মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের টুল্স ক্রয়ে পুকুর চুরি
০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম
কক্সবাজারের মহেশখালিতে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্রয়ে সীমাহীন দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়াত্ত কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড(সিপিজিসিবিএল) এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকল্পের ক্ষুদ্র যন্ত্র বা ‘হ্যান্ড টুল্স’ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কয়েকশ গুণ বেশি মূল্য দেখানোর মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইতিপূর্বে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসন প্রকল্পে কর্মকর্তাদের আসবাব ও বালিশ ক্রয়ের দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। আড়াইশ-তিনশ টাকার বালিশ প্রায় ৬ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুদকের মামলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের হ্যান্ড টুলস ক্রয়ে ১৪ হাজার টাকার দুটি পাইপ কাটারের মূল্য ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, ১৬৬৮ টাকার দুটি হাতুড়ি ১ লাখ ৮২ হাজার টাকায় কেনার তথ্যসহ ১৯টি আইটেমে এমন অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণের তথ্য উঠে এসেছে। মাত্রাতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমূল্য দেখে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানি চালান আটকে দিলেও আমদানিকারক রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান সিপিজিসিবিএল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না থাকায় কাস্টমস হাউজ চালান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
দেশ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটকাল অতিক্রম করছে। গত দেড় দশক ধরে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক সংকট ক্রমে ঘণীভূত হয়েছে। বিদেশি ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোতে যেন লুটপাটের মচ্ছব চলছে। বিশেষত সরকারের অগ্রাধিকার ও বিশেষ আইনগত সুবিধাপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ লোপাট ও পাচারের অভিযোগ উঠছে। রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন একই ধরণের প্রকল্প ব্যয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। মূল প্রকল্পব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না উঠলেও সামগ্রিক উচ্চ ব্যয় এবং আবাসন প্রকল্পের আসবাবপত্র, বালিশ ইত্যাদি পণ্যের বিশ-ত্রিশগুণ বেশি মূল্য দেখানোর মধ্য দিয়ে পুরো প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায়। শত শত কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণে বাস্তবায়নাধীণ প্রকল্পের ব্যয় ডলারে পরিশোধ করা হয়। আমদানি চালানে ওভার ইনভয়েসিং বা বাজার মূল্যের চেয়ে শতগুণ বেশি দামে মূল্য দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ বিদেশে পাচার করার অভিযোগ অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। তবে শর্ষের ভেতর ভুত থাকলে তা দিয়ে ভুত তাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। আমদানিকৃত পণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য কাস্টমস হাউজের কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় কাস্টমস হাউজ চালান আটকে দিলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনাপত্তির পেছনে তাদের দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতা সহজেই আঁচ করা যায়।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সড়ক ও সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় বাংলাদেশে। তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবেশী ভারত ও চীনের চেয়ে তো বটেই, জাপান ও ইউরোপের দেশ থেকেও বেশি। বেশি মূল্য দিয়ে নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণের রেকর্ডও বাংলাদেশের। উন্নয়নের নামে দেশের অর্থনীতি ঋণের ভারে জজর্রিত ও ন্যুজ হয়ে পড়ছে। অস্বাভাবিক উচ্চ প্রকল্পব্যয় দেখিয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে দেশ থেকে বিপুল টাকা পাচার হওয়ার অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ না হওয়ায় ডলারের উচ্চমূল্য ও মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। ইতিপূর্বে বিভিন্ন রিপোর্টে দেশ থেকে অর্থ পাচার, বিদেশে সেকেন্ড হোম এবং সম্পদের মালিকদের বেশিরভাগই সরকারি আমলা, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম উঠে এসেছে। আমলাতন্ত্র ও সরকারের প্রভাবশালী মহলের সাথে সংশ্লিষ্টরা সরকারি অর্থ লোপাটের মধ্য দিয়ে রাতারাতি ধনকুবের বনে গেলেও দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ এখনো দেখা যাচ্ছে না। অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে পণ্য আমদানি ও সরকারি ক্রয়ে কৃচ্ছ্রতার নীতিসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি বিরোধী নানা নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার তেমন কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। জাপানি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানা খাতে শত শত গুণ বেশি মূল্য দেখানো, কাস্টমস হাউজের শক্ত অবস্থানের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাফাই গাওয়ার মধ্য দিয়ে বুঝা যায়, দুর্নীতির হোতাদের শেকড় অনেক দূর বিস্তৃত। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এমন সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন অব্যাহত রেখে ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের ওভার ইনভয়েসিং ও অর্থ পাচার বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এভাবেই দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেতর থেকে ফোঁকলা ও দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। মাতারবাড়ী প্রকল্পের নানা খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় সম্পর্কে অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভোট গ্রহণের একদিন আগে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন স্থগিত
পঞ্চগড়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকায় ইউপি সদস্য আটক
সুন্দরবনে অগ্নিকান্ডের দায়ভার বনবিভাগকেই নিতে হবে
এবার যে দরে কেনা হবে ধান চাল, জানালেন মন্ত্রী
দেশে প্রবেশ করামাত্রই গ্রেপ্তার কুয়েতের সাবেক মন্ত্রী
বুধবার হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সীমান্তে আরও দুই শতাধিক জান্তা সেনার আত্মসমর্পণ
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরায় পুলিৎজার পেল রয়টার্স
‘সাধারণ নির্বাচন নয়,সংবিধান বাঁচানোর লড়াই’, ভোট সকালে বার্তা রাহুলের
জনগণের সম্পদ লুটপাটে বারবার ডামি নির্বাচন : রিজভী
একই কেন্দ্রে ভোট দিলেন মোদি ও অমিত শাহ
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার আহ্বান ইতালির
উপজেলা নির্বাচনের দিনে ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভোটারদের প্রতি বিএনপির আহ্বান
বজ্রপাতে পদ্মা সেতুর টোলস্কেলের মাদারবোর্ডে ত্রুটি, ৩ কিলোমিটার যানজট
'ফ্রি প্যালেস্টাইন' স্লোগানে মুখরিত ইবি ক্যাম্পাস
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রাফায় কার্পেট বম্বিং ইসরাইলের
পরমাণু বোমা মেরে ভিয়েতনামকে ধ্বংস করতে ফ্রান্সকে প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে প্রাইভেট কারে আগুন
৯ মে হজ ফ্লাইট, এখনো ভিসা পাননি বেশিরভাগ হজযাত্রী
টাইম ম্যাগাজিনে ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় জাহিদ মালেক