মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস
২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আমাদের স্বাধীনতা ৫৩তম বর্ষ অতিক্রম করে ৫৪তম বর্ষে পদার্পণ করলো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার সূচনা করে। হানাদার বাহিনীর এই হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তখনই দুর্বার প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ ৯ মাসের মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শাহাদাত বরণ করেন, অসংখ্য মানুষ আহত হন, বহু মা-বোন সমভ্রম হারান, সম্পদ-সম্পত্তির বেশুমার ক্ষতি হয়। এত কিছুর বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, যার প্রতীক্ষায় যুগযুগ ধরে অপেক্ষায় ছিল দেশের মানুষ। স্বাধীনতা যেকোনো জাতির জন্য পরম আকাক্সক্ষার বিষয়। আত্মপ্রতিষ্ঠার অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন, অর্থনৈতিক মুক্তি, বৈষম্যের অবসান ইত্যাদি ছিল আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য। এইসব লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যাশা নিয়েই জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বিপুল ত্যাগ ও মূল্যে স্বাধীনতার স্বপ্নের বন্দরে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছিল। শুরুতেই স্বাধীনতার তিনটি মৌলিক লক্ষ্যের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। এই তিনটি মৌলিক লক্ষ্য হলো, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এবং সাম্য। এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার, সুশাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়গুলোও ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত ছিল।
সমৃদ্ধ দেশ গঠন বঙ্গবন্ধু ও লাখো মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন ছিল। সেই লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে। এখন পর্যন্ত এই অঙ্গীকার-প্রতিজ্ঞা অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে গেছে। রাজনীতি এখনো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানমূলক ধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতি তীব্র হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য এখনো দূরের বাদ্য। অর্থনৈতিক মুক্তি অধরা। বৈষম্য চরমে। গভীর উদ্বেগের বিষয় এই যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিকে বিভক্ত করার এক সর্বনাশা তৎপরতা চলছে। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। অথচ জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভবপর হয়েছিল। বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন। স্বাধীনতা তখনই সুরক্ষিত থাকে যখন জাতি ইস্পাতকঠিন ঐক্যে দৃঢ়বদ্ধ থাকে। যারা জাতিকে বিভক্ত করতে তৎপর তারা মূলত স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করে তুলছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও একই সমতলে আনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুর। তিনি জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। বর্তমান ক্ষমতাসীন মহল বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার দাবি করে। তাঁর স্বপ্ন, নীতি-আদর্শ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে হরহামেশা বয়ান দেয়। অথচ, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় তার কোনো ভূমিকা নেই। উল্টো জাতিবিভক্তির কাজ করছে জোরেসোরে। বড় বড় স্ট্রাকচার নির্মাণ করলেই দেশ ও জাতি উন্নত হয় না। অতীতে রাজা-বাদশাহ ও স্বৈরশাসকরা অনেক স্ট্রাকচার নির্মাণ করেছেন, যা এখনো যত্রতত্র দৃশ্যমান। স্ট্রাকচার নির্মাণ উন্নয়নের সবকিছু নয়, যদিও ক্ষমতাসীন মহল সেটাই মনে করছে। শিক্ষা-দীক্ষা, মেধা-মনন, ধর্মনিষ্ঠা, মূল্যবোধ, সাহিত্য-শিল্প, সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা ইত্যাদিতে যে জাতি যত এগিয়ে, সে জাতি তত উন্নত। দুঃখজনক হলেও এসব ক্ষেত্রে আমরা মারাত্মক দৈন্য ও অবক্ষয় দেখছি।
আমাদের রাজনীতি, নির্বাচন, শাসন ইত্যাদির যে চিত্র আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি, তা গভীর উদ্বেগজনক। ক্ষমতা যখন মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় এবং ক্ষমতার জন্য কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, তখন জাতির ভবিষ্যত নিয়ে শংকা জাগা স্বাভাবিক। বলা হয়, জনগণই দেশের মালিক, ক্ষমতার উৎস, অথচ বাস্তবতা হলো, জনগণের মালিকানা এখন জনগণের হাতে নেই। তারা আর এখন ক্ষমতার উৎস নয়। দেশে একতরফা ও জোর-জবরদস্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার অপসংস্কৃতি বিদ্যমান। এহেন গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থায় দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কাক্সিক্ষত গতি ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয়। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে এসে আমরা দেখছি, যে লক্ষ্যসমূহ সামনে রেখে জাতির জনকের ডাকে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সে লক্ষ্য অর্জনে এখনো আমাদের বহুদূর যেতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্থাপত্যগত ও পরিসংখ্যানগত উন্নয়ন হয়েছে, এটা ঠিক। এই সঙ্গে মানুষের জীবনমান এবং মানবিকতার উন্নয়ন ঘটানো জরুরি। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বেকারত্বের হার বেড়েছে, মানুষের আয় কমে গেছে। এর মধ্যে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছে। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ কমানোর জন্য জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি। আমরা এখনো তা পুরোপুরি লাভ করতে পারিনি। আমাদের জাতীয় লক্ষ্য, অর্জন ও অগ্রগতির জন্য যেমন দেশের সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন, তেমনি প্রতিশোধপ্রবণ রাজনীতির অবসান ঘটানো আবশ্যক। এখন আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। অতীত চর্চা না করে আমাদের সামনে তাকাতে হবে। ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে লক্ষ্য, সে লক্ষ্য পূরণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট
গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি
ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন
তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২
রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকড
দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার
৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ
২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ
বায়তুল মোকাররমে তুমুল হট্টোগোল-মারামারি (ভিডিওসহ)
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার
বান্দরবানে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র-গোলাবারুদ, ড্রোন ও সিগন্যাল-জ্যামারসহ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২
পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল
মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে পালিয়ে গেলেন আওয়ামী খতিব
ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ
শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব