ডলার সংকটে অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে
০৯ মে ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৯ এএম
ক্রমবর্ধমান ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা এবং বৈদেশিক ঋণের অব্যাহত চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে সরকার। এর ফলে বিগত প্রায় দেড় দশকে দেশের অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের পেছনে ব্যয়িত হাজার হাজার কোটি ডলারের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়ছে। একুশ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হলেও বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনালের পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই গত বছর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বিশ্বমানের নানা আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এভিয়েশন হাবে পরিণত হওয়া দূরের কথা বিমান ও পর্যটন সেবায় ন্যূনতম ইতিবাচক অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। ক্রমবর্ধমান ডলার সংকটের কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশি এয়ারলাইন্স এবং বিভিন্ন খাতে কর্মরত কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা ও পাওনা দেশে পাঠাতে না পারায় তা ক্রমশ এক জটিল স্থবিরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে কর্মরত বিমান যাত্রী ও বিদেশ গমনেচ্ছু লাখ লাখ কর্মী অতি উচ্চমূল্যে দেশ থেকে টিকিট কাটতে না পারায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ভারতে চলে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি, এভিয়েশনসহ অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রতিটি খাতেই ডলার সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এর অর্থনৈতিক সুবিধা ভারতের হাতে তুলে দেয়ার এক অদৃশ্য কারসাজি লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের পেছনে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে না, একইভাবে রেমিটেন্স যোদ্ধারাও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উন্নয়নে ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে না। অর্থনৈতিক মন্দা, বিনিয়োগের খরা এবং ক্রমবর্ধমান ডলার সংকটের ফলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্পর্কে যে পারসেপশন গড়ে ওঠার কথা আদতে তা হচ্ছে না। এখন মেগা প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। এই জটিল পরিস্থিতি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয়নি। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামো নির্মাণ, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের নামে রাষ্ট্রের বিপুল অংকের অর্থের অপচয় করা হয়েছে এবং হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বর্তমানে জরুরি পরিশোধযোগ্য ঋণ ও বকেয়ার পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে উল্লেখ করেন। ডলার সংকটের কারণে বিদেশি কোম্পানির পাওনা পরিশোধ করতে না পারা, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম আমদানি করতে না পারা এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ আমদানির ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যা একটি ক্রমবর্ধমান সংকটকে ঘনীভূত করে তুলেছে। প্রকল্প গ্রহণের আগে তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনেক দেরিতে হলেও এটি একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয় উপেক্ষিত হওয়া চলমান অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ।
ডলারের সংকট মোকাবেলায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার নতুন করে চীনের কাছ থেকে ৫ বিলিয়ন চীনা মুদ্রায় ৩৬ বিলিয়ন ইউয়ান (৫ বিলিয়ন ডলারের সমান) ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীনের সাথে বাণিজ্য বৈষম্য সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সে সময় চীন থেকে আমদানির পরিমাণ ২২.৯০ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ থেকে চীনে রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৭৭ মিলিয়ন বা ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাণিজ্য বৈষম্যের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। গতকাল ইংরেজি দৈনিক নিউএজে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পিডিবির বকেয়ার পরিমাণ ৩৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বকেয়ার মূল্য অর্ধেকের বেশি। এহেন এক জটিল পরিস্থিতিতেও অর্থনৈতিক উত্তরণের কোনো গাইডলাইন দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে শুধু লম্বা লম্বা কথা শোনা যাচ্ছে। নানা জল্পনা ডালপালা বিস্তার করে চলেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ কর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বদলে সবকিছু গোপন ও অন্ধকারে রাখার প্রবণতায় সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সাধারণ মানুষের অনাস্থা-অবিশ্বাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আমদানি ব্যয় মেটাতে ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি, রিজার্ভের সংকট এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্বচ্ছতা ও গোপনীয়তার নীতি ইত্যাদি বিষয়গুলো এক সুগভীর সংকটের আশঙ্কা বহন করছে। এ থেকে উত্তরণে সরকারকে স্বচ্ছ ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইপিএল: প্লে অফে কে কার মুখোমুখি
আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে