দেশনায়ক তারেক রহমানের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম
আমাদের দেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল আছে তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র নীতি-আদর্শের কারণে জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। রাজনৈতিক দল আসলে জাতির জন্য একটি সুস্থ পরিস্থিতি তৈরি করে। এটি মানুষকে আরও উন্নত এবং কার্যকর জীবনের স্বপ্ন দেখায় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সুযোগ করে দেয়। রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক ভূমিকা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং নীতি ঠিক করা। তাই, প্রতিটি দলই তাদের নীতির গুরুত্ব জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে। এদিক থেকে বিএনপি বাংলাদেশের জনগণকে গত সাড়ে ১৫ বছর যাবৎ গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা এবং খুনি শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের স্বরূপ বোঝাতে সক্রিয়তা দেখিয়েছে। কারণ একটি রাজনৈতিক দল হল এমন একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে জনগণ সরকারের সাথে কথা বলতে পারে এবং যেকোনো দেশের শাসন ব্যবস্থায় বক্তব্য রাখতে পারে।
রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে যা এখন ¯পষ্ট। ক্ষমতায় আসীন অথবা ক্ষমতার বাইরে রাজনৈতিক মাঠে বিএনপির সাড়ে চার দশকের রাজনীতির সারকথা হলো- জনগণের আনুগত্য অর্জন করা। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি দ্যা প্রিন্স গ্রন্থে লিখেছেন,শাসনক্ষমতার বৈধতা কোনো নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়, কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে সেই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূল নীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা গ্রহণ আর প্রয়োগের নীতি। ম্যাকিয়াভেলির এই তাত্ত্বিক কথায় বিশ্বাসী নয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। কারণ রাজনীতিতে নৈতিকতাকে গুরুত্ব দিতেই হবে এবং নৈতিকতা না থাকলে স্বৈরাচার হাসিনার মতো গুম-খুনের ইতিহাস রাজনীতিকে কলঙ্কিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে নীতিশাসিত রাজনীতিতে বিশ্বাসী দেশনায়ক তারেক রহমানের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ১৪ সেপ্টেম্বর (২০২৪) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার দল বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের নীতিগুলো প্রচার ও সমুন্নত রাখার কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বজনীন মূল্যবোধ, যা জনগণের স্বাধীন ভাব প্রকাশ ও বাধাহীন চিন্তা প্রকাশের স্বীকৃতি প্রদান করে। আমরা এ ধরনের একটি নিরাপদ, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ, যা রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে।’ বলাবাহুল্য, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নীতিতে বিশ্বাসী নেতৃবর্গ বিএনপির কা-ারি। একারণে রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে দেশনায়কের মুখে।
২.
বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি ভিশন-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। সেখানে বৈদেশিক নীতি অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, অন্য কোনো দেশের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করবে না। একই ধারায় বিএনপি অঙ্গীকার করে যে, অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের বন্ধু নেই, প্রভু নেই। বৈদেশিক স¤পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিএনপি বিশেষ স¤পর্ক গড়ে তুলবে। (প্রথম আলো, ২৩ এপ্রিল ২০১৭)।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খুনি শেখ হাসিনার দুঃশাসন ও স্বৈরাচারের ঝাকিতে সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে শপথ নিতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের লক্ষ্য একটি সহনশীল, মানবিক, শান্তিপ্রিয়, জনগণের কল্যাণমুখী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারচালিত গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে সকল ধর্ম ও জাতিসত্তার মানুষের অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং তাদের চিন্তা, আশা ও আকাক্সক্ষাকে সমুন্নত রাখা। অন্যদিকে দলের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নে দেশনায়ক তারেক রহমানের অভিনিবেশসহ বক্তব্য-বিবৃতি জনগণকে অগ্রসর বাংলাদেশ গড়ায় উদ্দীপিত করে চলেছে।
পত্রিকান্তরে গণঅভ্যুত্থানের বিশ্ব-পরিস্থিতি ও বিএনপি শিরোনামে নিউজে বলা হচ্ছে, ৫ আগস্টের পরে বেশ দ্রুততার সাথে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়াকে মুক্তির আদেশে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতা জেল থেকে দ্রুত ছাড়া পান। অনেকেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য বিবৃতি শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রচার করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের এখন আর পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে না। এসব কিছু বিএনপিকে তাৎক্ষণিকভাবে রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলকে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে তুলনা করেছে বিএনপি। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতন ও ভারতে পালিয়ে যাবার পরে বিএনপির দেয়া ফ্যাসিবাদ তকমা অনেকেই ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
বিশ্ব-পরিস্থিতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হেজিমনি কঠিনভাবে এর শেকড় বিস্তৃত করছে। রাষ্ট্র নিজেও কখনো কখনো নিজে হেজিমনিক হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হেজিমনি যে ধরন ও অবয়ব নিয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে, তা জাতিরাষ্ট্রের মধ্যে এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স¤পর্কের অসমমিতিক আন্তঃনির্ভরতা কিংবা একটি জাতির মধ্যে সামাজিক শ্রেণিগুলোর পার্থক্যগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু হেজিমনি সামাজিক ক্ষমতার চেয়ে বেশি; এটা ক্ষমতা অর্জন ও বজায় রাখার একটি পদ্ধতি। বিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে রাষ্ট্রের হেজিমনি বেশি দৃশ্যমান। নিপীড়ন-সহিংসতা-নির্যাতন ও শোষণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে হেজিমনিক স¤পর্কগুলো। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের যোগাযোগ তৈরিতে এই হেজিমনিক বিষয়টিও সামনে আসে। যেমন, শেখ মুজিবের আমলে (১৯৭২-আগস্ট ১৯৭৫) ভারতমুখী নীতির কারণে দেশবরেণ্য নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশ-ভারত স¤পর্কের ক্ষেত্রে বলেছিলেন, পি-ি থেকে মুক্ত হয়েছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। হেজিমনিক রাষ্ট্রের বাস্তবতা এখানে প্রকাশ পেয়েছে।
সেসময় থেকে ভারত এদেশের একটি পার্টির সঙ্গে সুস¤পর্ক রেখে চলেছে। দেশ ও জনতার আকাক্সক্ষাকে পাত্তা দেয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেস বা বিজিপির স¤পর্কের কারণে উপেক্ষিত হয়েছে এদেশের গণ-আকাক্সক্ষা। ভারত যে অসঙ্গতি সৃষ্টি করেছে তা ছিল ভূরাজনৈতিক স্বার্থে জড়িত। ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ এবং ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী জাতিরাষ্ট্র হলেও ভারত বিভিন্ন জাতির সমষ্টিগত দেশ। ১৯৭১ পরবর্তী ফারাক্কা বাঁধ, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা, চট্টগ্রামে পাহাড়ি অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদিদের মদদদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য দূরত্ব থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত স¤পর্ক সার্বিক দিক দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। দুটি দেশই একই সাথে সার্ক, বিমসটেক, আইওরা এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাঙালিদের বসবাস। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে পুনর্নির্মাণ যুগের সূচনা হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত স¤পর্কের মধ্যে নয়, বরং জনশক্তি রপ্তানি, ওআইসি জোটের সঙ্গে সুস¤পর্ক তৈরি করে গেছেন। কাজের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের স¤পর্কের সূত্রপাত করেন তিনি। ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি পাঠানোর কাজ ব্যাপকতা পায় তাঁর আমলে। মূলত রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁকে অগ্রগণ্য কূটনৈতিক শাসকে পরিণত করেছিল।
৩.
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জাতীয়তাবাদী ধারায় শহীদ জিয়ার সেই স¤পর্ককে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে। ভারতের কাছে নতজানু না হয়ে তিনি দেশকে আত্মশক্তিতে গৌরবান্বিত করে তোলেন। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে এলে তিনি দেখা করেননি। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎটি আমি বাতিল করেছিলাম। কারণ, আমার জীবনের প্রতি হুমকি ছিল। আমার যদি কিছু হয়ে যেত (সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার পথে), তাহলে সে জন্য জামায়াতকে দোষী করার পরিকল্পনা ছিল প্রতিপক্ষের।’ (প্রথম আলো, ১৪ জুন, ২০১৫)
অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পরে বিষয়টিকে অন্যরকমভাবে ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সবসময়ই বলেছেন, ভারত আমাদের ভালো বন্ধু। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরেও ভারতবিরোধী কথা বলেননি খালেদা জিয়া। তবে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিও ছিল না তাঁর। ফলে খালেদা জিয়ার আমলে বৈদেশিক নীতি ভালো অবস্থায় পৌঁছায়। কিন্তু গ্রিক মিথের একিলিস হিলের মতো চীনের সঙ্গে একটি ঘটনার কারণে ভালো স¤পর্কের অবনতি ঘটে। বিশেষ করে, ২০০৪ সালে ঢাকায় তাইওয়ানের একটি কনস্যুলেট অফিস খোলা হয়েছিলো। সেই ঘটনায় বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার কাছে তীব্র আপত্তি তোলা হয়। বেইজিংয়ের চাপে সেই কনস্যুলেট অফিস পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর চীন বিএনপিকে শত্রু ভাবা শুরু করে; অবিশ্বাস তৈরি হয় দুদেশের স¤পর্কের মধ্যে। ফলে চীন এবং ভারত একযোগে আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। অবশ্য ধীরে ধীরে এই অভিযোগ কাটিয়ে উঠেছে বিএনপি। প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক স¤পর্কের ভেতর থাকতে হবে পার¯পরিক বিনিময়। কেবল বাণিজ্যিক নয়, সেখানে জরুরি হলো সংস্কৃতি-ভাষা-শিল্প-সাহিত্যের বিনিময়। ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্য-ইতিহাসকে কেন্দ্র করে একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সুন্দর হৃদ্যতা তৈরি কেবল বাণিজ্যিক কাজের ভেতর কিংবা একে অপরকে সমর্থন দিয়ে শেষ হলে চলবে না। থাকতে হবে আরো কূটনৈতিক কলা-কৌশল।
খালেদা জিয়ার আমলে (২০০১-২০০৬) দলের আন্তর্জাতিক কমিটির দায়িত্বে থাকা সিনিয়র নেতারা বৈদেশিক স¤পর্ক তৈরির চেষ্টাতে অনেক সময় ব্যয় করেও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন। কারণ, জটিল বিশ্ব পরিস্থিতি মানুষে মানুষে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। ফলে ২০২৪ সালে এসে তার ফল ভোগ করতে হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক হেজিমনি তৈরিতে ব্যর্থতার কারণে কিছুটা নির্ভর করতে হয়েছে দেশের বাইরে থাকা অ্যাক্টিভিস্টদের উপর। অবশ্য মনে রাখা দরকার, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার, দৈনিক আমার দেশের স¤পাদক মাহমুদুর রহমান, মুসফিক ফজল আনসারী, গণ-অভ্যুত্থানের বিপ্লবী বীর পিনাকী ভট্টাচার্য, তাজ হাসমী, কনক সরোয়ার, ইলিয়াস হোসেন খুনি শেখ হাসিনার স্বরূপ উন্মোচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, কিন্তু তারাই যে বিএনপির আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এটা ঠিক নয়। যদিও গত কয়েক বছরে দেশে-বিদেশে উল্লিখিত ব্যক্তিসহ অন্যরা দিন-তারিখ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন কখন হাসিনা সরকারের পতন হবে, বিএনপির কারা কী দায়িত্ব পাবেন, আমেরিকা কী কী করবে এমন নানাকিছু। আর তাদের কথায় প্রেরণা পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক জিয়ার নেতৃত্বে নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছে। শেষ পর্যন্ত খুনি হাসিনার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে ছেড়েছে বিএনপির মাঠের নেতারা।
একথা ঠিক, অনলাইন ব্যক্তিত্বরা মতামত তৈরিতে সদা সজাগ থাকায়, আমেরিকাসহ বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম অঙ্গনে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট আচরণের স্বরূপ তুলে ধরা সহজ হয়। খুনি শেখ হাসিনার অধীনে সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা গেছে তাদের বৈশ্বিক প্রচারণায় হেজিমনি সৃষ্টির কারণেই। অন্যদিকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি ভালো কিছু করার চেষ্টায় সবসময়ই তৎপর ছিলেন। কিন্তু বিএনপির সিনিয়র নেতারা আন্তর্জাতিক কমিটিতে থাকার পরও জায়গা মতো রোল প্লে করতে পারেননি। ফলে চীনকে দলের পক্ষে রাখতে ব্যর্থ হন। আগেই বলেছি, অতীতে তাইওয়ানের কারণে চীন বিরূপ আচরণ করেছে। অথচ, চীনের সঙ্গে শহীদ জিয়া ঘনিষ্ঠ স¤পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। শহীদ জিয়ার বৈদেশিক নীতির কারণে চীনসহ পৃথিবীর অনেক দেশই বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্র ভেবেছে। অন্যদিকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির নেতারা অনেকটা সময় নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক স¤পর্ককে হেলদি করতে হলে মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে দলের যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিবেশীসহ সকল দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গে নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ ও দৃঢ় স¤পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে দলের যোগাযোগ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। নিজের একক প্রচেষ্টায় তিনি দেশ-বিদেশের আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সুস¤পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। নিজের অবস্থান থেকে দলের জন্য আমেরিকা-ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে দলের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করে তুলেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের স¤পর্ক পুনর্নির্মাণ করেছেন তিনি। বিশেষত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে শেখ হাসিনা যে খারাপ আচরণ করেন তাতে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়। সেসময় তারেক জিয়া আন্তর্জাতিক স¤পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে দলকে বিশ্বে তুলে ধরেছেন। জনগণকে একত্রিত করার কৃতিত্ব দেশনায়কের। নিজের দলকে বন্ধনে অটুট রাখা, ধরে রাখা এবং বিশ্বে নিজেদের উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করা পুরোটাই তাঁর অবদান।
উল্লেখ্য, চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারপর আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। তারা দুজনেই এ কমিটিতে নতুন। দলের একাধিক নেতা মনে করেন, আবদুল মঈন খান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। তার পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ ওই দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নজরুল ইসলাম খান বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আবার তিনি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ড্রাফট তৈরিতে দলের মধ্যে তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ২০১৯ সালের কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নতুন কমিটিতে তৃতীয় নম্বরে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে চীনের বৈরি স¤পর্ক থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সুস¤পর্ক রয়েছে। তবে আগের কমিটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে ভারতের ভালো যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। (চলবে)
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসিকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি: হাছান মাহমুদ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে দলের কোনো নেতা-কর্মীকে ছাড় দেওয়া হবে না : যুবদল সভাপতি
ঢাকা মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি শাজাহান খান
আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন কাল
ব্র্যাক ব্যাংকের ৩০,০০০ কোটি টাকার রিটেইল ডিপোজিট মাইলফলক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় জোর দিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পরামর্শ
ব্রাহ্মণপাড়ায় জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
কুয়াকাটায় দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কলারোয়ায় হাজার হাজার ছাগলের মৃত্যু
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ
শিয়ালের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ৯
লোহাগাড়ায় ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বন্দরগুলোর অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
ধামরাইয়ে পুলিশ ক্যাম্পে ঝুলছে তালা
ভোগান্তির আরেক নাম আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
যশোরে বিএনপি নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ
যশোর শহরজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড়