জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান ও বাংলাদেশ
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আমরা এখন এমন এক স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখি- এক সময় যে বাংলাদেশ নিয়ে সব চেয়ে বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল দেশ হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। আজ সেই নতুন স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারুণ্যের আইকন তারেক রহমান, যাকে নিয়ে কিছু বলার পূর্বে দুটো ঐতিহাসিক বিপ্লবের কথা বলতে হবে। একটি বিপ্লব ও স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের ‘We revolt’ ধ্বনির মাধ্যমে এবং অন্য একটি বিপ্লব শুরু হয়েছিল তারেক রহমানের ‘ঞধশব নধপশ ইধহমষধফবংয’ শ্লোগানের মাধ্যমে। ডব ৎবাড়ষঃ ধ্বনিতে আমরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হাত থেকে ফেরত নিয়েছি। আর ‘Take back Bangladesh’ আওয়াজে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জুলুম থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে এবং অন্য কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রভূত্ব থেকেও রক্ষা পেয়েছে। আমরা ৭১-এ বাংলাদেশকে পাকিস্তান মুক্ত করেছি এবং ২৪-এ আবার মুক্তি পেয়েছে শেখ হাসিনার ‘দেশ বিক্রি’ নামক ষড়যন্ত্রের করাল গ্রাস থেকে।
২০২৪ এর এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের পেছনে দেশনায়ক তারেক রহমানের Effective and Efficient contributions বলার পূর্বে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কিছু বলতে চাই। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ১০ বছরে আমাদের দেশের পা চাটা কতিপয় জেনারেলকে দেখেছি, কীভাবে শেখ হাসিনার তাবেদারী করেছে। যে মহান ব্যক্তি বর্তমান সেনাবাহিনীকে ৭টি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আধুনিক রূপ দিয়েছিলেন, বিশ্বের দরবারে শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন, সেই মহান ব্যক্তিকে যথাযোগ্য সম্মান তো দূরের কথা, উল্টো তার সহধর্মিনী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাসভবন থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে উচ্ছেদ করার দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখেছেন এবং কেউ কেউ উচ্ছেদ অভিযানে অংশগ্রহণ করতেও লজ্জিত হন নাই। তাদের অনুকরণ ও অনুসরণ করার কথা ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমানকে এবং তার জাতীয়তাবাদের আদর্শকে, অথচ তা ভুলে গিয়ে তারা চাটুকারিতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে মুখে মুখে মুজিব বন্দনা গেয়ে গেছেন। তাতেও আপত্তি নেই। তবে যখন দেখেছি একদিকে অতি মাত্রার মুজিব বন্দনা এবং অন্যদিকে জিয়াউর রহমানকে খাটো করে দেখার নোংরা পরিকল্পনা করা হয়েছে, তখন আর মেনে নিতে পারিনি। অথচ, এরা জানেই না, মুক্তিযুদ্ধ মানে ‘We revolt’ ডাক দেয়া তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের সাহসিকতার কথাই সবচেয়ে বড় অনুপ্ররণা হওয়ার কথা ছিল। কারণ, তিনি ব্যর্থ হলে তাকে পাক আর্মি হত্যা করতো মুজিবকে নয়। অথচ, তার মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার ভয় ও ঝুঁকি কোনটাই ছিল না। এই পার্থক্যটুকু কতজন বুঝেন? কার জীবনের ঝুঁকি বেশি ছিল? কে বেশি সাহস দেখিয়েছিল? শেখ মুজিবকে অধিক সম্মান দেখাতে গিয়ে যারা জিয়াউর রহমানকে খাটো করে এতোদিন কটুক্তি করেছেন তাদের জন্যেই আজকে আমার এই কথা।
যারা এতোদিন আজেবাজে কথা বলেছেন তারা কি জানেন জিয়াউর রহমানের যোগ্যতা কী? তারা হয়ত জানেনই না যে জিয়াউর রহমান এমন একজন বাংলাদেশি, যিনি ভারতবর্ষের সেই ব্রিটিশ আমলের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হেয়ার স্কুল থেকে অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমানই প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি যিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির প্লাটুন কমান্ডার বা অফিসার ক্যাডেটদের প্রশিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন এবং জিয়াউর রহমানই একমাত্র বাংলাদেশি সেনা অফিসার, যিনি ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তানের সর্বোচ্চ গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ড (হিলাল-ই-জুরাত) পেয়েছিলেন। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ (জীবিতদের জন্য) গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ড ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন।
অনেকেই জানেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তিনি কতগুলো যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, তা কি কেউ জানেন? তার সমান সংখ্যক যুদ্ধ অন্য আর কেউ করে নাই, তা কি কেউ জানেন বা কাউকে বলতে শুনেছেন? মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ ও ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান বিখ্যাত সব যুদ্ধের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা করেছিলেন। কামালপুরের প্রথম যুদ্ধ, বিলোনিয়ার যুদ্ধ, নকশী বিওপির যুদ্ধ, বাহাদুরাবাদ যুদ্ধ, দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ, চিলমারী উভচর অভিযান, হাজীপাড়া, ছোটখাল, গোয়াইনঘাট, টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলাই চা-বাগান, ধামাই চা-বাগান, জকিগঞ্জ, আলি-ময়দান, এমসি কলেজের যুদ্ধ, ভানুগাছ যুদ্ধ, কানাইঘাট যুদ্ধ, বয়মপুর যুদ্ধ, ফুলতলা চা-বাগান যুদ্ধসহ অসংখ্য যুদ্ধ মেজর জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশ ও পরিকল্পনায় হয়েছিল।
শেখ মুজিবর রহমানের বিশাল হৃদয়ের গল্প যারা বলেন তাদের চোখে কি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেয়া যে কত বড় বিশাল হৃদয়ের পরিচয় ছিল সেই বিশালতা চোখে পড়ে? যেখানে শেখ মুজিব বাকশালের নামে গণতন্ত্র হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেখানে জিয়াউর রহমান ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ চর্চার রাস্তা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ রক্ষা করেছিলেন। অথচ, এই কথা জেনেও কেউ বলে না এবং তাঁরা কখনও জিয়াউর রহমানের সেই বিশালতার বর্ণনা দেন না।
আফসোস, জিয়াউর রহমান একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি রিজিওনাল পলিটিক্স ছাড়িয়ে যখনই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতে শুরু করলেন তখনই তা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার প্রতিষ্ঠা দেশের জনগণের জন্য কত বড় গর্বের বিষয় তা কোনো দিন কেউ জানারও চেষ্টা করেনি। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য জিয়াউর রহমান পদে পদে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
একইভাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমানের জন্যেও ২০২৪-এর বিপ্লবে অংশগ্রহণ অনেক বড় ঝুঁকি ছিল, যা অন্য কারোরই ছিল না। যদি কোনো কারণে এই বিপ্লব ব্যর্থ হতো তাহলে, এই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে আবার পুনর্গঠিত করা কত বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তা কি কেউ জানেন? আবার নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা বা তৈরি করা কি এতো সহজ ছিল? মোটেও না। দলের কতজন নেতাকর্মীর কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং তাদের সর্বক্ষণ খেয়াল রাখা, তাদের উদ্বুদ্ধ করে আবার মাঠে নামানো কোনো সাধারণ কাজ নয়। নুরুল হক নুরু, ব্যারিস্টার ফুয়াদ, রাশেদ, তারেকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সমন্বয়ক থেকে শুরু তরে এমন কোনো পর্যায় নেই, যেখানে তারেক রহমানের সরাসরি সহযোগিতা ছিল না। একবার ব্যর্থ হলে এতোগুলো নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা কি সহজ কিছু ছিল? মোটেও না। তারপরে এদের প্রত্যেকের পেছনে ছায়ার মতো ছাত্রদলকে থাকতে কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা কি কেউ জানেন? আজ সাফল্যে তারেক রহমানের নাম উচ্চারিত না হলেও বিপ্লব ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার দায় কার উপর চাপানো হতো একবার ভাবুন। তাই বলছি, যার যত বেশি ঝুঁকি থাকবে তাকে তত বেশি ক্রেডিট দিতে হবে। তারেক রহমানই হচ্ছেন একমাত্র বিরল নেতা, যিনি ১০,০০০ মাইল দূর থেকে ১৮ কোটি জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন গত ১৫টি বছর ধরে। তারেক রহমান তার পিতার মতোই উদার, তাই তিনি শেখ হাসিনার মতো প্রতিশোধ পরায়ণ নন। তাই, তারেক রহমানকে যারা অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছে তাদের নিয়ে এখনও তিনি কোনো প্রতিশোধ তো দূরের কথা একটি নেতিবাচক শব্দও উচ্চারণ করেন নাই।
গত আওয়ামী শাসনামলে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পেয়েছি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কতটা নোংরা ও অশ্রদ্ধামূলক মন্তব্য করা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এবং তার ঘোষণাপত্র পাঠ নিয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে; কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন মহান সেক্টর কমান্ডার, তার রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে হলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে বা মহান মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাকে অসম্মান করা কাম্য নয়। যুদ্ধ দিনের শুরুর দিকে একজন সেনা অফিসারের পক্ষে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া শুধু কঠিন নয়, অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোনভাবে যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো, তবে যেসব সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিক স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, বিদ্রোহের অপরাধে তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো এবং তাদের কবরের পাশে তাদের নামের সাথে বেঈমান কথাটা যুক্ত করা হতো। এমন অনেক পারিপার্শ্বিক চাপ মাথায় নিয়ে জিয়াউর রহমান মহান মুক্তি সংগ্রামে যে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তার মূল্যায়ন না করা হলে জাতি হিসেবে আমরা ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে থাকব।
লেখক: রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদক থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে কোরআন ও হাদিসের সঠিক শিক্ষা সন্তানদের দিতে হবে -ধর্ম উপদেষ্টা
উৎপাদনে ২১১৩ পোশাক কারখানা, বন্ধ ৬টি
হাবের বার্ষিক সাধারণ সভা চেম্বারকোর্টে স্থগিত
লগি বৈঠার তান্ডবকারীদের বিচার দাবীতে পঞ্চগড়ে গণ অবস্থান
বিশেষ অভিযান জোরদার করার নির্দেশ আইজিপির
‘সংবিধানের দোহাই দিয়ে অযথা সময়ক্ষেপন করবেন না'
বগুড়ায় সাবেক এমপি রিপুর দেহরক্ষী নিঝুম জনতার হাতে আটক।। পরে পুলিশে সোপর্দ
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারি কারিকুলামে ইসলামী শিক্ষা
সঠিক অবস্থানেই আছে বিএনপি
প্রকাশ্যে এলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির
ইসরাইলে ট্রাক হামলায় হতাহত ৪১
সুদানে আবারো আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত ১২০
ধিক্কারের মুখে বক্তৃতা থামাতে বাধ্য হলেন নেতানিয়াহু
আগামী ২ নভেম্বর ঢাকায় আলা হযরত কনফারেন্স
তাইওয়ানে বিলিয়ন ডলার মূল্যে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি, চীনের হুঁশিয়ারি
ইউরোপজুড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে মুসলিমরা
ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ উ.কোরিয়ার, নিশ্চুপ সিউল
নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের সমাবেশে অশোভন ও বর্ণবাদী মন্তব্য
গণভবন জাদুঘরে ‘আয়নাঘরের রেপ্লিকা’ রাখার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
লালমোহনে ৫২ জেলে আটক। জেল-জরিমানা, জাল-মাছ-ট্রলার জব্দ