কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে
০৮ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে সকল ধরণের কোটা বাতিল করেছিল সরকার। ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে জারি করা সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতী-নাতনীদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল হচ্ছে। কোটা পুনর্বহালের এই রায়ের প্রতিবাদে এবং কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহ¯পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ ও সাধারণ ছাত্রসমাজের ব্যানারে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার দাবি জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে, রায় প্রদানের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আমলে নেননি হাইকোর্ট। তাই আদালতের এই রায়কে প্রত্যাখান করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরতদের বক্তব্য, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে নিঃসন্দেহে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে শিক্ষার্থীরা। তবে চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য মানা কষ্টদায়ক।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। এই ৫৩ বছরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দেয়া হয়েছে। তবে চাকরির ক্ষেত্রে তাদের সন্তান-সন্ততি, নাতী-নাতনীদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া এখন যৌক্তিক পর্যায়ে পড়ে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই যুক্তিতেই আন্দোলন করেছে এবং করছে। তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতার প্রেক্ষিতেই, ২০১৮ সালে সরকার সকল ধরনের কোটা বাতিল করেছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো ধরনের কোটা পদ্ধতি চাকরির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেধাবীদের চেয়ে কম মেধাবীরা সুযোগ পেয়ে থাকে। এতে কোনো প্রতিযোগিতা থাকে না। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে মেধাবীদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রশাসনে মেধাযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে, তা আর হয় না। একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কম মেধাবী যদি প্রতিযোগিতা না করে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ঐ পদটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মেধাবীদের যুক্ত করা প্রয়োজন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কোটা পদ্ধতির কারণে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এতে উন্নয়ন শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই দেশে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত এবং মেধাবী বেকার হয়ে আছে। কোথাও তাদের চাকরির সুযোগ হচ্ছে না। কোটা পদ্ধতি থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনের চাকরির তদবিরের কারণে বেকাররা বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ সংকটের কারণে বেসরকারি খাতেও চাকরির বাজার সংকুচিত। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মচারি ছাঁটাই করছে। চলমান বেকারের সাথে নতুন বেকার যুক্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক এই সংকটের অন্যতম কারণ প্রশাসন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ লোকের অভাব। দেশ এখন ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশের আভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৬.১৪ লাখ কোটি টাকা। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯৫ হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরে মোট ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করতে হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার ঋণ খেলাপির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত তিন মাসে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপ হয়েছে। অর্থনীতির এমন দুরবস্থা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন দক্ষ ও মেধাবী লোকবল। এর মধ্যে যদি কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে কম মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে প্রশাসনে মেধাযুক্ত হওয়া দূরে থাক, উল্টো তা মাথাভারি ও দুর্বল হবে। অর্থনীতি কখনো আবেগ দিয়ে চলে না। এর উন্নয়ন ও গতি ঠিক রাখতে নির্মোহ ও দক্ষ প্রশাসন প্রয়োজন। কোটা পদ্ধতি একটি আবেগের জায়গা। এই আবেগ দেশে যতদিন প্রয়োজন ছিল, ততদিন ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ আবেগ চিরকাল চলতে পারে না। এটি যেমন দেশকে মেধা থেকে বঞ্চিত করছে, তেমনি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। মেধাবী তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যত এবং উৎপাদন ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে, তা কখনোই কম মেধাবীদের নিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলে যে যুক্তি তুলে ধরছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
অর্থনীতিবিদরা জোর দিয়েই বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে মেধাবীদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতী-নাতনীদের কেউ কম মেধাবী হলেও কোটা পদ্ধতির কারণে সরাসরি চাকরি পাওয়া যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। তাদের উচিৎ, সাধারণ মেধাবীদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করা। বাবা-দাদা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় এমনিতেই চাকরি পাবে, এমন মনোভাব থেকে বের হয়ে আসা। একশটি পদের মধ্যে যদি ত্রিশটিই কোটায় যুক্ত হয় এবং তাতে অধিকাংশই কম মেধাবী হয়, তাহলে জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতার ঘাটতি থেকে যাবে। প্রশাসনকে দক্ষ, পেশাদার ও সক্ষম করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে। আমরা কোটা পদ্ধতি বাতিলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি এবং আন্দোলনকে পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করি। আশা করি, আদালত সার্বিক বিষয় পুনঃবিবেচনা করে যৌক্তিক, ন্যায়সঙ্গত ও সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

ওষুধের দাম কমাতে পদক্ষেপ ট্রাম্পের

চীনা বিমানের কাছে পরাস্ত রাফাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক ভারত

এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের

ফের বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ডলার ছাড়াল

মার্কিন-চীন বাণিজ্যের অবনতি রোধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে নেক্স গ্লোবাল

গাজা যুদ্ধ সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য নয় : জার্মানি

ইউরোপে বন্দি থেকেও ফিলিপাইনে জয়ী হতে যাচ্ছেন দুতার্তে

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা

ফ্যাসিস্ট এমপি মমতাজ বেগম গ্রেফতার

কোটচাঁদপুরে আম সংগ্রহ শুরু

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল: দক্ষিণাঞ্চল অচলের ঘোষণা

সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তিতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন

করিডোর নিয়ে গোটা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, বিপন্ন হতে পারে সার্বভৌমত্ব: দরকার জাতীয় ঐক্য

সিলেটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

মাগুরায় আওয়ামী লীগ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের শুকরানা মিছিল

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন বিরোধী প্রস্তাব বাতিল করতে হবে

জকিগঞ্জে আ. লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতা কারাগারে

জেপি মরগান পেমেন্টসের ‘ওয়্যার ৩৬৫’ চালু করলো ব্র্যাক ব্যাংক