চর ও দ্বীপাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম

দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে প্রাকৃতিক নিয়মে জেগে উঠছে ছোট-বড়ো চর। এটা এদেশের মানুষের জন্য মহান আল্লাহর একটা অনন্যসাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ দান। চরগুলো প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদে পূর্ণ। কালক্রমে চরে চাষাবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে, প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ আহরিত হচ্ছে। গত অর্ধ শতাব্দীকালের মধ্যে চর ও দ্বীপাঞ্চলের পরিধি অন্তত ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের মূল আয়তনের ১০ ভাগের এক ভাগের সমান। বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। ক্রমাগত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার বসবাসের জন্য, তাদের খাদ্যসংস্থানের জন্য জমির অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। আল্লাহর অপার রহমতে জমির ব্যবস্থা প্রকৃতিক প্রক্রিয়া ও নিয়মেই হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা উপকূল ভাগের পরিবর্তন ও ভূমির সম্প্রসারণ প্রত্যক্ষ করে আগামী ২৫-৩০ বছরের মধ্যে সাগরে দেশের এখনকার সমান ভূখ- জেগে উঠবে বহুল ধারণা করছেন। নতুন জেগে ওঠা জমি বসবাসযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য হলে বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ থাকবে না, কাম্য জনসংখ্যার দেশ হিসাবে গণ্য হবে। প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদেও দেশ আরো সমৃদ্ধ হবে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। তারপরও ভূমি-উত্থান ও সম্পদপ্রাপ্তি অব্যাহত থাকবে। কারণ, সাগরে চর ও দ্বীপ জাগা একটি লাগাতার প্রক্রিয়া। জেগে ওঠা চর ও দ্বীপে ধীরে ধীরে বসতি গড়ে উঠছে। মৎস্যসম্পদসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ কিছু কিছু আহরিত হচ্ছে। বনায়ন-বৃক্ষায়ন হচ্ছে। অবশ্য খনিজসম্পদের অনুসন্ধান ও আহরণ তেমন একটা হচ্ছে না। আমাদের জানা আছে, কুতুদিয়া, সন্দীপ, হাতিয়া, ভোলা প্রভৃতি মূলত বড় বড় দ্বীপ। এগুলোর আয়তন যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্যাসসহ অন্যান্য খনিজসম্পদের সন্ধানও পাওয়া যাচ্ছে। ভোলায় ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে। নিঝুমদ্বীপ, স্বর্ণদ্বীপ, ভাসানচর, চালচরসহ আরো অসংখ্য নামের চর বা দ্বীপে মানুষ ও পশু-পাখির আবাস গড়ে উঠছে। ছাগল, গরু ও মহিষের খামার তৈরি হচ্ছে। চর ও দ্বীপে খনিজবালি ছাড়াও নানা রকম খনিজসম্পদ প্রাপ্তির সম্ভবনা রয়েছে। ইতোপূর্বে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে স্থলভূমি, পাহাড়ি এলাকা, উপকূলভাগ এবং সমুদ্রে তেল, গ্যাস ইত্যাদির পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এক সময় তো বলা হতো, বাংলাদেশ তেল-গ্যাসের ওপর ভাসছে। সিলেটের হরিপুরে এবং আরো দুয়েকটি এলাকায় তেলের সন্ধান মিললেও উত্তোলনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্থলভাগের গ্যাস অনেক আগে উত্তোলন শুরু হলেও এবং পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলে প্রতীয়মান হলেও পূর্ণঅনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এদিকে সমুদ্রসীমার স্থায়ী অধিকার প্রতিষ্ঠার পরও সমুদ্রে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানই শুরু করা যায়নি। পক্ষান্তরে ভারত ও মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধান চালিয়ে তেল গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে এবং উত্তোলনও শুরু করেছে।
ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না, অব্যাহতভাবে সাগরে চর ও দ্বীপ জেগে ওঠায় দেশের আয়তনই শুধু বাড়ছে না সম্পদসম্ভাবনাও বাড়ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দেশের সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাব্যতা সুনির্দিষ্ট ও বর্ধিত হচ্ছে। কিন্তু দুঃজনক হলেও স্বীকার করতে হবে, এই অশেষ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সরকারের দিক থেকে দেখা যায়নি। যেসব চর ও দ্বীপ জেগে উঠেছে, প্রথম কাজ হলো সেগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। সেগুলো যাতে ভেঙ্গে সাগরে হারিয়ে না যায় সে জন্য বাঁধ, বনায়ন ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে বসতি স্থাপন রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি করতে হবে। চর ও দ্বীপের উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডুবোচর, যার সংখ্যা ও পরিধি অনেক বেশি, যাতে দ্রুত জেগে ওঠে তার জন্য কারিগরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চর ও দ্বীপগুলো বাসোপযোগী ও ব্যবহারোযোগী হলে তাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভবপর হবে। আবাদ-উৎপাদন তো হবেই, একই সঙ্গে মৎস্যচাষ, বনায়ন, হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেড়া, গরু-মহিষের খামার, দুগ্ধ খামার ইত্যাদিও করা যাবে। এর পাশাপাশি চর ও দ্বীপের খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে। তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশে জ্বালানি সংকট প্রকট। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি থাকার কারণে উৎপাদন ও উন্নয়ন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে । দেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ-গ্যাসের যোগান যদি পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন হয়, তবে বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান ইত্যাদিতে বিপ্লবিক পরিবর্তন হবে। জ্বালানি আমদানিতে বিপুল ব্যয়ের সাশ্রয় হবে। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। সম্পদ মাটির নিচে কিংবা সমুদ্রের অতলে রেখে কোনো লাভ নেই। তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও মানুষের লাভ ও মঙ্গল। পতিত স্বৈরাচার দেশের প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান-উত্তোলনের চেয়ে দেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য করেছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে পরনির্ভরতা আমাদের স্বাভাবিক উন্নয়ন-অগ্রগতিকে ব্যাহত করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকার বিদ্যুতে সয়ম্ভরতা বলে দাবি করেছে। অথচ, বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ও জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস নিয়ে লুটপাটের মহোৎসব হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু এই সমৃদ্ধির কোনোই মূল্য নেই, যদি তা কাজে লাগানো সম্ভব না হয়। যে কোনো সম্পদ কাজে লাগাতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। একই সঙ্গে দরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ও দক্ষ লোকবল। চর ও দ্বীপাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তাবায়নে কোনো ব্যাপকভিত্তিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়নি। যা হয়েছে তা খন্ড-বিচ্ছিন্ন ও নামকাওয়াস্তে। প্রথমে, সম্ভবনা নিরূপণ করতে হবে, সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে, অনুকূল বিবেচিত হলে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তারপর বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে দক্ষ লোকবল লাগবে। আমাদের দেশে লোকের অভাব নেই বটে, তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রযুক্তির ঘাটতিও রয়েছে। দক্ষ লোকবল গড়ে তোলার পাশাপাশি উপযুক্ত প্রযুক্তির যোগানও নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশের প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ যা আছে, তার মূল্য ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। এ সম্পদ যদি পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন ও কাজে লাগানো সম্ভবপর হয়, তবে দেশের প্রত্যাশিত উন্নতি ও জনগণের জীবনমানের প্রভূত অগ্রগতি হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

টিভিতে দেখুন

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা

কুস্তির কমিটি নিয়ে ক্ষোভ অব্যহত