হাসিনা আমলের ইসলামবিরোধী পাঠ্যক্রম

Daily Inqilab ড. মো. কামরুজ্জামান

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

৭১১ সালে মুহম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে উপমহাদেশে মক্তব ও মসজিদভিত্তিক শিক্ষার গোড়া পত্তন ঘটে। এ সময় থেকেই এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ধারা সৃষ্টি হয়। আর এ শিক্ষাব্যবস্থা সুগঠিত রূপ পায় সুলতানি আমলে (১২১০-১২৭৬)। এ আমলে প্রতিটি ধনী ব্যক্তির বাড়ির সামনে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়। মক্তবে আরবি ও ফার্সি পাঠ দান করার পাশাপাশি হস্তলিপিও শেখানো হতো। হিন্দু শিশুরাও এসব মক্তবে পড়াশোনা করতো। বাংলার শাসকগণ প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার বিষয়েও অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।

১২৭৮ সালে শারফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (রহ.) সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি মাদরাসা। প্রতিষ্ঠিত এ মাদরাসাটি ছিল বাংলার সবচেয়ে বড়ো মাদরাসা। এসময় মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল আরবি, নাহু, সরফ, বালাগাত, মানতিক, কালাম, তাসাউফ, সাহিত্য, ফিকাহ, দর্শন ইত্যাদি। মোগল আমলে (১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সালে) বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এ পাঠ্যসূচির সাথে সংযুক্তি ঘটে। জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, কৃষি, লোকপ্রশাসন, চারুকলা ইত্যাদি জ্ঞানের এ শাখাগুলো মাদরাসাশিক্ষার সাথে সংযুক্ত হয়। এভাবেই প্রাচীনকালে মাদরাসাশিক্ষার মাধ্যমে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার সোনালি অধ্যায়েরর শুরু হয়। আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষার এক চমৎকার সমন্বয় ঘটে শিক্ষাব্যবস্থায়।

কিন্তু (১৭৫৭-১৯৪৭) পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর থেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাদরাসাশিক্ষার পথ সংকুচিত হতে থাকে। শুরু হয় ইংরেজ শাসন। এসময় ইংরেজরা মাদরাসার নামে বরাদ্দকৃত জমি বাজেয়াপ্ত করতে থাকে। তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে ৮০ হাজার মাদরাসার মধ্যে ৭৮ মাদরাসাই বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা ব্যবস্থা সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর শিক্ষাকে টেকসই করতে গঠন করা হয় কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। একটি মুসলিম দেশের আকীদা ও বিশ্বাসকে বাইপাস করে প্রণীত হয় এ কমিশন। শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বিদায় করতেই এ কমিশনটি গঠন করা হয়। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের পর দেশে আরো ৬টি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয় শেখ হাসিনার আমলে ২০১০ সালে। দেশে ইসলামী শিক্ষা বলতে মোটামুটি যা অবশিষ্ট ছিল তাতে সর্বশেষ পেরেক মারেন শেখ হাসিনা। ভারতের দাসী চরম সেক্যুলার শেখ হাসিনার ঘোমটার আড়ালে ছিল চরম ইসলামবিদ্বেষ। তাঁর শাসনামলে ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হয় ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে। এ শিক্ষাক্রমে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলামী শিক্ষার সমাধি রচনা করেন শেখ হাসিনা। বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শাখা থেকে ইসলামী শিক্ষাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। মানবিক শাখায় ইসলামী শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়। এখনও পর্যন্ত এ শিক্ষাটি কলেজগুলোতে অবহেলিত শিক্ষা হিসেবেই পড়ে আছে। এতে কলেজের ইসলামী শিক্ষার শিক্ষকগণ ঐচ্ছিক বিষয়ের একজন গুরুত্বহীন শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন। অন্যদিকে এ বিষয়ের শিক্ষার্থীসংখ্যাও আস্তে আস্তে লোপ পেতে পেতে তলানীতে গিয়ে থেমেছে। অথচ, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষেও কলেজগুলোতে মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসায়Ñ সকল শাখার শিক্ষার্থীগণ ইসলামী শিক্ষাকে আবশ্যিক সাবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করতো।

খাতা কলমে দেশে শিক্ষার হার বেশি দেখানো হলেও শেখ হাসিনা সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিল হাসিনা সরকার। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা নতুন কিছুই অর্জন করতে পারেনি। ইউনেস্কো কর্তৃক শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৫.৫ শতাংশ বরাদ্দের পরামর্শ থাকলেও শেখ হাসিনা সরকার দিয়েছিল মাত্র ১.৭৬ শতাংশ! প্রতিনিয়ত কারিকুলাম পরিবর্তনের মাধ্যমে এ খাতের বাজেটের অপব্যবহার করেছিল হাসিনার সাঙ্গপাঙ্গরা। মুখে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বললেও তার প্রণীত শিক্ষা কারিকুলামে বিজ্ঞানকে চরমভাবে সংকোচন করা হয়েছিল।

ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত জীবনজীবিকা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, শিল্পসংস্কৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তির নামে চারটা বিষয়কে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অথচ, ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রি ও বায়োলজি মিলিয়ে একটা মিক্সার রাখা হয়েছিল। এর বাইরে বিজ্ঞান শেখার আর কোনো অপশন ছিল না। এই কারিকুলামের কারণে বৈশ্বিক মানদ-ে পেশাভিত্তিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশ আজ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকার ধর্ম শিক্ষাকে চূড়ান্তভাবে উপেক্ষা করে শিক্ষানীতি চালু করেছিলেন। মাধ্যামিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষা থেকে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা আমলের ইসলামবিরোধী পাঠ্যক্রমের কয়েকটি উদাহরণ নি¤েœ পেশ করা হলো:

১. ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টু ডে’ বইয়ের ২য় পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের পরস্পর কথোপকথনের সময় সালাম বিনিময়ের উল্লেখ ছিলো। কিন্তু, ২০২৩ সালে সালাম মুছে ফেলে সেখানে ‘গুড মর্নিং’ শব্দ দেওয়া হয়েছিলো এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষেও তা অপরিবর্তীত রাখা হয়েছিল।
২. ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৩৯ পৃষ্ঠায় দেশিয় সংস্কৃতির নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা আর ঢোল-তবলা দিয়ে পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছিল।

৩. ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১০ পৃষ্ঠায় ইসলামের বিধান একাধিক বিবাহকে অন্ধকার প্রথা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

৪. ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠা, ৯৫ ও ৯৬ পৃষ্ঠা, চতুর্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়; ৮৪ পৃষ্ঠাসহ অনেক ক্ষেত্রেই ইসলামকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

৫. স্কুল ও দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় ‘স্ট্যান্ডিং এলবো টু নী ক্রানসেজ’ নামক ব্যায়াম এর পদ্ধতি শিখানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে মেয়েদের ৩টি দৃষ্টিকটু ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছবির মাধ্যমে সকল ধর্মের শালীন পোশাকের বিপরীত চিত্র প্রকাশ পেয়েছিল। সচেতন অভিভাবকরা যার তীব্র প্রতিবাদ করেছিল।

৬. সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৩৯ থেকে ৪৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত শরিফার গল্প দিয়ে ভরপুর ছিল। ২০২৩ সালে উক্ত বইয়ে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার প্রমোট করেছিলেন শেখ হাসিনার শিক্ষামন্ত্রী। এখানেই শেষ ছিল না, হিজড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডারকে তালগোল পাকিয়ে সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট একটি বিষয়কেও প্রমোট করার চেষ্টা করছিল। নতুন কারিকুলামের ছদ্মাবরণে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে দিতে উঠে পড়ে লেগেছিল।

৭. আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা নীতিতে বিজ্ঞানের নামে অবৈজ্ঞানিক বিবর্তনবাদকে প্রমোট করেছিল। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ্য বইয়ের ৪র্থ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছিল ‘যে জীবগুলো সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত ও অভিযোজিত হয়ে হয়ে একে অপরের থেকে এতটাই আলাদা হয়ে গেছে যে, সেগুলো আর একে অপরের সঙ্গে প্রজননে অংশ নিতে পারে না, সেগুলোর আলাদা প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়’ যা বিবর্তনবাদের মূল কথা। অর্থাৎ পাঠ্যক্রমে মানবজাতির আদিবংশ হিসেবে বানরকে নির্দেশ করা হয়েছিল। অথচ, এ বিবর্তনবাদের আদৌ কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

৮. শেখ হাসিনার আমলে আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা ধ্বংস করা হয়েছিল। আলিয়া মাদরাসার কারিকুলামে আরবী ও ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছিল। পাঠ্যবইগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ঈমান বিধ্বংসী বিষয় সংযোজন করা হয়েছিল।

৯. স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার নামে শিশুদেরকে যৌনতার দিকে ধাবিত করেছিল। ষষ্ঠ শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের ৪৭ থেকে ৪৯ পৃষ্ঠায় বয়ঃসন্ধিকালে নারী-পুরুষের দেহের পরিবর্তন, নারী-পুরুষের শরীর থেকে কী নির্গত হয়, কোন অঙ্গের আকার কেমন হয় এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কেমন আকর্ষণ হয় তা খোলামেলাভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল, যা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে পাঠদানে শিক্ষকরা বিব্রতবোধ করতেন। একই শ্রেণির বিজ্ঞান ও অনুসন্ধানী পাঠ এর ১০ম অধ্যায় ‘মানব শরীর’ শিরোনামে ১১১ থেকে ১১২ পৃষ্ঠায় নারী-পুরুষের গোপনীয় অঙ্গগুলো সম্পর্কে খুব খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছিল, যা অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছিল। এ নোংরা শিক্ষায় ১১ থেকে ১৩ বছরের কোমলমতি শিশুর মননে ও মানসিকতায় ভয়ংকর কুপ্রভাব পড়ছিল। স্পর্শকাতর বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আলোচনার মাধ্যমে লজ্জার বাঁধন ভেঙে দেয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। এসব শিক্ষার ফলে সারা দেশে কিশোরগ্যাঙ সৃষ্টি হয়েছিল। যেকোনো অনৈতিক কাজে তাদের অনায়াসে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল অহরহ।

১০. শেখ হাসিনার শিক্ষা কারিকুলামে পৌত্তলিকতার প্রমোট করা ছিল সবচেয়ে উদ্বেগজনক। নব্বই পার্সেন্ট মুসলিমের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে পৌত্তলিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। আর এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সিলেবাস বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছিল। ইসলাম শিক্ষা বইয়ে মূর্তির ছবি দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধর্মান্তরিত করার সূক্ষ্ম প্রায়াস চলেছিল। একটি জাতিকে পৌত্তলিক বানানোর সবচেয়ে নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আর এ লক্ষ্যে দেশীয় ছাপাখানার পরিবর্তে প্রতি বছর বই ছাপানোর কাজটি সম্পন্ন হতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ছাপাখানায়।

শেখ হাসিনার এসব দেশ ও ধর্ম বিধ্বংসী সামগ্রিক কর্মকা-ে ছাত্র-জনতা ফুঁসে ওঠে। জুলাই ২০২৪ থেকে ছাত্র-জনতা তাঁর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলে। এ আন্দোলনে যোগ দেয় বাংলাদেশের সকল জনতা। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যান।

বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. ইউনূস একজন বিশ্বনন্দিত নোবেল লরিয়েট। দুনিয়াময় রয়েছে তার সুখ্যাতি। প্রকৃত শিক্ষাবান্ধব বলতে যা বোঝায় তার সবই তিনি লালন করেন। ইতোমধ্যে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উপলক্ষে তিনি কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। জাতি আশা করছে, তার নেতৃত্বেই শিক্ষা ব্যবস্থার কাক্সিক্ষত সংস্কার সাধিত হবে।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে অনেক শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার বেশির ভাগই ছিল তাদের গোষ্ঠিগত চেতনাকে সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার নোংরা প্রয়াস। ছিল ভারতের চাপিয়ে দেওয়া এক ভাঁওতাবাজি শিক্ষা কারিকুলাম। প্রতিবছর যেটাকে কেটে ছিঁড়ে ঘঁষামাজা করে চাপিয়ে দেওয়া হতো কিশোর ছেলে-মেয়েদের উপর! ফলে তরুণ প্রজন্ম ভাঁওতাবাজির এ শিক্ষানীতির কবলে পড়ে নির্জীব ও অনৈতিক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল। সরকারসৃষ্ট দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আয়-বৈষম্য ও পর্নোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। অনৈতিক সেই সরকারের বিদায় হলেও ঠিক এই মুহূর্তে যুবসমাজ এক অন্ধকারময় জীবন অতিবাহিত করে চলেছে। একধরনের ট্রমাটাইজড অবস্থায় তারা নিপতিত হয়ে আছে। এমতাবস্থায়, তাদেরকে ন্যূনতম ধর্মের শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবি। তাই কোমলমতি শিশু ও কিশোরদের সিলেবাসে অনতিবিলম্বে ইসলামী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হোক! এ শিক্ষা স্কুল ও কলেজের সকল স্তরে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হোক! বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইসলামী শিক্ষার উচ্চতর গবেষণা প্রকল্প চালু হোক! প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব নামে একটি অনুষদ চালু হোক, যার অধীনে ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী দর্শন, ইসলামী কলা ইত্যাদি বিভাগ চালু করা হোক।

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
dr.knzaman@gmail.com


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামোর অপ্রতুলতা
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের বিকাশে জোর দিতে হবে
সেনাবাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক
ড্যাপ বাস্তবায়নের পথে পতিত ফ্যাসিস্টের দোসরদের অশুভ ছায়া!
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট : চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
আরও
X

আরও পড়ুন

‘খুব ভালো চুক্তি’র ভবিষ্যদ্বাণী, চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

‘খুব ভালো চুক্তি’র ভবিষ্যদ্বাণী, চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

নাইটক্লাবের ছাদ ধসে মারা গেলেন গায়ক রুবিও, নিহত বেড়ে ১৮৪

নাইটক্লাবের ছাদ ধসে মারা গেলেন গায়ক রুবিও, নিহত বেড়ে ১৮৪

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাস অভিমুখে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাস অভিমুখে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সড়কে ছিল না যানজট, পরীক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি

সড়কে ছিল না যানজট, পরীক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি

হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির কেউ আমার কথা ভাবেনি–জিৎ

হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির কেউ আমার কথা ভাবেনি–জিৎ

প্লট দুর্নীতি : হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্লট দুর্নীতি : হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি,  ২৮তম ঢাকা

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ২৮তম ঢাকা

ডোমিনিকান রিপাবলিকে নাইটক্লাবের ছাদ ধস : নিহত বেড়ে ১২৪

ডোমিনিকান রিপাবলিকে নাইটক্লাবের ছাদ ধস : নিহত বেড়ে ১২৪

গাজায় আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত অন্তত ৩৮

গাজায় আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত অন্তত ৩৮

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযান মহানগর তাঁতীলীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন গ্রেফতার

টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযান মহানগর তাঁতীলীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন গ্রেফতার

হিলিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

হিলিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

সুন্দরবনে ডাকাতদের কবল থেকে ছয় নারীসহ ৩৩ জেলে উদ্ধার

সুন্দরবনে ডাকাতদের কবল থেকে ছয় নারীসহ ৩৩ জেলে উদ্ধার

ইয়েমেনের বন্দরশহরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা : নিহত বেড়ে ১৬

ইয়েমেনের বন্দরশহরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা : নিহত বেড়ে ১৬

গাজায় অভিযানে আপত্তি, পাইলটসহ বিমানবাহিনীর ৯৭০ কর্মীকে বহিষ্কারের হুমকি ইসরাইলের

গাজায় অভিযানে আপত্তি, পাইলটসহ বিমানবাহিনীর ৯৭০ কর্মীকে বহিষ্কারের হুমকি ইসরাইলের

শহীদদের রক্তের সাথে কোন আপোষ বরদাস্ত করা হবে না: ইশরাক

শহীদদের রক্তের সাথে কোন আপোষ বরদাস্ত করা হবে না: ইশরাক

মেসির জোড়া গোলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সেমিতে মায়ামি

মেসির জোড়া গোলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সেমিতে মায়ামি

সৌদি আরবে নতুন ১৪টি তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান

সৌদি আরবে নতুন ১৪টি তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান

দাউদকান্দিতে মাদ্রাসায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল

দাউদকান্দিতে মাদ্রাসায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার