জাটকা নিধনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম

আজ ১ মার্চ থেকে দুই মাসের জন্য জাটকা নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। এ সময়ে জাটকা ধরা ও বিক্রি করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পরিমাপ অনুযায়ী, ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের ইলিশকে জাটকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জাটকা মৌসুমে তা ধরা নিষেধ। সাধারণত নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে জাটকা বড় হয়ে বিভিন্ন ওজনের ইলিশ মাছে পরিণত হয়। এক থেকে দেড় কেজির বেশি পর্যন্ত একেকটি ইলিশের ওজন হয়। সুস্বাদু ইলিশের চাহিদা সারাবছরই ভোক্তাদের কাছে থাকে। ইলিশ এখন মাছের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের মধ্যে উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ১১তম অবস্থানে রয়েছে। ৮৬ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। দেশের জিডিপিতে এর অবদান প্রায় ১ শতাংশ। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, নাব্যসংকট, নদী দূষণ, জাটকা নিধনের কারণে ইলিশের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। গত দুই বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এসব সমস্যা সমাধান করা না গেলে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ইলিশ উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ হলেও সবচেয়ে বড় করণ হয়ে রয়েছে জাটকা নিধন। সরকার ১ মার্চ থেকে জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাজারে এখন জাটকায় সয়লাব হয়ে রয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাজারে তো বটেই পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে অবাধে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের কেউ কেউ ভুল করে সমুদ্রের চাপিলা মাছ ভেবে জাটকা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, জাটকা বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও কীভাবে তা অবাধে বিক্রি হচ্ছে? মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করছে? মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার কি করছেন? জেলেরা কীভাবে জাটকা ধরতে পারছে? মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাটকা নিধন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে পারলে বছরে ১ থেকে দেড় লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন হতো। এতে একদিকে যেমন ইলিশের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে থাকত, তেমনি আরও বেশি রফতানি করা যেত। ইতোমধ্যে চীন বাংলাদেশ থেকে এক হাজার টন ইলিশ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে, দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ইলিশ উৎপাদনে বাধ সেধেছে জাটকা নিধন। এ নিধন যেন কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। বন্ধের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নিষিদ্ধ সময়ে সরকার ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭১ জেলেকে নিষিদ্ধ দুই মাসে ৪০ কেজি চাল প্রদানের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর আগে ৫ লাখ লোককে ভাতার আওতায় আনলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার শুধু উদ্যোগ গ্রহণ করেই দায় সারছে। মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। জেলেরা মাছ ধরতে বের হলেও তাদের নিবৃত্ত বা আইনের আওতায় আনার কোনো পদক্ষেপ নেই। থাকলে জাটকায় বাজার সয়লাব হতো না। কোস্টগার্ডকে এ সময়ে তৎপর থাকার কথা থাকলেও তার কোনো আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে অবাধে জাটকা নিধন চলছে। এতে ইলিশ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাটকা নিধন বন্ধে সরকার যে বরাদ্দ দেয়, তা কোথায় এবং কিভাবে বন্টন হয়, তার কোনো হিসাব নেই। অথচ এ সময় জাটকা নিধনে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার কারণ নেই। সরকারকে জিরো টলারেন্সে থাকার কথা। যারা জাটকা নিধন ও বিক্রি করছে, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা দরকার। শুধু জাল জব্দ করলেই হবে না, যে ট্রলার বা নৌকায় জাটকা নিধন করে, সেগুলো ধ্বংস করে দেয়ার মতো পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কোস্ট গার্ডের দায়িত্বে যারা রয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে যারা নিয়োজিত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তাদের বেতন-ভাতাও বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। সরকার এ খাতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও এ অর্থ কিভাবে ব্যয় হচ্ছে, তার হিসাব নিতে হবে। বলা বাহুল্য, জাটকা বড় হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলে এই রমজানে রোজাদাররা ইলিশের চাহিদা পূরণ করতে পারত।
ইলিশের মতো অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপের অভাব এবং উদাসীনতা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। যথাযথ তদারকির অভাবে জেলেরা জাটকা ধরবে এবং বিক্রি করবে, তা হতে পারে না। উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের কেবল সভা-সেমিনারে লেকচার দিলে হবে না। এজন্য, বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাকে আরও সক্রিয় হতে হবে। মাঠ পর্যায়ে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারে তাকে তদারকি করতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ কোথায়, কিভাবে ব্যয় হচ্ছে এবং জেলেরা তা পাচ্ছে কিনা, তার খোঁজ নিতে হবে। জেলেরা যদি বরাদ্দকৃত অর্থ ও খাদ্য যথাযথভাবে না পায়, তাহলে তারা নিরুপায় হয়ে জাটকা ধরতে বের হবে। ফলে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিতে হবে। এর পরেও কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সে ক্ষেত্রে শূন্য সহিষ্ণুতা অবলম্বন করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

‘খুব ভালো চুক্তি’র ভবিষ্যদ্বাণী, চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

নাইটক্লাবের ছাদ ধসে মারা গেলেন গায়ক রুবিও, নিহত বেড়ে ১৮৪

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাস অভিমুখে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সড়কে ছিল না যানজট, পরীক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি

হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির কেউ আমার কথা ভাবেনি–জিৎ

প্লট দুর্নীতি : হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ২৮তম ঢাকা

ডোমিনিকান রিপাবলিকে নাইটক্লাবের ছাদ ধস : নিহত বেড়ে ১২৪

গাজায় আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত অন্তত ৩৮

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

টঙ্গীতে র্যাবের অভিযান মহানগর তাঁতীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন গ্রেফতার

হিলিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

সুন্দরবনে ডাকাতদের কবল থেকে ছয় নারীসহ ৩৩ জেলে উদ্ধার

ইয়েমেনের বন্দরশহরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা : নিহত বেড়ে ১৬

গাজায় অভিযানে আপত্তি, পাইলটসহ বিমানবাহিনীর ৯৭০ কর্মীকে বহিষ্কারের হুমকি ইসরাইলের

শহীদদের রক্তের সাথে কোন আপোষ বরদাস্ত করা হবে না: ইশরাক

মেসির জোড়া গোলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সেমিতে মায়ামি

সৌদি আরবে নতুন ১৪টি তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান

দাউদকান্দিতে মাদ্রাসায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার