জাতিগোষ্ঠীর উত্থান-পতন কীভাবে হয়
১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম
প্রত্যেকটি সৃষ্টির চলাফেরা ও চালচলনের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-কানুন রয়েছে। এই নিয়মের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম হয় না, হেরফের হয় না। লক্ষণীয় যে, একজন ব্যক্তি যেমন তার জীবনকালে শৈশব, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য, সুস্থতা, ব্যাধিগ্রস্ততা, সবলতা প্রভৃতি স্তর অতিক্রম করে, তেমনি একটি জাতি ও জনগোষ্ঠীও অতিক্রম করে জীবন, মৃত্যু, উত্থান, পতন, দুর্বলতা, সবলতা প্রভৃতি স্তর। এর নিয়ম-কানুন স্বয়ং আল্লাহ তাদের জন্য বেঁধে দিয়েছেন। আর বেঁধে দেয়া ওই সমস্ত নিয়ম-কানুনের প্রতি কোরআনে বারবার মানব জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যেমন বিশ্বের মানুষের উত্থান এবং সেটাকে বহাল রাখার যে নিয়ম আল্লাহ রেখেছেন, তাহলো সংশ্লিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কিছু সংখ্যক লোকের এমন একটি দল বিদ্যমান থাকবে যারা অপরাপর লোকদের সৎকর্মের নির্দেশ দেবে, অসৎকার্য হতে বারণ করবে। অন্য কথায়, এই দল আপন জাতি-গোষ্ঠীকে সংস্কার-সংশোধন করার এবং তাদেরকে ফিতনা-ফাসাদ ও দুষ্কর্ম থেকে দূরে রাখার দায়িত্ব পালন করবে।
প্রত্যেক যুগেই এমনি একটি দলের অস্তিত্ব ছিল। তবে সময় ও অবস্থা বিশেষে তাদের আকার-প্রকার ও কর্মপ্রণালী ছিল ভিন্ন ভিন্ন। ভিন্ন ছিল তাদের আসবাব-সামগ্রী ও মাধ্যমসমূহও। মোটকথা, এ ধরনের একটি দল সবসময়ই ছিল এবং তাদের থাকাটা ছিল অপরিহার্য। কেননা, সংশ্লিষ্ট জাতির জীবন, তাদের উত্থান, সসম্মানে ধরাপৃষ্ঠে তাদের টিকে থাকাটা নির্ভর করত ওই বিশেষ দলটি উপরই। আর এ কারণে এই দলের জন্য এটা অপরিহার্য ছিল যে, তারা হবে অত্যন্ত চেতনাসম্পন্ন, সজাগমস্তিষ্ক, পরিশ্রমী, আমানতদার, বিশুদ্ধচিত্ত, নিঃস্বার্থ ও কর্মচঞ্চল। তাদের থাকবে যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, তাদের ঈমান হবে মজবুত, নিয়ত ও সংকল্প হবে বিশুদ্ধ, আপন জাতিকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে এবং অসৎ ও ধ্বংসাত্মক পথ থেকে দূরে রাখতে তারা হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সর্বাবস্থায় আপোসহীন। আর এ দল সম্পর্কেই মহান রব বলেন, ‘ওদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বের হয় না কেনো, যাতে তারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করতে পারে এবং ওদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে যাতে তারা সতর্ক হয়।’ (সূরা তাওবা: ১২২)।
সৎকর্মশীল ও কল্যাণকামী লোকেরা তাদের জাতিকে ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে। তারা তাদের জাতির জন্য যেন চিকিৎসক। রুগ্ন জাতি যদি তাদের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী চলে তাহলে তারা রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পায়, অন্যথায় তাদের রোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরিশেষে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সত্যের দিকে আহ্বানকারী, মানুষের কল্যাণকামী ও সবরকম যোগ্যতার অধিকার লোকদের কোরআনে ‘সোয়ালিহীন’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে।’ (সূরা আম্বিয়া: ১০৫)। যাবুর কিতাবে আল্লাহ তার এই নির্ধারিত কানুনটি ঘোষণা করেছেন যে, জমিনের উত্তরাধিকারী আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দারাই হয়ে থাকে। যারা সৎকর্মপরায়ণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং যারা দুনিয়াকে সাজাতে ও গড়তে জানে। আর যাদের বিশ্বাস ও কর্ম বিগড়ে যায়, তারা অযোগ্য। গড়ার পরিবর্তে ভাঙে তারা দুনিয়ার উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। উম্মতে মুহাম্মদীর দায়িত্বশীল ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী ছিল। প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সর্বত্র তারা ন্যায়বিচারমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিল ন্যায় ও সত্যের পতাকা। যেকোনো জাতির মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক সৎকর্মশীল বান্দার অস্তিত্ব ওই জাতির উন্নয়ন এবং তাদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। সৎকর্মশীল বান্দাদের যোগ্যতা ও কর্মতৎপরতার মধ্যে যতই ভাটা পড়বে ততই উম্মতের জীবন এবং তাদের টিকে থাকার মধ্যে অবনতি পরিলক্ষিত হবে। এরপর যখন সৎকর্মপরায়ণ বান্দারা নিষ্কর্মা ও প্রভাবহীন হয়ে পড়বে, তখন বুঝতে হবে ওই জাতির পতন ও ধ্বংসের দিন ঘনিয়ে এসেছে।
যখন কোন জাতির স্বচ্ছল ও প্রভাবশালী লোকেরা বল্গহারা ও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে, নিজেদের জাতি ও ধর্মের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে তারা তাদের সমস্ত মনোযোগ নিজেদের সাময়িক স্বার্থের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে ফেলে এবং যখন ওই জাতির বিবেকবান লোকেরাও তাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে না, তখন অনিবার্যভাবে সে উম্মতের ধ্বংসের দিন ঘনিয়ে আসে। কোরআনের ভাষ্য, ‘আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ করি। কিন্তু তারা সেথায় অসৎকর্ম করে; অতঃপর সেই জনপদের প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায় এবং তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি। নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠী ধ্বংস করেছি। তোমার প্রতিপালকই তার বান্দাদের পাপাচারণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা বনি ইসরাইল: ১৬-১৭)। সুতরাং জাতির ক্ষমতাশীল, ধনাঢ্য ও উপরের স্তরের লোকদের ফিতনা-ফাসাদ ও রুচিবিকৃতিই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে ঐ জাতির ধ্বংসের কারণ।
কোনো জাতির আমীর, সরদার এবং প্রাচুর্যের অধিকারী ব্যক্তিদের কুকর্ম দেখে যদি জ্ঞানী ও বিজ্ঞলোকেরা শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এবং তা থেকে তাদের বাধা না দেয়, তাহলে ধীরে ধীরে ওই কুকর্ম সমগ্র জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। আর এই অবস্থায় যদি পুণ্যবানরা নিজেদের ব্যক্তিগত পুণ্যকর্ম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। সমষ্টিগত ফাসাদ ও দুষ্কর্ম দেখে তার বিরুদ্ধে টু শব্দও উচ্চারণ করে না বরং নীরবচারী হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতে হবে গোটা সমাজের দুর্ভাগ্যের দিন ঘনিয়ে এসেছে এবং এ জাতিকে অচিরেই কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা এমন ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক হও, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম কেবল তাদেরকেই ক্লিষ্ট করবে না। জেনে রাখো, আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।’ (সূরা আনফাল: ২৫)। সমষ্টিগত অপরাধের ব্যাপারে আল্লাহর নিয়ম এটাই। ইসলাম শুধু ব্যক্তিকেই নয়, বরং গোটা সমাজকে পবিত্র ও পুণ্যবান দেখতে চায়।
জুলুম, খুনখারাবি, মূর্খতা ও অসভ্যতা জাতিগোষ্ঠীর পতন এবং ধ্বংসের এটাও এক কারণ। যে কোনো সমাজ ও যে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাধি হলো রক্তারক্তি ও জুলুম-অত্যাচার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, জুলুম-অত্যাচারের কারণে বিশ্বের অনেক বড় বড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে, সমাজ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে, সমাজের লোক চরম ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। মজলুমের আহাজারিতে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সেখানকার আকাশ-বাতাস। পরিশেষে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে জালিমের ওপর এমন সব বিপদ ও শাস্তি নেমে এসেছে, যার কথা কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। আর ওই শাস্তিগুলো ছিলো ভূমিকম্প, বজ্রপাত, দুর্ভিক্ষ, আগুন কঠিন কঠিন রোগব্যব্যাধি এবং ভয়ানক আরও অনেক কিছু। জুলুম-অত্যাচারের ফলে আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হওয়াটা ছিলো এমন একটি কানুন যা কখনও পরিবর্তন হওয়ার মতো নয়।
ধনসম্পদের অপব্যবহার, অর্থের অপচয়, অন্যের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করা জাতি-গোষ্ঠীর অধঃপতনের আরেক বড় কারণ। আল্লাহ তার বান্দাদের উত্তপ্ত ভাটিতে ফেলে পরীক্ষা করেন। দেখেন, কে আসল আর কে নকল। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে নিশ্চিত তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হবে। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তাদের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং সাবধান হয়ে চলো, তবে তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সূরা আল ইমরান: ১৮৬)। প্রত্যেক যুগেই মুমিন মুসলমানরা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। এখনও বিশ্বের মুসলমানরা নানা পরীক্ষার সম্মুখীন। এই অবস্থায় তাদের দৃঢ়তা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের সর্বাধিক প্রয়োজন। যারা পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পর সাহস হারিয়ে বাতিল ও অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে তাদের কপটতা ও সুবিধাবাদের উপর আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল অভিসম্পাত করেছেন। বর্তমান অবস্থায় মুমিন মুসলমানদের একটি দল বাতিলের সঙ্গে আপোস করে চলছে, যা কোরআনের তথ্যানুযায়ী তাদের লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার একটি অনিবার্য কারণ।
জাতির মধ্যে যখন পরস্পর মতবিরোধ ও দলাদলি সৃষ্টি হয়, একতা ও ঐক্যের শৃঙ্খলা যখন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তখন জাতি হারিয়ে ফেলে তাদের মানমর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি। অধঃপতন তাদের ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে। যেমনটি কোরআনে এসেছে, ‘নিজেদের মধ্যে বিবাধ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।’ (সূরা আনফাল: ৪৬)। মুসলমানদের পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসা এমন একটি নেয়ামত, যেটাকে আল্লাহ তার বিশেষ পুরস্কার বলে নির্ধারণ করেছেন। আক্ষেপ তাদের উপর, যারা এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়া সত্ত্বেও নির্বিকার এবং এজন্য তাদের অন্তরে কোনো জ্বলন অনুভব করে না। আজ পারস্পারিক ভালোবাসার পরিবর্তে পারস্পারিক ঝগড়া-বিবাদই মুসলিম উম্মাহর বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকেই বলা হয় পরিস্থিতির অদ্ভুত বৈপরিত্য।
লেখক: প্রিন্সিপাল, শ্যামপুর কদমতলী রাজউক মাদরাসা, ঢাকা।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২
পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল
মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব
ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ
শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব
আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর
আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩
কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা
সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা
মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার
বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা
তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়
সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে
ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি