খাদ্য-পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করতে হবে
১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৭ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:২৭ এএম
বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং টুফটস ইউনিভার্সিটি ২০২১ সালে এক রির্পোটে জানায়, বাংলাদেশের ১২ কোটি ৫২ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ, পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। এই তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বেসরকারি সংস্থা সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) বলেছে, ইতোমধ্যে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। জানা কথা, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালে পণ্যমূল্য আরো বেড়েছে। এই সময়ে মানুষের আয়- রোজগার ও ক্রয়ক্ষমতা কিছু মাত্র বাড়েনি। উল্টো আরো কমেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে, অনেকের বেতন কমেছে। কর্মসংস্থানও বাড়েনি। সাধারণভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরো হ্রাস পেয়েছে। যখন মানুষের আয় কমে তখন সংসারের অন্যান্য অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে খাদ্যপণ্য কিনতে অর্থের সংস্থান কমে যায়। দেখা গেছে, অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্যপণ্য কম, এমনকি অর্ধেক কিনছে। পরিবারে খাওয়া-দাওয়াও কমিয়ে দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় পরিবারের প্রতিটি সদস্যের পুষ্টিহীন হয়ে পড়া অবধারিত। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্যপণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আটা, ছোলা, বেগুন, আলু, মাছ, গোশত, চিনি ইত্যাদির দাম লাগামছাড়াভাবে বাড়ছেই। পবিত্র রমজান উপলক্ষে সরকার কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত দাম কেউ মানছে না। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বাজারের কিছু কারসাজি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাবাজি, মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম, চাঁদাবাজি ইত্যাদি দায়ী। বাজার তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের হলেও সরকার এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকারের কোনো নির্দেশনা-উদ্যোগ ও ব্যবস্থাই কাজে আসছে না। মানুষ অসহায়ভাবে ব্যবসায়ী ও মানুফাবাজদের শিকারে পরিণত হচ্ছে।
দেশের তিন চতুর্থাংশ মানুষ যখন পুষ্টিকর খাবার পায় না, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর, সেটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য আলাদা আলাদা ক্যালরির প্রয়োজন। শিশুর একরকম, বয়স্ক নারী বা পুরুষের একরকম। খাদ্যই ক্যালরির যোগান দেয়। পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ না খেলে ক্যালরির যোগান ঠিকমত হতে পারে না। না হলে দুর্বল ও পুষ্টিহীন শিশু, নারী বা পুরুষ জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যে জাতির শিশু, নারী, পুরুষ যত সুস্থ-সবল সে জাতি তত শক্তিশালী। অনেকেরই জানা, ইসরাইলি আগ্রাসনের ভয়াবহ শিকার এখন ফিলিস্তিনের গাজা। যেখানে নির্বিচারে হত্যাকা- চলছে। গত ৫ মাসে ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। সেখানে এখন চলছে দুর্ভিক্ষও। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গেছে। খাদ্যাভাবে ফিলিস্তিনি শিশু, নারী ও পুরুষ ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। দুর্বল ও কংকালসার অবস্থায় তারা বেঁচে আছে। এক রির্পোটে জানা গেছে, এ সময় যেসব শিশুর জন্ম হয়েছে, তারা প্রায় সকলেই দুর্বল ও খর্বাকৃতির। মায়ের খাদ্যাভাব ও পুষ্টিহীনতাই এর কারণ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজায় যে জাতিগত নিধন চলছে, তা বন্ধ হলেও বেঁচে থাকা মানুষগুলো সুস্থ-সবল মানুষ হিসাবে পূর্বাবস্থায় ফিরতে পারবে, তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। আমরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির কথাও জানি। সেখানে কোথাও কোথাও খাদ্যের অভাব এতটাই প্রকট যে, মানুষ অখাদ্য-কুখাদ্য খেতে বাধ্য হয়। এতে পুষ্টিবৃদ্ধি তো হয়ই না, অনেক সময় মৃত্যুরও কারণ হয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত, দুর্বল, কংকালসর্বস্ব আফ্রিকানদের অবস্থা বা চিত্র দেখে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত না হয়ে পারা যায় না। এক সময় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এইডস মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছিল। এর ফলে জাতিগত দৌর্বল্য চরম আকার নিয়েছিল। তখন একজন মার্কিন কর্মকর্তা এ অবস্থায় ওইসব দেশে প্রতিরক্ষা সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেছিলেন।
শক্ত-সবল দেশ ও জাতির জন্য খাদ্যনিরাপত্তা অন্যতম পূর্বশর্ত। দেশগত বা জাতিগতভাবে খাদ্যনিরাপত্তা থাকলেই হবে না, প্রতিটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। খাদ্য কেনার সক্ষমতা থাকতে হবে। দেখা গেছে, যে ব্যক্তি সুস্থ-সবল তার উৎপাদনশীলতা অন্যান্যের থেকে বেশি। যে দেশের মানুষের উৎপাদনশীলতা যত বেশি, সে দেশ তত উন্নত ও সমৃদ্ধ। আমরা উন্নয়নের জয়গান গাচ্ছি হরদম। বলছি, উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেছে। উন্নত দেশ হতেও খুব বেশি দিন বাকী নেই। অথচ, দেশের কিছুসংখ্যাক বাদে অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত। সামান্য একটি ডিম খাওয়ার অবস্থাও অনেকের নেই। যারা একটি ডিম কিনতে পারছে, তারা সেই ডিম চারভাগ করে খাচ্ছে। অনেকে মাছের কাটা, মুরগীর চামড়া-পা কিনছে বাজার থেকে। এমনকি আলুও অনেক পরিবারে গুনে গুনে রান্না হচ্ছে। এই যদি মানুষের প্রকৃত অবস্থা হয়, তাহলে অবকাঠামোর মেগা সব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাদের জন্য? মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে। তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। দেশ-জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মূল্যস্ফীতি, বিশেষত খাদ্য পণ্যে মূল্যস্ফীতিকে দেখছেন। এই মূল্যস্ফীতি কেন, তা কারো অজানা নেই। সরকারের অনুগত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকার তাদের যথেচ্ছ মুনাফাবাজি বন্ধ করতে পারছে না, তারা ‘সরকারপন্থী’ বলেই সম্ভবত। সরকারকে এই দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। মজুদদার-মুনাফাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সাধারণ মানুষের আয়বর্ধক কর্মসূচির বাস্তবায়ন দ্রুতায়িত করতে হবে। উন্নত-সমৃদ্ধ-শক্তিশালী দেশ ও জাতির জন্য খাদ্য-পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ
শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব
আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর
আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩
কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা
সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা
মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার
বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি
দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ
সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার
আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন
কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা
অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ