আবাসনখাতে গতিসঞ্চার করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম

দেশের আবাসনখাতের অবস্থা শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। অথচ, এটি একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি যে কোনো বিবেচনায় এর অসাধারণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে আবাসনখাত জাতীয় অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। জিডিপিতে এখাতের অবদান ১৫ শতাংশ। কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য শিল্পখাতের উন্নয়ন-বিকাশেও এ খাত সহযোগীর ভূমিকা রাখছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে তিন শতাধিক ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প। অর্ধকোটি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। শুধু তাই নয়, এখাতের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল আছে প্রায় দুই কোটি মানুষ। আবাসনখাত কেবলমাত্র ব্যবসা নয়, একার্থে এটা গুরুত্বপূর্ণ সেবামূলকখাতও বটে। খাদ্যের পরেই মানুষের চাহিদা মাথা গোঁজার ঠাঁই, যেখানে সে নিশ্চিন্তে, নিরাপদে অবস্থান ও বসবাস করতে পারবে। এই মানবিক চাহিদা পূরণে আবাসনখাত ভূমিকা ও অবদান রাখছে। এটা এ খাতের প্রধান লক্ষ্য। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, স্বৈরাচারের দেড় দশকে এ খাতের গুরুত্ব অনুযায়ী দৃষ্টি দেয়া হয়নি। ফলে খাতটি মন্দার কবলে পতিত হয়েছে। স্বৈরাচারের বিদায় এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও এর মন্দা কাটেনি। খাতের সমস্যা ও সংকট উত্তোরণে সরকার কার্যত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নেই। ফলে প্লট, ফ্ল্যাট, বাড়ি বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ উঠিয়ে আনতে বিনা লাভে এসব ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বিনিয়োগ আটকে থাকায় অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মীদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, আবাসন খাতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে, যার অন্যতম কারণ ড্যাপ বা নগর পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা। উল্লেখ করা যেতে পারে, ড্যাপ নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা চলছে শুরু থেকেই। বিভিন্ন সময় এর পরিবর্তন-পরিমার্জনও হয়েছে। ড্যাপ এখনো জনআস্থা অর্জন করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ড্যাপের ওপর নগর বিন্যাস, বিকাশ-প্রসারণ ইত্যাদি নির্ভর করে। ড্যাপ ঠিক বা স্থির না হলে আবাসনখাতে গতিও আসার কোনো কারণ নেই। নতুন ড্যাপ বৈষম্যমূলক ও অস্পষ্ট বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, প্লট, ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। আবাসন খাতের স্থবিরতার পেছনে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ব্যাংকঋণের অভাব ইত্যাদিও বিশেষভাবে দায়ী।

বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিল্পসহযোগী হিসাবে ভূমিকা এবং অর্থনীতিতে অবদানের দিক থেকে আবাসন খাত একটি বড় খাত। অনেকের মতে, গার্মেন্টের পরেই এর অবস্থান। এ খাতে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। গার্মেন্টের পরে কর্মসংস্থানও এখাতে বেশি। অথচ গার্মেন্টের ব্যাপার সরকারকে যতটা স্পর্শকাতর হতে দেখা যায়, আবাসনখাতের ক্ষেত্রে ততটা দেখা যায় না। সবাই আশা করে, অন্তর্বর্তী সরকার আবাসন খাতের ওপর অবিলম্বে দৃষ্টি দেবে। ড্যাপ সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট ও স্থায়ী নাহলে বিনিয়োগকারীরা যেমন বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না তেমনি প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ির ক্রেতারাও উৎসাহী হবে না। সুতরাং ড্যাপের বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্মাণ সামগ্রীÑ ইট, রড, সিমেন্ট, বালু ইত্যাদির দাম যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে স্থিতিশীল করতে হবে। তৃতীয়ত, আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ির ক্রেতাদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা যে, দেশের অর্থনীতি খুবই নাজুক। মানুষের অর্থনীতিও বিপর্যয়কর। পতিত স্বৈরাচার ব্যাংকসহ অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক গতিশীল করতে চাইলেও সবক্ষেত্রে সফল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। অর্থনীতির পুনর্গঠন চলছে ধীরগতিতে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টাও সফল হচ্ছে না। দুয়েকটি সূচক বাদে অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই নি¤œমুখী। পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে। আশংকিত সংকট মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগী না হলে পতন অনিবার্য। দেশের সার্বিক অর্থনীতি যখন অবনতির ধারায় চলে তখন মানুষের ওপরও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। মানুষের হাতে পর্যাপ্ত কেন, প্রয়োজন পূরণের মতো অর্থও নেই। কোটি কোটি মানুষ বেকার ও ছদ্মবেকার। তাদের কাজের বন্দোবস্ত নেই। আয়-রোজগারের উপায় নেই। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে আরো হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তখন সাধারণ মানুষের অনেকের হাত খালি। তারা নিত্যপণ্য বিশেষত খাদ্য পণ্যও কিনতে পারছে না। কিনলেও কম করে কিনছে। ফলে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো লাগাতার পণ্যমূল্য বাড়িয়ে চলেছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না। সরকারের এই অক্ষমতায় মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।

অনেক দিন ধরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে খরা চলছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সরকারকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার সহায়তা কতটা পেয়েছে, সরকারই বলতে পারবে। তবে তারা বিনিয়োগের যে আগ্রহ দেখিয়েছিল, তার কোনো প্রতিফলন আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি না। দেশি বিনিয়োগেরও কোনো খবর নেই। অতএব, বলতে হবে, বিনিয়োগ নেই, সম্ভাবনাও তেমন নেই। বিনিয়োগ অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশে অপরিহার্য। বিনিয়োগে শিল্পের বিকাশ। শিল্পের বিকাশ হলে উৎপাদন বাড়বে। সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানও বাড়বে। মানুষের হাতে টাকা আসবে, ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। কাজেই, সরকারকে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিনিয়োগানুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, ব্যবসা শুরুর বাধা দূর, মুনাফার নিশ্চয়তা, ঘুষ-দুর্নীতির অবসান, প্রয়োজনীয় ঋণসহায়তা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। এগুলো নিশ্চিত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। অর্থনীতিতে গতি ও সমৃদ্ধি আসবে। আবাসনখাতও তার হিস্যা পাবে।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পোলট্রিশিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাতিল করতে হবে
বিএনপির নেতাকর্মীদের যেভাবে কর্মসংস্থান হতে পারে
অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে
রাস্তাটি সংস্কার করুন
আরও
X

আরও পড়ুন

সাভারে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

সাভারে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

পরিশুদ্ধ-পরিবর্তিত বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে-সাহাদাত হোসেন সেলিম

পরিশুদ্ধ-পরিবর্তিত বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে-সাহাদাত হোসেন সেলিম

সংবাদ প্রকাশের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

সংবাদ প্রকাশের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

পহেলগাম হত্যাকাণ্ড: মোদির রক্তের রাজনীতি

পহেলগাম হত্যাকাণ্ড: মোদির রক্তের রাজনীতি

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা,পুলিশের ধাওয়া মোটরসাইকেল জব্দ

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা,পুলিশের ধাওয়া মোটরসাইকেল জব্দ

সিলেটের শ্রেষ্ঠ অফিসার মনোনীত হলেন বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী

সিলেটের শ্রেষ্ঠ অফিসার মনোনীত হলেন বিশ্বনাথ থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী

প্রবাসীর জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

প্রবাসীর জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র‌্যাবের অভিযান

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র‌্যাবের অভিযান

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে মধ্যস্থতা করবেন ট্রাম্প? যা জানালেন মার্কিন প্রতিনিধি

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে মধ্যস্থতা করবেন ট্রাম্প? যা জানালেন মার্কিন প্রতিনিধি

জম্মু ও কাশ্মীর ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলেন ড.তারিকুল ইসলাম চৌধুরী

জম্মু ও কাশ্মীর ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলেন ড.তারিকুল ইসলাম চৌধুরী

সৈয়দপুরে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সৈয়দপুরে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সাভারে নারী সংস্কার কমিশন বিলুপ্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ

সাভারে নারী সংস্কার কমিশন বিলুপ্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ

গাবতলি টার্মিনালে আন্তজেলা বাস প্রবেশের জন্য আলাদা রোড নির্মাণ করা হবে : ডিএনসিসি প্রশাসক

গাবতলি টার্মিনালে আন্তজেলা বাস প্রবেশের জন্য আলাদা রোড নির্মাণ করা হবে : ডিএনসিসি প্রশাসক

এটিজেএফবির ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ রান’: মুখরিত হাতিরঝিল

এটিজেএফবির ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ রান’: মুখরিত হাতিরঝিল

বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাইলেন রিজভী

বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাইলেন রিজভী

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আ. লীগের লোকজনের পুর্ণবাসন হচ্ছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আ. লীগের লোকজনের পুর্ণবাসন হচ্ছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন

পরমাণু যুদ্ধের রূপ নিতে পারে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, দাবি মার্কিন গোয়েন্দাদের

পরমাণু যুদ্ধের রূপ নিতে পারে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, দাবি মার্কিন গোয়েন্দাদের

মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে সংবাদ প্রকাশে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৪ সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ

মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে সংবাদ প্রকাশে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৪ সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ

ভারতীয় সেনার ওয়েবসাইট হ্যাক করল পাকিস্তানিরা

ভারতীয় সেনার ওয়েবসাইট হ্যাক করল পাকিস্তানিরা

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র‌্যাবের অভিযান

আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বারে র‌্যাবের অভিযান