অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় কারা?
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
একমাত্র আল্লাহপাকের নিকট থেকে যে পথ ও বিধি বিধান পাওয়া যাবে, তাই মানুষের জন্য সঠিকপথ, সরল পথ। এতদপ্রসঙ্গে মহান আল্লাহপাক আল কুরআনে ঘোষণা করেছেন: ‘প্রকৃত সত্য-সঠিক, সহজ-সরল পথ প্রদর্শন করার দায়িত্ব আল্লাহতায়ালার উপর ন্যস্ত। যদিও অনেক বাঁকা পথও রয়েছে। আর আল্লাহতায়ালা চাইলে তিনি সকল মানুষকেই হেদায়েতের পথে পরিচালিত করতেন।’ (সূরা আন নাহল : আয়াত ৯)।
কোনো কোনো মুফাসসির সিরাতে মুস্তাকীমের অর্থ করেছেন, ইসলাম। কেননা, আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় দ্বীন হলো ইসলাম। কারো কারো মতে, সিরাতে মুস্তাকীমের তাফসীর হলো, কুরআন। [আত্তাফসীরূস সহীহ]
বস্তুতঃ আল্লাহ পাকের প্রদত্ত বিশ্বজনীন দ্বীনের অন্তর্নিহিত প্রকৃতরূপ সিরাতুল মুস্তাকীম শব্দ হতে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ তায়ালার দাসত্বকে কবুল করে তারই প্রদত্ত বিধান অনুসারে জীবন যাপন করার পথই হচ্ছে ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’ এবং একমাত্র এই পথে চলার মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর নেয়ামত ও সন্তোষ লাভ করতে পারে। সুতরাং, সেই একমাত্র পথই মানব জীবনের প্রকৃত ও চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য একান্ত অপরিহার্য। তাই, সেই একমাত্র পথে চলার তাওফীক প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে সূরা আল-ফাতিহার ৬নং আয়াতটিতে। ইহুদি ও নাসারাদের মধ্যে এই শিক্ষার বড় অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ কারণেই মহান আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের অভিশপ্ত জাতি এবং নাসারাদের পথহারা ও পথভ্রষ্ট জাতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এই পৃথিবীর মানুষ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণি হচ্ছে তারা, যাদের আল্লাহতায়ালা নেয়ামত দান করেছেন। তিনি যাদের নেয়ামত দান করেছেন, তারা হলেন আম্বিয়া, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহীন। আল-কুরআনের সূরা আন্-নিসায় তাঁদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘যা করতে তাদের উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের ভালো হত এবং অন্তর স্থিরতায় তারা দৃঢ়তর হত। এবং তখন আমি আমার নিকট হতে তাদের অবশ্যই মহাপুরস্কার প্রদান করতাম এবং তাদের নিশ্চয় সঠিক সরল পথে পরিচালিত করতাম। আর কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ (যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন) তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী। এগুলো আল্লাহর অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞ হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা আন্ নিসা: আয়াত ৬৬-৭০)। এ আয়াত থেকে সঠিক ও সুদৃঢ় জীবন পথ যে কোনটি আর আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত লোকগণ যে কোন পথে চলেছেন ও সে পথে চলে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করার অধিকারী হয়েছেন, তা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে জানা যায়। তাদের পরিচয় আল্লাহতায়ালা নিজেই প্রদান করেছেন। তারা হলো নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদ ও সালেহীনগণ।
আল্লাহর নিকট হতে যে পথ নাযিল হয়েছে, যা অনুসরণ করলে আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত লাভ করা যায়, তা’ কোন নতুন পথ নয়। বরং তা অতিশয় আদিম ও চিরন্তন পথ। মানুষের এই কল্যাণের পথ অত্যন্ত পুরাতন, যতখানি পুরাতন স্বয়ং মানুষ। প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) হতেই এটা মানুষের সম্মুখে পেশ করা হয়েছে। অসংখ্য আম্বিয়া এ পথ প্রচার করেছেন। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিদ্দীক বা সত্যনিষ্ঠ বান্দাহগণ মনে প্রাণে তাদের শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করেছেন এবং অন্যদের এ দীক্ষায় দীক্ষিত করে তুলেছেন। এ শিক্ষার প্রেরণাকে অন্তরে দৃঢ়তর করেই বহু লোক এ পথে তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এবং শহীদ হিসেবে চিরজীবিত মর্যাদায় বিভূষিত হয়েছে। আর এই দৃঢ়পথেই অবিরত সৎকর্মে নিয়োজিত রয়েছেন সালেহীনগণ। আল্লাহপাকের দেয়া নেয়ামতরাজি তারা দুনিয়ার জীবনেও লাভ করেছেন এবং আখেরাতের জন্যও অসংখ্য নেয়ামত তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। তারা ইহুদিদের মত অভিশপ্ত ও অভিশাপগ্রস্ত নয়। কারণ, ইহুদিরা তৌরাত গ্রন্থকে বিকৃত করেছে এবং নিজেদের মনগড়া রীতি-নীতি ও বিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দেয়ার দৌরাত্ম্য প্রদর্শন করেছে। তাই, তাদের অভিশপ্ত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তারা পাঁচশত জন নবীকে হত্যা করেছে। তাই তাদের চিরকালের জন্য অভিশাপগ্রস্ত জাতি রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা কোন পথে চলে অভিশপ্ত হয়েছে, তাদের হাল-হকিকত ও চলাফেরা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া আবশ্যক। আল কুরআনে ঐতিহাসিক জাতি-গোষ্ঠীদের সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে : আর তাদের ওপর অপমান লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যের কশাঘাত হানা হয়েছে এবং তারা আল্লাহর অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছে।’ (সূরা আল-বাকারাহ : আয়াত ৬১) বস্তুতঃ ইহুদিদের পূর্বাপর কর্মকা- ও হাল-অবস্থা পর্যালোচনা করলে নিঃসন্দেহে বুঝতে পারা যায় যে, এই আয়াতে মাগদুব বা অভিশপ্ত বলতে ইহুদিদের বুঝানো হয়েছে। এ বিষয়ে সমস্ত মুফাসসিরই একমত। বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস থেকেও অনুরূপ স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। (এর জন্য দেখুন মোসনাদে আহমাদ : ৫/৩২, ৩৩)
সূরা আল-ফাতিহার ৭নং আয়াতে এই প্রার্থনা করা হয়েছে যে, আমাদের তাদের পথে পরিচালিত করবেন না, যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং যারা গোমরাহ হয়ে আল্লাহতায়ালার উপস্থাপিত সহজ, সরল ও সঠিক পথ হতে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস থেকে এ পথভ্রষ্ট লোকদের পূর্ণ পরিচয় জানতে পারা যায় যে, পৃথিবীর ইতিহাসে নাসারাগণ হচ্ছে আল-কুরআনে উল্লেখিত গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট জাতি। [এর জন্য দেখুন, মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩২, ৩৩, ৭৭]
সুতরাং, পবিত্র কুরআনুল কারীম দুনিয়ার বর্তমান বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ, একমাত্র ও সর্বশেষ আল্লাহর দেয়া গ্রন্থ। এর ওপর স্থাপিত আদর্শ ও জীবনপথই হচ্ছে বিশ্ব মানবতার একমাত্র স্থায়ী ও কল্যাণের পথ। এর বিপরীত সমস্ত জীবনাদর্র্শকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে একমাত্র এরই উপস্থাপিত আদর্শের ভিত্তিতে নিজেদের গঠন করাই সকলের একমাত্র কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনে যতবেশী মানুষ আগ্রহী হবে ততই মঙ্গল ও কল্যাণের জোয়ার ধারায় বিশ্ব অভিষিক্ত হয়ে উঠবে। (সমাপ্ত)।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক
উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু
আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ
সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী
উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ
কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন
কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল
ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন
ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস
সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো
এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন
কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত
রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক
তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ
বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়
বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ
আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ
ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল