দেশনায়ক তারেক রহমানের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এভাবে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যোগ্য নেতাদের কিংবা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, একসময় জিয়াউর রহমান মেধাবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে এনে রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত করতেন। বামপন্থী বা অন্য ঘরানার ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া ও কাজ করিয়ে নেওয়ার যে মানসিকতা শহীদ জিয়ার ছিল তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের জন্য খুঁজে খুঁজে দলের ভেতর থেকে মেধাবীদের দায়িত্ব দেওয়া, মেধা হান্টিংয়ের এই প্রসেস আবার শুরু করতে হবে। দলকে টিকিয়ে রাখতে হলে, সমন্বয় যেমন দরকার, তেমনি দরকার যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্যতম জায়গায় দায়িত্ব দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া।
৪.
বিএনপির রাজনীতি ও বৈদেশিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে কথা বলতেই হবে। সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন-ভারত বৈরিতা। বিশেষ করে, দুই দেশই লাদাখ সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। লাদাখ সীমান্তের দুই পাশেই যেমন মোতায়েনকৃত সৈন্যের সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে হালকা, মাঝারি ও ভারী যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং যুদ্ধবিমানের উপস্থিতিও। সব মিলিয়ে বলা চলে, অঞ্চলটিতে এখন এক ধরনের যুদ্ধকালীন আবহ তৈরি হয়েছে। দুই দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা যখন একে অন্যকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নানা উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে চলেছেন, ঠিক সে মুহূর্তে নয়াদিল্লির শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে বেইজিং। চীনও ভারত থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর ভূরাজনৈতিক কারণে আধিপত্য বিস্তার ও শক্তির মহড়া প্রকাশের তাড়না যতই থাকুক না কেন, বাণিজ্যিক কারণে বড় দেশগুলো পরস্পর স্বার্থ হাসিলে তৎপর। বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেই ১৫ সেপ্টেম্বর (২০২৪) বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিনিধি দল এসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের নব উদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়াকে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করবে। এ লক্ষ্যে শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স¤পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে তাদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে তাদের স¤পৃক্ততার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশের উন্নয়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
অনন্য ভূগোলের কারণেই চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব। হাইপোথিসিসড ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ কৌশল এবং ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড’ গঠনে চীনের সাথে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ একটি প্রধান প্রার্থী। চীনের কাছে পশ্চিমাবিশ্ব ও ভারত প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এই স¤পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সাথে বৃহত্তর স¤পর্ক গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ শুরু করেছে চীন। এশিয়ার ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক সুবিধা থাকায় বাংলাদেশের অবস্থানকে বদলে দিয়েছে। এই ভূরাজনৈতিক মূল্য বজায় রাখার জন্য, বাংলাদেশকে একটি জটিল, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে। দুটি প্রধান পক্ষের মধ্যে অনুকূল এবং ভারসাম্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক স¤পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একটি হচ্ছে চীন এবং অন্যটি কোয়াডÑ দেশগুলি, যথা ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু ভারতের সঙ্গে নতজানু নীতি পরিহার করে চীনের সঙ্গে স¤পর্ক ভালো করা আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন। কেবল জনগণ কিংবা ব্যবসায়ী লেবেলে নয় কূটনৈতিক স¤পর্ক হবে গ্রিক মিথ প্রমিথিউসের মতো, যিনি আলো ছড়িয়েছিলেন মানুষের জন্য। কূটনৈতিক স¤পর্ককে আলো ছড়াতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে তিস্তা নদীটির দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনা অর্থায়নে সমীক্ষা হয়, যেখানে প্রকল্পের মোট বাজেট ধরা হয় ৯৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয় চীন সরকার। কিন্তু স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা চীন নয়, ভারতকে এই মহাপ্রকল্পের কাজ দিতে চেয়েছিলেন। এখন বিএনপির উচিত চীনের চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া। এর ফলে পার¯পরিক বন্ধুত্ব দৃঢ় হবে এবং চীনও বিএনপিকে পছন্দ করা শুরু করবে।
আসল কথা হলো, বিএনপি পররাষ্ট্রনীতিতে কারো মুখাপেক্ষী থাকবে না। শত্রুকে মিত্র বানানোর চেষ্টা থাকবে। আওয়াজ তুলে বলতে হবে, ন্যায়সংগত আচরণ প্রত্যাশিত ভারতের কাছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কোনো বন্ধু রাষ্ট্র নেই। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব এজন্য সমঝোতার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। ভারতের শত্রু চীন, পাকিস্তান। ভারতের উচিত জনগণের মানসিকতাকে রিড করা। এদেশে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। সেসময় ভারত শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছে, যা ছিল সত্যিই দুঃখজনক, বন্ধুত্ব বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ঠ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সংযোগকারী। তাই, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সংস্থা (আসিয়ান) এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর বিশাল বাণিজ্য ব্লকগুলির মধ্যে যে কোনও আঞ্চলিক সমন্বয়ে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ দেশটি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক মিত্রও, এতে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং মধ্য ভারতের মধ্যে বৃহত্তর একীকরণের সুবিধার সম্ভাবনা রয়েছে। আঞ্চলিক একীকরণকে এগিয়ে নিতে এবং সমস্ত প্রতিবেশী অঞ্চলকে একত্রে সমৃদ্ধির সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে অনন্যভাবে উপযুক্ত।
৫.
সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে দেশনায়ক তারেক রহমান জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে সামনে এনেছেন। তাঁর প্রতি আস্থা ছিল বলেই ২০২৪ সালের নির্বাচন বিএনপি ও অন্যান্য দল বর্জন করে। মনে রাখতে হবে, খালেদা জিয়া কিংবা দেশনায়কের অনুপস্থিতিতে বিএনপি দল হিসেবে ভেঙে যায়নি। দল ঠিক রাখার কৃতিত্ব তারেক জিয়ার। ইতোমধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক স¤পর্ক নিয়ে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিশ্বনেতাদের চেতনায় প্রভাব ফেলেছে। জনগণ কী চায়, তাদের পালস কী, তারই স্বাক্ষ্য তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি। উল্লেখ্য, তিনি ২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ধীরে ধীরে বিএনপির পুনর্গঠনে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে, যখন তাঁর মা, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে বন্দি হন, তখন তাঁকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়। এরপর থেকে তিনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। দেশনায়কের নির্দেশনায় ২৮ অক্টোবর (২০২৩) নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। কূটনীতিকদের দেওয়া চিঠিতে বিএনপি অভিযোগ করে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুলিশের সহায়তায় তাদের মহাসমাবেশে হামলার প্ররোচনা দিয়েছে, হত্যা করেছে নেতাদের। বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সকল জাতীয় উন্নয়নের কেন্দ্র-পর্যায় জনগণই দখল করে আছে। জনগণের মেধা, প্রচেষ্টা, উদ্যম ও উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করলে সেই বাধা উপড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমানের বিচক্ষণতা এবং ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনার বিপক্ষে সর্বসাধারণের সেন্টিমেন্টই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে সহায়ক শক্তি হিসেবে উদ্বুদ্ধ করেছে। বিএনপি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ জনপ্রিয় সংগঠন। তাদের রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজপথে আন্দোলনের যথাযথ অভিজ্ঞতা। আর দেশনায়ক তারেক রহমানের কারণে বর্তমান বিশ্বে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন জনগণের সংগঠন হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। (সমাপ্ত)
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মার্কিন নির্বাচন বুঝতে যে ১২টি বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় প্রার্থী লড়ছেন মার্কিন নির্বাচনে
নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল জানা যাবে কখন?
রাজধানীতে পুলিশের বিশেষ চেকপোস্ট কার্যক্রম শুরু
নিরাপত্তা তথ্য ফাঁসের দায়ে নেতানিয়াহু’র শীর্ষ চার কর্মকর্তা গ্রেফতার
ডাস্টবিনে মিলল মানুষের খণ্ডিত পা
যশোরে স্কুল ছাত্রীর হাত পা ও মুখ বাধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার
জাল ফেললেই ওঠছে প্রচুর ইলিশ
ট্রাম্প না কমলা, কে পাবেন মুসলিম ভোট?
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন ‘অস্থিতিশীল উপস্থিতি’: ইরান
‘গণপিটুনিতে’ সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ভাগনে নিহত
বিকেলে সিদ্ধান্ত এলপি গ্যাসের দাম কমবে না বাড়বে
ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল
বেরোবিতে ফের ছয় যুগল আটক
রাত পোহালে ৫ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ফের গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত
পঞ্চগড়ে যুবদলের কর্মীসভায় ককটেল বিস্ফোরণ
যশোরে আলাদা অভিযানে মাদক দ্রব্যসহ ৪ জন আটক
শাকিব-পূজার প্রেমের গুঞ্জনে মুখ খুললো পূজা চেরি
নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও