জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র : ‘বিপ্লবীরা বিনয়ী হলে গণশত্রুরা বিধ্বংসী হয়ে ওঠে’
০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি বেকায়দায় পড়ে ভারতীয়দের দেশভাগের আন্দোলন মেনে নিয়ে সাতচল্লিশের দেশভাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন মানচিত্র পেয়েছিলাম। বাঙ্গালীত্ব, মুসলমানিত্ব ও পাঞ্জাবি-পাঠানিদের ভ্রান্ত জাত্যাভিমান এবং নীতিগত বিশৃঙ্খলার কারণে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। ফলে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দ্বিতীয়বার একটি পতাকা লাভ করেছিলাম। তবে এই স্বাধীনতাও শুরুতেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পরাজিত পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো প্রতিনিধিকে উপস্থিত হতে না দেয়া ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানির হেলিকপ্টারকে সিলেট থেকে ঢাকা আসতে দেয়া হয়নি। ভারতীয় বাহিনী মাত্র এক সপ্তাহ যুদ্ধ করেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তানি বাহিনীতে থাকা পাঞ্জাবি সেনাকমান্ডাররা নিজেদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া করে বিজয়কে ভারতের হাতে ছেড়ে দিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ হাসিল করেছিল। বাহাত্তর সালে সিমলা চুক্তির মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা লাভ করেছিল। ভাষা আন্দোলন, ঊণসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনসহ পূর্ব বাংলার মানুষের তেইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম যেন ভারতীয় আধিপত্যবাদের মধ্যে হারিয়ে গেল। শুধুমাত্র পাকিস্তানের প্রতি নস্টালজিক আবেগ ও ইসলাপন্থীদের আত্মপরিচয়ের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে দাবিয়ে রাখতে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই চেতনার মূল লক্ষ্য জাতির মুক্তি কিংবা বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা নয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কয়েকটি ইসলামিক রাজনৈতিক দলের বিরোধিতাকে পুঁজি করে এদেশের সংস্কৃতি থেকে ইসলামিক আত্মপরিচয়ের চেতনাকে মুছে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক হেজিমনি চাপিয়ে দেয়ার সাথে সাথে এ দেশের মানুষ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে হরণ ও লুন্ঠন করে ভারতে চালান করে দেয়াই ছিল সে চেতনা ও হেজিমনির টার্গেট। স্বাধীনতাত্তোর অপ্রস্তুত বাংলাদেশের শূন্যতার উপর ভর করে এদেশের নতুন সংবিধান থেকে শুরু করে আমলাতন্ত্র, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে ভারতীয় আধিপত্যবাদ চেপে বসেছিল। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছিল। যেখানে কোনো দেশপ্রেমিক মুসলমানের স্থান ছিল না। মাওলানা ভাসানির মত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত করা কিংবা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অ্যাসাসিনেশন প্লট সৃষ্টি করা হলেও এরশাদকে ৯ বছর ক্ষমতায় রাখা, আমলাতান্ত্রিক অস্থিরতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার শাসনকালকে জটিল ও দূরুহ করে তোলার পর র’য়ের তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং প্রাপ্ত ভারতের পুতুল-ক্রীড়নক শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করে শত শত বিলিয়ন ডলারের লুটপাট করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে শত বছরের জন্য নস্যাৎ করে দেয়ার ভারতীয় হেজিমনিক গেমপ্ল্যান ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। ‘ম্যান পজেস গড ডিসপোজেস’ সত্যিই ¯্রষ্টার পরিকল্পনা আরো অনেক বেশি নিখুঁত। ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির নি:শর্ত সমর্থনপুষ্ট শেখ হাসিনা দেশের মানুষের চেয়ে ভারতীয় নির্দেশনার অন্ধ অনুসারি ও আজ্ঞাবহ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে নিজের দলটিকে জনবিচ্ছিন্ন করে পতনের অনিবার্য ঘেরাটোপে নিক্ষেপ করেছিলেন। তিনি একটি উন্মত্ত বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে প্রধানমন্ত্রীত্বের অনৈতিক দাপট দেখিয়ে গুম-খুন, গণহত্যা, রাজকোষ লুন্ঠন ও রাষ্ট্রধ্বংসের প্রান্তসীমায় এসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে বুলেটে গর্জনে দাবিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে রক্তাক্ত হাত এবং দানবীয় চেহারা নিয়ে দিল্লিতে পালিয়ে গেলেন।
চব্বিশের গণঅভুত্থান এ দেশের মানুষের ৭৭ বছরের বঞ্চনা ও প্রবঞ্চনার ধারাবাহিকতায় শেষ ১৬ বছর ধরে ভারতীয় আধিপত্যবাদী নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান বা গণবিপ্লব কোনো পলিটিক্যাল ইজমভিত্তিক রাজনৈতিক বিপ্লব নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কিউবান বিপ্লব, লিবিয়ায় গাদ্দাফির সবুজ বিপ্লব কিংবা ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সাথে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকে তুলনা করা চলে না। তবে গত দশকে তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থানের সাথে বাংলাদেশে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের যথেষ্ট সাজুয্য দেখা যায়। লেনিন, ক্যাস্ত্রো, গাদ্দাফি, খোমেনির মত এই অভ্যুত্থানে একক কোনো কেন্দ্রিয় নেতা ছিল না। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এসে হাজার হাজার বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে এই বিপ্লব সংঘটিত করেছে। কয়েক মিলিয়ন মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কিংবা প্রতিরোধের নৈতিক বৈধতা দেশের কোনো বাহিনীর ছিল না। বিশেষত সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক স্পিরিটের প্রতি সম্মান জানিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল। দেশ থেকে ভারতীয় তাবেদার গণহত্যাকারি স্বৈরাচার হটিয়ে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কায়েম করাই এই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য। কোনো বিশেষ ইজমের ভিত্তিতে নয়, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য ও গণপ্রতিরোধই হচ্ছে এই বিপ্লবের ভিত্তি। এ দেশে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তিই হচ্ছে জনগণের বৈষম্য, জাতীয় প্রশ্নে অনৈক্য, বিভাজন এবং ডিস্ট্যাবিলাইজেশন। ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী স্বৈরাচারবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি এবং অর্ন্তবর্তী সরকারকে অকার্যকর ও ব্যর্থ করে দেয়ার ধারাবাহিক অপতৎপরতার মধ্য দিয়ে বিপ্লব ব্যর্থ করার নানা আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষত দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সংস্কার প্রশ্নে অনীহা, নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়া, অর্ন্তবর্তী সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতার বদলে নানা ইস্যুতে প্রশ্নবিদ্ধ করার মহরত দেখে মনে হতে পারে, তারা যেন তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দিতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিপ্লববিরোধী ও স্বৈরাচারের দোসররা একের পর এক ধ্বংসাত্মক নাশকতা ঘটিয়ে সরকারকে দুর্বল ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে চাইছে। ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনই যখন এই সরকারের ভিত্তি, তখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বিভক্তি ও পরস্পরবিরোধী আচরণ জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর একটি উদ্ধৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘বিপ্লবীরা বিনয়ী হলে গণশত্রুরা বিধ্বংসী হয়ে ওঠে’। একটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ক্ষমা যেথা হীন দুর্বলতা, হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে।’ হ্যাঁ, ক্ষমার দৃষ্টিভঙ্গি এখন বড় ধৃষ্টতায় পরিনত হতে চলেছে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের নতুন প্রজন্ম যখন পুরনো সব ব্যর্থতার ধুলো-ময়লা ঝেরে ফেলে একটি নতুন আধুনিক বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে, তখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, যারা গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দ্বারা চরম নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তারা পুরনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতেই যেন বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভারতের এজেন্ট আর পতিত, ঘৃণিত, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দোসররা অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইছে। সংবিধান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার পথ রুদ্ধ করে তারা কোনো রকমে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরনো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক বন্দোবস্ত সুরক্ষিত রাখতে এতদিন ধরে জেল-জুলুমের শিকার রাজনৈতিক নেতারা যেন ভারত ও পতিত স্বৈরাচারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমে পড়েছেন। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রবাসে থেকেও দেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং নতুন প্রজন্মের আকাক্সক্ষা ও সম্ভাবনাকে যথাযথভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন বলে মনে হয়। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আগে এবং পড়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, তা যথার্থভাবেই ছাত্র-জনতার আকক্সক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ নির্বাচন ও অন্য একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল নিয়ে যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তা মোটেই কাম্য নয়। তাদের এহেন আচরণ সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। ঝড়বৃষ্টি হলেই বোঝা যায়, ঘরের চালের কোথায় ছিদ্র আছে, কোথা দিয়ে পানি পড়ে কাঁথা-বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে। দেড় দশক ধরে হাজার হাজার মানুষ গুম-খুনের শিকার হওয়ার পর ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে দুইজারের বেশি প্রাণের বিনিময়ে খুনি স্বৈরাচার হটিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের উপর রাষ্ট্র মেরামতের গুঢ় দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তখন কতিপয় নেতার কণ্ঠে বিভাজনের সুর মুক্তিকামী জনতাকে বিচলিত করে তুলেছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীনতাত্তোর ৫৩ বছর এবং এর শেষ ১৬ বছর বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদী আগ্রাসন, শোষণ-নিপীড়ন ও রাষ্ট্র ধ্বংসের মূল হাতিয়ার ছিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যকার রাজনৈতিক বিভাজনকে এন্টাগনিজম ও নির্মূলের রাজনীতিতে পরিনত করা। পতিত স্বৈরাচার কি পালিয়ে গিয়ে পাচার করা হাজার হাজার কোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনা, পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার, শাপলা চত্বর হত্যাকা-ের তদন্ত ও বিচার, অসংখ্য গুম-খুনের বিচার থেকে নিস্তার পেয়ে যাবে? প্রফেসর ইউনূস যদি ব্যর্থ হন, দেশে আতাঁতের রাজনীতি ফিরে আসবে। দেশ লুণ্ঠণ করা হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ম্যানেজ হয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুর্নবাসনের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবে, এসব আশঙ্কা অমূলক বা ভিত্তিহীন নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মোটা অর্থের বিনিময়ে নিপীড়ক আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীদের বিচারের সম্মুখীন করার বদলে পুর্নবাসনের বন্দোবস্ত করার বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার বাণিজ্য ও বিচারহীনতা সবচেয়ে খারাপ সামাজিক- রাজনৈতিক ব্যাধি।
পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে তার সাঙ্গপাঙ্গরা বলেছিল, তারা ক্ষমতাচ্যুত হলে একরাতেই কয়েক লাখ নেতাকর্মী হত্যার শিকার হবে। কেউ কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালাতে পারবে না, এটাও প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিল। তারা নিজেদের অপরাধ ও পাপের পরিমাপ করেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে রাজপথে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার নির্দেশ দাতা শেখ হাসিনার লেসপেন্সার ও লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বিপদে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার পরও তাদের অনেকের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই! তারা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ও শেখ পরিবারের পুর্নবাসনের স্বপ্ন দেখছে। ভুল স্বীকার করে বা ক্ষমা চেয়ে নয়, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে তারা বিপ্লব ব্যর্থ করে দেয়ার নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এমন আস্ফালনের জন্য বিএনপি-জামায়াতের আপসকামিতা বা নমনীয়তা এবং অর্ন্তবর্তী সরকারের ভেতরে ঢুকে পড়া কথিত ভারতীয় এজেন্টদের দায়ী করা যায়। আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সাথে জামায়াত নেতার আপসমূলক উক্তিটি ছিল অনেক বড় ভুল। এরপর থেকে ওদের আস্ফালন দেখে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সেই উক্তিটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটতে দেখা যাচ্ছে, ‘বিপ্লবীরা বিনয়ী হলে গণশত্রুরা বিধ্বংসী হয়ে ওঠে’। ফ্যাসিবাদী সংবিধান পরিবর্তনের প্রশ্ন, প্রেসিডেন্টের অপসারণ, প্রশাসনিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের প্রশ্নের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট জড়িত। সচিবালয়ে অগ্নিকা-ের ঘটনা স্পষ্টতই নাশকতা। ওরা এখনো আমাদের রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়ে হলেও ভারতীয় আধিপত্য অক্ষুণœ রাখতে চায়। ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছিল। হাজার হাজার আলেম-ওলামাকে গুম-খুন, গণগ্রেফতার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তার বিশ্বস্ত আমলাদের লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্তের জন্য নথিপত্র চাওয়ার তিনদিনের মধ্যে সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ভবন ও মন্ত্রনালয়ে তফতরগুলোতে আগুন লাগিয়ে ভস্ম করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হাসিনার পৃষ্ঠপোষক ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট শেখ হাসিনার পতনকে বাংলাদেশের উপর তার আধিপত্যবাদী নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যাওয়া হিসেবে দেখেই বসে থাকেনি। তারা অর্ন্তবর্তী সরকারের উপর জনগণের অর্পিত দায়িত্ব ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করছে। ৫ আগস্টের পর থেকে একের পর এক সংখ্যালঘু কার্ড, বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীদের দিয়ে দাবিদাওয়ার নামে নানারকম ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতাকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা অতন্দ্র প্রহরীর মত ব্যর্থ করে দিয়েছে। ভারতীয় এজেন্টদের সবচেয়ে বড় ভিত্তি সম্ভবত আমলাতন্ত্রের ভেতরে লুকিয়ে আছে। এটিকে এখন আঞ্চলিক-আর্ন্তজাতির সা¤্রাজ্যবাদের সফ্ট পাওয়ার বলা যায়।
ইসলামোফোবিক এজেন্ডায় পশ্চিমা ভূরাজনৈতিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের হিসেব-নিকেশে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা বাংলাদেশের উপর আধিপত্যকে একটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের দোসরদের বিচার ও সংস্কারের বিরুদ্ধে ভারতীয় আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র ও নাশকতামূলক তৎপরতা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে একটি সাংষ্কৃতিক-রাজনৈতিক বিপ্লবে পরিনত করতে বাধ্য করছে। বিপ্লবী ছাত্র-জনতার কণ্ঠে জুলাই বিপ্লবের যে আনুষ্ঠানিক ইশতেহার বা প্রোক্ল্যামেশনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, তা শুধু গত ১৬ বছর বা ৫৩ বছরের অমিমাংসিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইস্যুকেই ধারন করছে না, তারা এখন এই বাংলার আড়াইশ’ বছরের বঞ্চনার ইতিহাসকে মনে রেখে নতুন রাজনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলতে শুরু করেছে। পলাশির প্রান্তর থেকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলাদেশের শত্রুমিত্র চিহ্নিত হয়ে গেছে। এটি কোনো দেশ বা ডগমা নয়। একটি আধিপত্যবাদী নীতিকে ধারণ করে থাকা বর্ণবাদী গোষ্ঠির আগ্রাসী মানসিকতা এবং তাদের সাথে প্রকাশ্য ও গোপণে জড়িত ব্যক্তিরা হিন্দু, খৃষ্টান বা মুসলমান নয়। তারা রবার্ট ক্লাইভ, উমিচাঁদ, রায়দূলর্ভ, ঘষেটি বেগম ও মীরজাফরদের চক্র। শত শত বছর ধরে তারা সক্রিয় আছে এবং থাকবে। জনগনের স্বরাজ কায়েমের প্রধান প্রতিপক্ষ কাসিমবাজার কুঠিটি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিভক্তি ও ষড়যন্ত্রের দেয়াল এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। জনগণ এখন নির্মোহ-নিরপেক্ষ শ্রেষ্ঠ বিচারক। অতএব ভণিতা করে আর কেউ পার পাবে না। ছাত্র-জনতা এবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাবেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাঈমুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ১৬৩টি, জমা ৩৮৬ কোটি
সবার ঐক্যমতে দ্রুতই হবে ডাকসু নির্বাচন : ঢাবি ভিসি
ডলার বেচাকেনায় ব্যবধান ১ টাকার বেশি নয়
আবুবকর সরকার সভাপতি তুহিন হোসেন সাধারণ সম্পাদক
পীর ইয়ামেনী মসজিদের ইমাম মাওলানা এমদাদুলের ইন্তেকাল
খতমে নবুওয়ত না মানলে ঈমান থাকবে না
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে দ্রুত নির্বাচন দিন
পান্থকুঞ্জে গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ
রেলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি সতর্কতা
ডায়াবেটিস রোগীদের নিরাপদে রোজা রাখার উপায় জানালো এসিইডিবি
রাজনীতিতে অশুভ বিভাজনের পদধ্বনির আভাস পাওয়া যাচ্ছে
২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলাম মঙ্গলবার
ঢাবি আইবিএ’র বিবিএ প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
দিন-দুপুরে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে স্বর্ণের দোকানে চুরি
হাসিনাকে নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন সোহেল তাজ
সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে ঝগড়া বন্ধ করুন: মজিবুর রহমান মঞ্জু
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে
পাঠ্যবইয়ে হান্নান-সেজানের সাহসিকতার গল্প
সিলেট সীমান্তে ১ বছরে ৭ বাংলাদেশিকে হত্যা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হল হাফ ম্যারাথন