সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
মন্দিরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত দুই কিশোর সহোদর ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর ৮ দিনেও অভিযুক্ত আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। গত ১৬ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে একটি হিন্দু মন্দিরে অগ্নিকা-ের পর কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে দুই সহোদরকে নির্মমভাবে হত্যা এবং আরো অন্তত ৫ জনকে আহত করা হয়। এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় শুরু থেকেই এলাকাবাসীকে স্বতস্ফূর্তভাবে বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী ভূমিকায় পথে নেমে আসতে দেখা গেছে। দুঃখজনক স্পর্শকাতর ইস্যুতে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে সৃষ্ট সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে। অভিযুক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রশমন ও আইনের প্রতি আস্থা অর্জনের কর্মপন্থা গ্রহণের বদলে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতকরা প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি নি¤œবর্ণের। শত শত বছর ধরে তারা সংখ্যাগুরু মুসলমানদের সঙ্গে মিলেমিশে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে। এদেশের মুসলমানরা কখনোই হিন্দুদের সাথে বিদ্বেষ ও কিংবা বৈষম্য নীতি পোষণ করে না। ভারতের নি¤œবর্ণের হিন্দুরা সুপ্রাচীনকাল থেকে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা নিপীড়ন-বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে সচেষ্ট রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিশেষত ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সময় সেখানকার হিন্দু ভোটার এবং এদেশের মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট টানতে হিন্দুত্ববাদীরা এ ধরনের সংঘাত উস্কে দিতে পারে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একচেটিয়া হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত দুই হাফেজ ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার বর্বর ঘটনাকে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। হত্যাকান্ডের পর থেকে ক্রমেই বেড়ে চলেছে গণবিক্ষোভ। কোনো নির্দিষ্ট নেতৃত্ব, পোস্টার কিংবা ব্যানার-ফেস্টুন ছাড়াই, শুধুমাত্র যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে উদ্বুদ্ধ হয়ে গত মঙ্গলবার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশি বাধায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার সংবাদ গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ ২০ মিনিটের একটি মানববন্ধনে শামিল হলে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট দিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয় বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়।
ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে ভারত বিরোধী করে তুললেও এদেশের সংখ্যালঘুদের উপর সরাসরি তার প্রভাব পড়ার বড় কোনো নজির নেই। ভোটের ময়দানে নরেন্দ্র মোদির মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্বে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই মধুখালিতে সংখ্যালঘুদের হাতে দুই হাফেজ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোতে প্রায়শ বড় বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ সমাবেশ দমনে কখনো পুলিশকে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। পিটিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সংঘাত-সহিংসতা প্রশমনের বদলে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ মোটেও সুবিবেচনা প্রসূত নয়। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের সম্প্রীতি বিনষ্টের কোনো অপচেষ্টায় জড়িত হওয়া উচিত হবে না। মুসলমানদেরও সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। ঊভয় পক্ষকে মানবিক ও সহনশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা করতে হবে। প্রতিটি হত্যাকা-ই সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই জনতার বিক্ষোভ প্রশমনে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পন্থা। হত্যাকা-টি যে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা স্পষ্ট। সুতরাং, হত্যা-ের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্থানীয় নির্বাচনে বিশাল পরাজয়, বড়সড় অস্বস্তিতে ঋষি সুনাক
বাংলাদেশি গার্মেন্টস পণ্যের উপর ‘ল্যান্ডিং চার্জ’ বসানোর দাবি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের
ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের স্বীকার ফিলিস্তিনি নারী
মাতুয়াইলে ইউটার্নের সময় পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা বাসের, চালকসহ নিহত ২
মোবাইলের আলোয় অস্ত্রোপচার, মা ও নবজাতকের মৃত্যু
নাগরিকদের রক্ষাই কানাডার উদ্দেশ্য, ৩ ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে জানালেন ট্রুডো
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অবশ্যই ভারতের অংশ: জয়শঙ্কর
রেকর্ড সংখ্যক হাজির সমাগম হবে মক্কায়, প্রস্তুতি নিচ্ছে সউদী আরব
রাফাহতে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, ২১ ফিলিস্তিনি নিহত
ব্রাজিলে বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, নিখোঁজ শতাধিক
যুক্তরাষ্ট্রে মা-ভাইয়ের সামনে বাংলাদেশি যুবককে হত্যা, ভিডিও প্রকাশ
ভারতে ‘অপমানিত’ হয়ে পদত্যাগ আফগান কূটনীতিকের
ঈশ্বরদী রেল ইয়ার্ডে আগুনে পুড়ল বেশ কয়েকটি স্লিপার
ইসরাইলের হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা, গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ
জাবিতে কর্মচারীর ছেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
কুকুর খাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের লাশ
মহাসড়কে ঢেউ খেলানো রাস্তা যেন মৃত্যু ফাঁদ, সমালোচনার ঝড়
স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে আনসার সদস্যের আত্মহত্যা
আমলাদের সন্তানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
হামাসের রকেট হামলায় ৩ ইসরাইলি সেনা নিহত