আমরা বিএনপির রাজনৈতিক পরিপক্বতার প্রশংসা করি
০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এসব ঘটনা ভুল বার্তা দিচ্ছে দেশের মানুষের কাছে এবং বিদেশে। ধৈর্য-সহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং সন্ত্রাস-সহিংসতা পরিহার করা যখন সবচেয়ে জুরুরি, তখন এসব ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থির ও বিচলিত করছে। তার কাজ ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় অফিসে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং খুলনার অফিসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ওই ধরনের কাজের অংশ, যা এ মুহূর্তে ঘটার সঙ্গত কোনো কারণ নেই। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টার সঙ্গে এটা তুলনীয়। এর কোনো দরকারই ছিল না। ছাত্র জনতার নামধারী যে অংশটি এর সঙ্গে জড়িত, তারা চরম অসহিষ্ণুতা ও হিংসাত্মক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। সত্য বটে, পতিত স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জাপা ভূমিকা পালন করেছে। বিনা ভোট, রাতে ভোট ও ডামি ভোটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা অংশ নিয়ে স্বৈরাচারকে স্থায়ী করতে সহযোগিতা করেছে। আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর যত অন্যায়-অপরাধ করেছে, তার অংশবিশেষের দায় জাপা এড়িয়ে যেতে পারে না। ছাত্র-জনতার দুর্বার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। জাপা কার্যত একা হয়ে গেছে। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ইতোমধ্যে সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার। সেইসঙ্গে দাবি তোলা হয়েছে জাপা নিষিদ্ধ করারও। এখানে স্মরণ করা দরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদি যে ভূমিকা রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে হামলা-হত্যার যে অভিযোগ রয়েছে, জাপার বিরুদ্ধে তা নেই। জাপা আন্দোলনে হুমকি ছিল না। গণঅভ্যুত্থানের পরও হুমকি বলে প্রতীয়মান হয়নি। এমতাবস্থায়, তার অফিসে হামলা-ভাংচুর ও নিষিদ্ধের দাবি কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ-উর-রহমান প্রশ্ন করেছেন, জাতীয় পার্টি কি গণঅভ্যুত্থানের শত্রু? তার মতে, মোটেই নয়। ফলে, এ ধরনের হামলা জাতীয় পার্টিকে নয়, গণঅভ্যুত্থানেরই ক্ষতি করছে। এর মধ্যে শক্তি প্রদর্শন বা হ্যাডম প্রকাশের একটা প্রবণতা আছে বলেই মনে হয়। তার এ অভিমতের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এখনো তিন মাস পূর্ণ হয়নি। দেশ জুড়ে যে সমস্যা-সংকট সৃষ্টি করে গেছে পতিত, বিতাড়িত স্বৈরাচার, তার সংখ্যা-সীমা নেই। এর সঙ্গে নতুন নতুন সমস্যা-সংকটও তৈরি হচ্ছে। এসব সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, পতিত স্বৈরাচার ও তার সহায়তাকারী ভারতের মোদি সরকার একের পর এক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। হাসিনা-মোদি শুরু থেকেই অতি মোক্ষম বিবেচনায় সংখ্যালঘু কার্ড খেলছে। সেই কার্ড এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতেও উঠে গেছে। তিনিও তা ইচ্ছেমত খেলছেন। এর পেছনে নাকি হাসিনা পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভাড়া করা লবিস্ট ফার্মের ভূমিকা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। ভারতীয় বয়ানই তিনি উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি মোটেও হেলাফেলার নয়। ওদিকে ক’দিন আগে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ বা অপসারণ নিয়ে শোর উঠেছিল। দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় দল বিএনপির বিরোধিতায় বিষয়টির অবসান ঘটেছে। সেদিন রাজধানীর মিরপুরে তথাকথিত গার্মেন্টকর্মীরা যে কা- ঘটিয়েছে, তা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক, তাতে সন্দেহ নেই। গার্মেন্টকেন্দ্রিক বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা যখন লাগাতার চলছে, তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা গণঅভ্যুত্থানের ভাবমর্যাদা ও জাতীয় প্রত্যাশা ব্যাহত করবে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কর্মকা- বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল। পরে অবশ্য এ আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ মূহূর্তে দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা খুবই দরকার। অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, এমন কিছু করা উচিত হবে না। এ বিষয়টি দল হিসেবে বিএনপি যত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে, অন্য কোনো দল বা পক্ষ সেভাবে করেনি। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ও অপসারণের বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল যুক্তিপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। আওয়ামীসহ ১১ দল বা জাপা নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে তার অবস্থান দূরদর্শী ও দ্ব্যর্থহীন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। এ প্রসঙ্গে আরো যে কথাটি তিনি উল্লেখ করেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, যেটা কোনো ইস্যু নয়, সে ইস্যু সামনে এনে নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। উল্লেখ করা জরুরি, নন ইস্যুকে ইস্যু বানানো থেকে সকলকে সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। কোন সময় কী বলা উচিত, কী করা উচিত সেটা বুঝতে পারা বিচক্ষণতার লক্ষণ।
ছাত্ররা দেশের গৌরব, দেশের সম্পদ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা ও অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশের সর্বস্তরের মানুষ বিশ্বাস করে তাদের আপসহীন অবস্থান এবং আত্মত্যাগ এই অসাধ্য সাধন সম্ভবপর করে তুলেছে। দেশ গড়ার, তাতে প্রকাশ্য অংশগ্রহণ করার অপার আগ্রহ তাদের মধ্যে রয়েছে। এ আকাক্সক্ষা পূরণে তাদের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। ভুল মানুষের স্বভাবের বাইরে নয়। ভুল তাদেরও হতে পারে। ভুল হলে তা স্বীকার করা মহতের লক্ষণ। গর্ব ও অহংকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। এটা আমাদের ছাত্র-তরুণদের সব সময় মনে রাখতে হবে। স্বৈরাচারের পতন ও বিদায়ের পর দেশের সংস্কার ও পুনর্গঠনের কাজ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ কাজ এগিয়ে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সরকারের দায়িত্ব। এই সঙ্গে শান্তি-শৃংখলা সুরক্ষা, জননিরাপত্তা বজায় রাখা, সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন যোগান, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থাও সরকারকে করতে হবে। স্বীকার করতেই হবে, অন্তর্বর্তী সরকার বিপুল আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগের দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন, রফতানি, কর্মসংস্থান কোনোটিই বাড়বে না। বেকারের সংখ্যা আরো স্ফীত হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজন। কোনো কারণে বা ভুলের জন্য রাজনৈতিক স্থিতি নষ্ট হলে দেশের সমূহ ক্ষতি হবে। আশার কথা এটুকু যে, বিএনপির মতো বৃহত্তম দল অত্যন্ত সজাগ ও তৎপর রয়েছে। আর্থ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দলটি বদ্ধপরিকর। তাদের কথা ও কাজের মধ্যে তার প্রমাণ রয়েছে। আমরা কামনা করি, অন্যান্য দল ও শক্তি তাকে অনুসরণ করবে। মনে বাখতে হবে, দেশ যদি অরাজক, অস্থিতিশীল হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দেশ-বিদেশের যত সমর্থনই থাক, ড. ইউনূসের যত জনপ্রিয়তাই থাক, কোনো কিছুই কাজে আসবে না। হাসিনা-মোদির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। অন্যদিকে দেশের শান্তি-শৃংখলা ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণ করতে হবে, এর বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কান্নায় রয়েছে যেসব উপকারিতা
জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংগঠন ‘ইউএনআরডাব্লিউএ' এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসরাইল
দিনাজপুরের খানসামায় ১১ বছর আগের চাঁদাবাজি ও বিএনপি'র কার্যালয় ভাংচুরের মামলা
চাঁদপুরে ডিম ছাড়ার পর ইলিশের গবেষণা
নিষেধাজ্ঞা শেষ পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরায় ব্যস্ত জেলেরা
বগুড়ায় ২০ টাকায় পঁচা পেয়াজ কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি, কেজিতে লাভ ৬০ টাকা
আন্দোলনে বিরোধীতা ও ছাত্রলীগের পক্ষ নেয়ায় জবি শিক্ষককে অবাঞ্চিত ঘোষণা
ইরানের স্যাটেলাইট ‘কোসর ও হুদহুদ’ উৎক্ষেপন করবে রাশিয়া
মৃত্যুর আগে ৭২ ঘন্টা কিছুই খাননি হামাস নেতা সিনওয়ার
যানজটমুক্ত কক্সবাজার শহর গড়তে জেলা পুলিশ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ড্রাইভারদের
ইসিকে সরকারের ৯ সতর্কতা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার বাংলা ব্যালট পেপার সংযুক্ত
কী কারণে স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকে ৫৮৯ জনের চাকরিচ্যুতি
গর্ভবতী না হয়েও মাতৃত্বকালীন ভাতা নিচ্ছেন নারী ইউপি সদস্য
মন্দিরে ‘এসি’র পানি ‘চরণামৃত’ ভেবে পান করছেন ভক্তরা!
সঞ্চয়পত্র থেকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিল সরকার
‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ, যা বলছেন নেটিজেনরা
'মিডিয়ায় মাফিয়া তাপসের উত্থান এবং হেরেমখান বৃত্তান্ত'
স্কুল-কলেজে নতুন ফি নির্ধারণ করল সরকার
ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন মার্কিন পডকাস্টার জো রোগান