রফতানির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
রফতানির প্রায় ৮৩ শতাংশ গার্মেন্ট খাত থেকে আসে। দেশে এটিই নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা জোগান দিয়ে আসছে। ওষুধ, পাটজাত পণ্য, চামড়া, চা, চিংড়ি, কৃষিজাত পণ্য ইত্যাদি কমবেশি রফতানি করা হয়। অন্যদিকে, রফতানির চেয়ে দেশে আমদানিই বেশি হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। তবে গার্মেন্ট রফতানিতে আমরা বিশ্বে শীর্ষ সারিতে রয়েছি। আমাদের গার্মেন্ট পণ্যের মান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে বিশ্বে চাহিদা বেশি। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ অর্ডার আমাদের দেশেই করা হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, গার্মেন্ট খাত নিয়ে বহু বছর ধরেই নানামুখী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলে আসছে। বিশেষ করে এ খাত ধ্বংস করে দেয়ার অপতৎপরতা বিগত স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার সময় ব্যাপক আকার ধারন করে। শ্রমিক অসন্তোষ, আন্দোলন, হত্যাসহ নানা চক্রান্তের মধ্য দিয়ে এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়। এতে অনেক সময় ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়া, অন্যদেশে চলে যাওয়া ইত্যাদি কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়। গার্মেন্ট খাত ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ষড়যন্ত্রের কথাও শোনা গেছে। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, টিফিন বিলসহ নানা দাবিতে এ খাতে শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসী ও পতিত স্বৈরাচারের দোসররা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলার অপচেষ্টা করে। সরকার দক্ষতার সাথে তা মোকাবেলা করে খাতটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে।
গার্মেন্ট খাত স্থিতিশীল হওয়ায় রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানির আশা করছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছু সহযোগিতা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, ব্যাংকের ঋণ প্রাপ্তি, এলসি খোলা ও শিপমেন্টের জটিলতা নিরসন। বরাবরই প্রয়োজনীয় এ সুবিধাগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটছে। কারখানা মালিকদের জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিমানে পাঠাতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। অর্ডার বাতিলও হয়ে যায়। এসব সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে পোশাক শিল্পে রফতানির পরিমান অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এতে নতুন নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে বিভিন্ন এক্সেসরিজের ছোট ছোট কারখানাও গড়ে উঠবে। এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় এ খাতটি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও সুবিধা কমে যায়। ফলে শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ শ্রমিক ও কর্মচারি-কর্মকর্তা নিয়োজিত। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা চালু ও নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে কর্মসংস্থানের হার দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় গার্মেন্ট খাতের আরও অধিক সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর ইংগিত পাওয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে পোশাক কেনার বিদ্যমান দেশসহ নতুন দেশগুলো আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। বিজিএমইএকে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। শুধু পোশাক খাতই নয়, আমাদেরকে ওষুধ, পাট, চা, চিংড়ি, চামড়া, কৃষিজাত পণ্যসহ অন্যান্য যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এতে আমাদের রফতানি আয় দেড়শ’ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। এজন্য পণ্যের রফতানির বাজার সম্প্রসারিত করতে হবে। রফতানির নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে।
পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে লুটপাটের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি পুনর্গঠন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্বখ্যাত একজন ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় দেশ, জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অঢেল আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এ প্রেক্ষিতে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অন্যান্য যত ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দ্রুত নিরসন করতে হবে। ব্যবসা সহজীকরণ করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ, ব্যাংক ঋণ, এলসি, শিপমেন্ট জটিলতা দূর করতে হবে। রফতানিমুখী যেসব শিল্প গ্রুপ রয়েছে, সেগুলোর পণ্য উৎপাদন ও রফতানি অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা দেখেছি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তার দালালি করা কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কর্মরত অনেক লোকবল ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছে। আমাদের কথা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের মালিকের অপরাধে প্রতিষ্ঠানকে স্থবির বা অচল হতে দেয়া যাবে না। প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলতে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠান সচল রেখে সমাধান করতে হবে। দেশজুড়ে এখন কর্মপ্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে অর্থনীতি মজবুত ও জনজীবন স্বাচ্চন্দ্যপূর্ণ হয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?
হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি
বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪
এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম
বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ
জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা
সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর
গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত
প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি
নোয়াখালীতে গাছের ঢাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু
প্রেসিডেন্ট অপসারণ: ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত’
ডিএমপিতে যুক্ত হচ্ছে ভারতের মাহিন্দ্রা গাড়ি
অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
গাজী ছিলেন একজন আপোষহীন সাংবাদিক নেতা - সিকৃবি ভিসি ড. মো. আলিমুল ইসলাম
মারাত্মক শব্দদূষণ
তারেক রহমানের ঐতিহাসিক দায়
দলে গণতন্ত্র চর্চা অপরিহার্য
বিএনপি এখন সংশোধিত -জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি
আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা