদালতসহ বেসরকারি ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে অনেক নারী সাফল্যের সাথে কর্মে নিয়োজিত। বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরিসহ নারীর উদ্যোগে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ক্রীড়াঙ্গণসহ সংস্কৃতি অঙ্গণে নারীদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। যারা এসব কর্মে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত, তারা নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। তবে তা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় খুবই কম। দেশে এখন জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এর মধ্যে কর্মক্ষম অসংখ্য নারী কর্মের বাইরে রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যদেশগুলোতে নারীরা যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এ তুলনায় আমাদের দেশ যে কত বেশি পিছিয়ে তা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকেই বোঝা যায়। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। তারা প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। অথচ নারীর অগ্রযাত্রায় ঘরে-বাইরে নিরাপদ পরিবেশ সবচেয়ে বেশি জরুরি, যেখানে তারা নির্ভয়ে ও স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে। এ পরিবেশ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সিআরআইয়ের এক যৌথ জরিপে বলা হয়েছে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ স্টেশনসহ গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়রানির শিকার নারীদের মাত্র ১ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পেয়েছে। জরিপ না করলেও কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের হয়রানির চিত্র বোঝা যায়। ইসলামে নারীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত করা হয়েছে। কর্ম এবং ব্যবসায় নারীদের উৎসাহিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে নারীদের মর্যাদা, সম্মান এবং তাদের অধিকার নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ইসলামে নারীদের যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে, ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ হয়েও সে অনুসারে আমরা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
দেশে নারী অধিকারের কথা মুখে মুখে অনেক উচ্চারিত হয়। তবে তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদ্যোগ খুবই অপর্যাপ্ত। শিক্ষা-দীক্ষাসহ যেকোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে নারীদের যথেষ্ট হয়রানি ও অবমাননাকর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবেও নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে নারী দিবসে বিএনপির অঙ্গসংগঠন মহিলাদলের র্যালিতে পুলিশ বাধা দিয়ে প- করে দিতে আমরা দেখেছি। নারী অধিকার সম্পর্কিত এমন নিরীহ কর্মসূচিও যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে কিভাবে? উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ করে দেয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে তারা সুফলও পাচ্ছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর দিকে তাকালেও তা সহজে বোঝা যায়। অথচ এ তুলনায়, আমরা অনেক পিছিয়ে। এটা আমাদের জন্য অবমাননাকর। সরকারের উচিৎ কর্মক্ষেত্র, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের সাথে নারীদের সম্পৃক্ত করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। একই সঙ্গে নারীর চলাচল ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত এবং নারী নির্যাতন বন্ধে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাবি প্রফেসর নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি
বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে বসে বসে ভাড়ার চুক্তি-দাম বৃদ্ধি অর্থের অপচয়: জামায়াত
ম্যাখোঁ ও ইইউ প্রধানের সঙ্গে শি’র বৈঠক
শেনজেন স্টাইলের ভিসা মধ্যপ্রাচ্যেও চালু হচ্ছে -আমিরাতের অর্থমন্ত্রী
২২ বছরে বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৫০ শতাংশ: আইওএম
সাতকানিয়ায় এখনো বিদ্যুৎহীন অনেক এলাকা
টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা
রূপালী ব্যাংকের ঢাকা দক্ষিণ বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
রূপালী ব্যাংকের ঢাকা দক্ষিণ বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় ঈশ্বরদীর ক্ষুদে বিজ্ঞানী নিহত
ভক্তের ওপর চড়াও হলেন সাকিব, নেটদুনিয়ায় সমালোচনা
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে কালেকশন বুথ চালু করল ব্র্যাক ব্যাংক
ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স স্মার্ট প্লাজায় হাইসেন্স এসি, টিভিতে বিকাশ পেমেন্টে অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা ছাড়
শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে
বাগেরহাটে যুবলীগ নেতাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগ নেতা
ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা আনলো ভিভো ভি৩০ লাইট
সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ৮৩ শতাংশ বেড়েছে
টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা
শপআপ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করলেন মামুন রশীদ
১ বছরে আদানি গ্রিনের ২৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি