পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছেটা কি?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ এএম

গত ১৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি নিজেই এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে গেছেন, দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর ও তার কিছু সহপাঠীকে। তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন, বিক্ষোভে উপাচার্য হাজির হয়ে অভিযুক্ত সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। কোনো শিক্ষার্থী বিপদে পড়লে যেখানে তার সহপাঠীরা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসার কথা এবং যে প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তারাই এখন প্রধান অভিযুক্ত। একজন শিক্ষার্থী মানসিক টর্চারে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এই সংবাদটা আসলেই ভয়ঙ্কর, কেননা সাধারণ শিক্ষার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। একজন শিক্ষার্থী যদি প্রক্টরের কাছে অভিযোগ করে বেকায়দায় থাকতে হয় তাহলে সে যাবে কোথায়? এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনভাবে এড়াতে পারে না, যেহেতু ওই শিক্ষার্থী ও তার মা প্রশাসনকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন, কতটা অসহায় হলে ও সহপাঠীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হলে একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেয়?

ইদানিং বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েও দুই জন শিক্ষককে যৌন হয়রানি ও শিক্ষার্থী হয়রানি জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের করের টাকায় পরিচালিত হয়। বর্তমানে প্রায় ডজন খানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলন চলছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠগুলোতে যদি বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে আন্দোলন করা লাগে অথবা বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়, তাহলে আমাদের সমাজ কোন দিকে দাবিত হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্কগুলো আজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ছাত্ররা আগে শিক্ষকদেরকে নিজেদের আইডল ভাবতেন, কিন্তু এখন আন্দোলন সংগ্রামে শিক্ষকদের নাম মুখে নিয়ে কখনো ধর্ষক, কখনো গুন্ডা, কখনো নিপীড়ক বলে স্লোগান দিচ্ছেন। সম্পর্কগুলো কি এমন হওয়ার কথা ছিলো? একজন ছাত্র অনায়াসেই একজন শিক্ষকের সাথে তার সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করতে পারেন। যৌবনের এই তপ্ত সময়ে তার পাশে তার বাবা-মায়ের পরেই একজন শিক্ষক তাকে আগলে রাখেন। কিন্তু আফসোস, আজকে সেই পিতৃতুল্য, বন্ধুপ্রতিম শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। এটা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র ও শিক্ষকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে দাবি আদায় করতে দেখা গিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ ড. শামসুজ্জৌহা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের বুলেট নিজের বুকে নিয়েছেন, তার ছাত্রদের আগলে রেখেছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় এখনও আছে, কিন্তু এখন বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন। যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যত ভালোভাবে চলবে, যত ভালো গবেষণা হবে সে দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে। উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দাবি আদায়ে এত আন্দোলন সংগ্রাম চোখে পড়ে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে, যাদের দিকে তাকিয়ে থাকে পুরো দেশ ও জাতি, তাদের এরকম হিংসাত্মক মানায় না। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে যদি এরকম বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয় তাহলে আগামীকাল এসকল শিক্ষার্থীরাই যখন দেশকে নেতৃত্ব দেবে তখন তাদের কাছ থেকে কীভাবে ভালো কিছু আশা করা যাবে? গত দুই দশকে বিশ্ব এগিয়েছে অনেকদূর, সেই সাথে বাংলাদেশও বদলিয়েছে ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক। ইদানিং আবার ক্লাসে শিক্ষকের কোমরে অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে যেতেও দেখা যায়, আবার ক্লাস রুমে তার ছাত্রের উপর গুলি বর্ষণের সংবাদও পত্রিকার প্রথম পাতায় ঠাই পায়।

সাইফুল ইসলাম
প্রভাষক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আদনানুজ্জামান

শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আদনানুজ্জামান

দেশরক্ষায় বৃক্ষরোপণ করবে ছাত্রদল

দেশরক্ষায় বৃক্ষরোপণ করবে ছাত্রদল

ডিএনসিসিতে বসার ব্যবস্থা নেই চীফ হিট অফিসারের, পায়না বেতনও

ডিএনসিসিতে বসার ব্যবস্থা নেই চীফ হিট অফিসারের, পায়না বেতনও

হেলিকপ্টারে বসতে গিয়ে আঘাত পেলেন মমতা

হেলিকপ্টারে বসতে গিয়ে আঘাত পেলেন মমতা

মতলবে বৃষ্টি চেয়ে ‘ইসতিসকার’ নামাজে   মুসল্লীদের বিশেষ দোয়া

মতলবে বৃষ্টি চেয়ে ‘ইসতিসকার’ নামাজে  মুসল্লীদের বিশেষ দোয়া

ব্রাজিলে আশ্রয়কেন্দ্রে আগুন, নিহত ১০

ব্রাজিলে আশ্রয়কেন্দ্রে আগুন, নিহত ১০

সাতক্ষীরায় ক্যামিকালে পাকানো দশ মন আম ভ্রমমাণ আদালতে বিনষ্ট

সাতক্ষীরায় ক্যামিকালে পাকানো দশ মন আম ভ্রমমাণ আদালতে বিনষ্ট

আনোয়ারা হাসপাতালে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ৩০ কেবি জেনারেটর হস্তান্তর

আনোয়ারা হাসপাতালে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ৩০ কেবি জেনারেটর হস্তান্তর

মানিকগঞ্জে ইমামদের উদ্যোগে বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে ইমামদের উদ্যোগে বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই সন্তানসহ মায়ের মৃত্যু

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই সন্তানসহ মায়ের মৃত্যু

হরিরামপুরে দলীয় বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়েই নির্বাচনী মাঠে সরব বিএনপির দুই নেতা

হরিরামপুরে দলীয় বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়েই নির্বাচনী মাঠে সরব বিএনপির দুই নেতা

তিন দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি চালু, সেই সাথে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে সবধরণের পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক

তিন দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি চালু, সেই সাথে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে সবধরণের পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক

মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় কিশোর গ্যাং বেশি: ডিএমপি কমিশনার

মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় কিশোর গ্যাং বেশি: ডিএমপি কমিশনার

“মধুখালীতে প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকতে আসামি ধরতে পুরস্কার ঘোষণায় কাজ হয়নি”

“মধুখালীতে প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকতে আসামি ধরতে পুরস্কার ঘোষণায় কাজ হয়নি”

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল : হামাস

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল : হামাস

শেরপুর ৬ বিএনপির প্রার্থীকে বহিষ্কার!

শেরপুর ৬ বিএনপির প্রার্থীকে বহিষ্কার!

পুড়ছে শেরপুর গারো পাহাড়! সামাল দিতে বন বিভাগ জনবল সংকটে নিরুপায়!

পুড়ছে শেরপুর গারো পাহাড়! সামাল দিতে বন বিভাগ জনবল সংকটে নিরুপায়!

যানজটে ছবি কেন্দ্রে পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

যানজটে ছবি কেন্দ্রে পৌঁছাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

কোটি টাকার মাদক আইসসহ সংগীত শিল্পী রিবেল গ্রেপ্তার

কোটি টাকার মাদক আইসসহ সংগীত শিল্পী রিবেল গ্রেপ্তার

মার্কিন নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে

মার্কিন নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে