বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ মে ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০৯ এএম

দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগ পর্যন্ত দেশে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। আবহাওয়া দফতর বলছে এবার দ্বিতীয় দফায় আরেকটি তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের পেছনে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা। আমাদের দেশে অন্যতম কারণ হচ্ছে, অবাধে বনভূমি উজাড় এবং বৃক্ষনিধন। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বৈশ্বিক বিষয় হলেও আমাদের মতো জনবহুল উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ মোকাবেলা সহজ নয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে মোট ভূমির ৩০.৪ শতাংশ বনভূমি। এই হার প্রত্যাশিত সর্বনি¤œ হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। পরিবেশবিদদের মতে, দেশে মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা জরুরি। সরকারি হিসেবে, বাংলাদেশে বিদ্যমান বনভূমির হার ১৫.৫৮ শতাংশ, যা প্রত্যাশিত সর্বনি¤œ হারের চেয়ে ১০ শতাংশ কম এবং বৈশ্বিক গড়ের প্রায় অর্ধেক। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশগত বাস্তবতা সামনে রেখে বাংলাদেশে বনভূমি ধ্বংসের নানাবিধ তৎপরতা চলছে। সুন্দরবন, গাজীপুরের শালবন, কক্সবাজারের সংরক্ষিত বন ও উপকূলীয় বনায়নসহ প্রতিটি বনভূমিতে একশ্রেণীর ভূমি ও বনদস্যু নির্বিচারে বন কেটে উজাড় করে ফেলছে। এতে জলবায়ুর পরিবর্তনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

প্রতিটি বনভূমি নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। বন উজাড় ও বনভূমি সঙ্কুচিত করা মানে প্রকৃতির বহুমুখী সম্পদকে রুদ্ধ করে দেয়া। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শেরপুরের গারো পাহাড়ের বনভূমি বিলুপ্তির বিপজ্জনক চিত্র উঠে এসেছে। একদশক আগেও যে পাহাড়ি বনভূমি ছিল তা এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ এ বন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারই নয়, বনজ সম্পদ এবং বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, ফল ও ওষুধি বৃক্ষের বিপুল উৎস। অথচ বনবিভাগের অসাধু কর্মচারি-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী ও বনখেকো, বনদস্যুদের বেপরোয়া দখলবাজির শিকার হয়ে এই পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ বনখেকো বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বনাঞ্চলের বড় অংশের মূল্যবান গাছ কেটে সেখানে শাল- সেগুনের জায়গায় পরিবেশ বিধ্বংসী বিদেশি ইউক্লিপটাস ও একাশিয়া গাছের আধিক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক বনায়ন ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদেশি গাছ রোপনের মাধ্যমে বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করা হলেও দেখার বা তদারকির যেন কেউ নেই। শুধু এই বনাঞ্চলই নয়, দেশের প্রতিটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উপর দখলবাজদের অবাধ দৌরাত্ম্য চলছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী হিসেবে সাবের হোসেন চৌধুরীর দায়িত্ব গ্রহণের পর বনভূমি রক্ষা এবং সুবজায়ন বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে ইতিবাচক ধ্যান-ধারণা ও সুদরপ্রসারি চিন্তার প্রতিফলন দেখা গেছে। দেশে বয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে তিনি পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীতে নগর বনায়ণের উদ্যোগের কথা বলেছেন। দৈনিক যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের সাথে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয় করে স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে চিহ্নিত স্থানগুলোতে নগর বনায়নের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবেন। এটি নি:সন্দেহে ভালো উদ্যোগ। নগর বনায়ন, এমনকি মরু সবুজায়নের ধারণা নিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো মরুভূমিতে সুবজায়ন ও অর্থকরি ফসল উৎপাদনেও সফল হয়েছে। তবে সারাদেশের সংরক্ষিত বনভূমি চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী, বনদস্যু ও বনখেকোদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নগর বনায়নের উদ্যোগ দেশের মানুষের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এরকম পকেট কর্মসূচি দিয়ে বৃক্ষায়ণ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। স্বাধীনতার পর হাজার হাজার কোটি টাকার গাছ লাগানো হয়েছে। তারপরও দেশের বনায়ন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি। বৃক্ষরোপন করলেই হয় না, এর পরিচর্যার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তা নাহলে, সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বনাঞ্চলের সাথে জীববৈচিত্র্য ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। দেশে দিন দিন বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এই জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। অনেক সময় বনের পশু আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে এসে পড়ছে। পাহাড়ি হাতি এমনকি সুন্দরবনের বাঘও বন ছেড়ে জনপদে চলে আসতে দেখা গেছে। বনদস্যুদের দৌরাত্মে শুধু বনই ধ্বংস হচ্ছে না, এর জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হওয়াসহ জলবায়ুর ভয়াবহ পরিবর্তন ঘটিয়ে দিচ্ছে। বন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইচ্ছা করলে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার বনাঞ্চল হেলিকপ্টারে ঘুরে দ্রুত সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। শুধুমাত্র নগর বনায়নের মধ্য দিয়ে উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সাবের হোসেন চৌধুরীর উদ্ভাবনী প্রতিভা, মেধা ও অভিজ্ঞতার প্রতি মানুষের আস্থা ও প্রত্যাশা রয়েছে। তার উদ্যোগ ও কথা যাতে ঢাকার দুই মেয়রের মতো কথার কথা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণ মানুষ কথা ও পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে চায়। যারা বন ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সুন্দরবন, গজারি বন, শেরপুরের পাহাড়ি বন এবং দক্ষিণের সংক্ষিত উপকূলীয় বনভূমি রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে, শিল্পায়ন- নগরায়নের নামে পরিবেশ বিনাশী অপৎপরতা বন্ধ করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শেরপুরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৬ মামলা: গ্রেপ্তার ৮১,অজ্ঞাতনামা ৬-৭ হাজার আসামী!

শেরপুরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৬ মামলা: গ্রেপ্তার ৮১,অজ্ঞাতনামা ৬-৭ হাজার আসামী!

প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন কেন সিন নদীতে গোলাপ ছুড়লেন আলজেরিয়ান অ্যাথলেটরা?

প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন কেন সিন নদীতে গোলাপ ছুড়লেন আলজেরিয়ান অ্যাথলেটরা?

লৌহজংয়ে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

লৌহজংয়ে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ মিললো পুকুরে

নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ মিললো পুকুরে

‘চরম তাপ মহামারি’ বিশ্বকে ভোগাচ্ছে: জাতিসংঘ মহাসচিব

‘চরম তাপ মহামারি’ বিশ্বকে ভোগাচ্ছে: জাতিসংঘ মহাসচিব

গভীর রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ অব্যাহত

গভীর রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ অব্যাহত

সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

নতুন নির্বাচনের দাবি ড. ইউনুসের

নতুন নির্বাচনের দাবি ড. ইউনুসের

মঙ্গলের লাল মাটিতে ‘হলুদ গুপ্তধনের’ সম্ভার! বিরাট আবিষ্কারে চাঞ্চল্য নাসায়

মঙ্গলের লাল মাটিতে ‘হলুদ গুপ্তধনের’ সম্ভার! বিরাট আবিষ্কারে চাঞ্চল্য নাসায়

পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় কারাকাস, করাচি, ইয়াঙ্গুন

পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় কারাকাস, করাচি, ইয়াঙ্গুন

বন্ধ ফেসবুকেই সক্রিয় প্রতিমন্ত্রী, জনমনে নানা প্রশ্ন

বন্ধ ফেসবুকেই সক্রিয় প্রতিমন্ত্রী, জনমনে নানা প্রশ্ন

আজ কোথায় কত ঘণ্টা শিথিল থাকবে কারফিউ?

আজ কোথায় কত ঘণ্টা শিথিল থাকবে কারফিউ?

বিয়ের বছর না ঘুরতেই বিস্ফোরক মন্তব্য পরিণীতির

বিয়ের বছর না ঘুরতেই বিস্ফোরক মন্তব্য পরিণীতির

রাশিয়ার পর এবার ইউক্রেনে যাচ্ছেন মোদি

রাশিয়ার পর এবার ইউক্রেনে যাচ্ছেন মোদি

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মেহজাবীনের ‘সাবা’

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মেহজাবীনের ‘সাবা’

আজও ঢাকাসহ ৪ জেলায় কারফিউ শিথিল ৯ ঘণ্টা

আজও ঢাকাসহ ৪ জেলায় কারফিউ শিথিল ৯ ঘণ্টা

মহাকাশে ‘বন্দি’ সুনীতা উইলিয়াম, ফেরা নিয়ে বড় আপডেট দিল নাসা

মহাকাশে ‘বন্দি’ সুনীতা উইলিয়াম, ফেরা নিয়ে বড় আপডেট দিল নাসা

আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নির্বাচনে কঙ্গনার জয়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা, নোটিশ পাঠালো হাইকোর্ট

নির্বাচনে কঙ্গনার জয়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা, নোটিশ পাঠালো হাইকোর্ট

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, পালিয়েছে হাজার হাজার মানুষ

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, পালিয়েছে হাজার হাজার মানুষ