ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখতে করণীয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম

পৃথিবীতে প্রায় ২৩৫ কোটি মুসলমান আছে যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৮%। বর্তমানে পৃথিবীতে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন। ২০৪০ সালে এর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬৪২ মিলিয়ন-এ। এর মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মুসলমানরা সাধারনত রোযা রাখে। পৃথিবীর মোট প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের ৩৬% ডায়াবেটিসে ভুগছে। সে হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, প্রতি রমযান মাসে ৯-১২ কোটি ডায়াবেটিস রোগী রোযা রাখছে। একটি গুরুত্বর্পূণ গবেষণায় দেখা গেছে যে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের ৪৩% এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ৭৯% রমযান মাসে রোযা রাখে।

 

রোযার সময় একজন মানুষকে ভোররাত হতে সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও মৌসুম ভেদে এ সময়কাল ১৪ ঘন্টা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৩ ঘন্টা পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের দেশে সেহ্রী ও ইফতারের মধ্যবর্তী সময় সর্বোচ্চ ১৮ ঘন্টা হতে পারে। এ দীর্ঘ সময় একজন ডায়াবেটিস রোগীর না খেয়ে থাকা উচিত হবে কী না তা নিয়ে অনেক বছর ধরে বহু বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে পৃথিবীর মুসলমান ও অমুসলমান ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞগন সর্বসম্মত ভাবে মতামত দিয়েছেন যে, ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে রোযা রাখা ক্ষতিকর হবে। কুরআন শরীফেও রোগাক্রান্তদের রোযা রাখা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে (সুরা আল বাকারাঃ আয়াত ১৮৩- ১৮৫) আর অন্য যে কোন ধরনের অসুখের চেয়ে ডায়বেটিস নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্য গ্রহনের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত। ডায়াবেটিস রোগীর বিপর্যস্ত বিপাকীয় তন্ত্রের কারণে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শারীরিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। কোন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ঝুঁকিপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগীকে রোযা রাখার পরামর্শ দিবেন না। কিন্তু কোন ডায়াবেটিস রোগী যদি ধর্মীয় প্রচন্ড আগ্রহের কারনে রোযা রাখতে চান তবে তাকে নিষেধ করাও কারো পক্ষে সম্ভব না। এখানে আমরা ডায়াবেটিস রোগীর রোযা রাখার কারণে যে সব সমস্যা হতে পারে এবং তা থেকে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকার পদ্ধতি আলোচনা করব।

রোযা রাখার সময় ডায়াবেটিস রোগীর ঝুঁকি সমূহঃ
১. রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া):
খাদ্য গ্রহণে অনেকক্ষণ যাবৎ বিরত থাকলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমান কমতে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমান ডায়াবেটিস রোগীর রোযা রাখার সময় এতটাই কমে যেতে পারে যে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হতে পারে। টাইপ ১ ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এরূপ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবার সম্ভবনা ৪.৭ গুন এবং টাইপ ২ ডায়বেটিকের ক্ষেত্রে ৭.৫ গুন বেশি।

২. রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া):
রোযা রাখার কারণে টাইপ ১ ও টাইপ ২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবার কিছুটা ঝুঁকি থাকে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে তা মারাতœক হতে পারে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এ থেকে জীবন নাশের ঘটনাও ঘটতে পারে। রমযান মাসের শেষের দিকে এ ঘটনাগুলো ঘটার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।

৩. ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসঃ
টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজ মারাতœক ভাবে বেড়ে যাওয়া বা এর ধারাবাহিকতায় কিটোনবডি বেড়ে যাবার কারণে সংকটাপন্ন অবস্থায় নিপতিত হতে পারেন। বিশেষ করে যাদের রক্তের গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রন রোযা শুরুর আগে ভালো ছিল না। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেও এরূপ হতে পারে।

৪. পানি শূণ্যতা ও থ্রম্বোএম্বোলিজমঃ
রোযা রেখে দীর্ঘ সময় পানি বা পানীয় খাদ্য গ্রহণে বিরত থাকার কারণে শরীরে পানি শূণ্যতা (ডিহাইড্রেশন) দেখা দিতে পারে। আর গরম ও বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় পানি শূণ্যতা আরো প্রকট হতে পারে। যাদেরকে রোযা রেখে কঠোর শারীরিক শ্রম দিতে হয় তাদেরও পানি শূণ্যতা দেখা দেবার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া, রক্তে বেশি মাত্রায় গ্লুকোজ থাকলে শরীর থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যাবার হার অনেক বৃদ্ধি পায়। এতে করে বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে উঠে দাড়াঁলে মাথা ঘুরে যেতে পারে। বিশেষত, যাদের ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের এ সময় সহসা জ্ঞান হারানো, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, আঘাত প্রাপ্ত হওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি ঘটে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দেহের পানি শূণ্যতার কারণে রক্ত জমাট বেধে চোখের রেটিনার কেন্দ্রীয় শিরা বন্ধ হয়ে দৃষ্টি শক্তি হারাবার ঘটনা ঘটেছে সৌদি আরবে ও অন্যান্য মরু অঞ্চলে।

রোযায় ডায়াবেটিসের ব্যবস্থাপনাঃ
ডায়াবেটিস রোগীর রোযা রাখা একান্তভাবেই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা তার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাতœক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং তার চিকিৎসকের জন্যও তা চ্যালেঞ্জ ছুঁেড় দেয়। প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীই রোযা রেখে কম বেশি ঝুঁকির আওতায় চলে আসেন।

এক্ষেত্রে করনীয় বিষয়সমূহ হল ঃ
১. প্রত্যেক রোযাদার ডায়াবেটিস রোগীর অবস্থা তার স্বাতন্ত্রসহ বিবেচনা করতে হবে।
২. ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে [প্রতিদিন বেশ ক’বার (কম পক্ষে তিন বার) রক্তে গ্লুকোজ মাপতে হবে]। দিনের শেষ ভাগে অবশ্যই রক্তের গ্লুকোজ দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সাথে রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য রাখতে হবে। রমযানের প্রথম দিকের দিনগুলোতে একটু বেশি সর্তক থাকতে হবে, পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

৩. প্রতিদিনের খাদ্যের পুষ্টিমান অন্যান্য সময়ের মতই রাখার চেষ্টা করতে হবে, যদিও তা খুব সহজ নাও হতে পারে। স্বাভাবিক দৈহিক ওজন ধরে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। গবেষনায় দেখা যায় রমযানে রোযা রেখে ২০%-২৫% ডায়াবেটিস রোগীর দৈহিক ওজন কমে বা বাড়ে। ইফতারে চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্য এবং তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ করা হতে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। কেননা, এসব খাবার হজম হতে সময় লাগবে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ইফতারের পর পরই যত দ্রুত সম্ভব রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা জরুরী। সেজন্য জটিল শর্করা জাতীয় খাবার সেহ্রীর সময় খেতে হবে। আর ইফতারীতে সহজ পাচ্য খাবার খেতে হবে। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। সেহ্রীর খাবার নির্ধারিত সময় শেষ হবার ঠিক পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের আযানের ঠিক আগে সেহ্রী শেষ হলে ভালো) খেতে হবে এবং তারপর প্রচুর পানি পান করা বাঞ্জনীয়।

৪. শারীরিক শ্রম বা ব্যায়ামসহ স্বাভাবিক শারীরিক কর্মকান্ড চালানো যেতে পারে এ সময়। তবে খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম না করাই ভাল। এতে করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। আর কঠোর শ্রম বিকাল বেলায়তো করা যাবেই না। তারাবি নামাজ পড়লে, তাকে শারীরিক শ্রমের বিকল্প হিসেবে গন্য করা যেতে পারে। কিছু কিছু ডায়াবেটিস রোগী (বিশেষত টাইপ ১) যাদের রক্তের গ্লুকোজ ঠিক মত রাখা যাচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঘটনা প্রায়শ মারাতœক হয়।

৫. প্রতিটি ডায়বেটিস রোযাদারকে একথাটি খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, যখনই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কোন লক্ষন শরীরে দেখা দেয় তার পর যতটা সম্ভব দ্রুততর সময়ের মধ্যে গ্লুকোজ/চিনি/মিষ্টি কোন খাদ্য, সরবত ইত্যাদি যে কোন একটি খেয়ে নিতে হবে। যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে, তারা তো খুব সহজেই এর প্রাথমিক উপসর্গ চিনতে পারবেন। আর যাদের তেমন অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের বুক বড়ধড়ফরানি, মাথা ফাঁকা ফাকাঁ লাগা, ঘাম হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, মাথা ঘোরা ইত্যাদির এক বা একাধিক লক্ষন দেখা দিতে পারে। তখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের গ্লুকোজ এসময় সাধারনত ৩.৩ মিলিমোল/লিটার) হবার কথা। আবার দিন শুরুর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যদি রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ মিলিমোল/ লিটার বা তার চেয়ে কমে যায় তাহলেও কিছু খেয়ে নেয়া জরুরী। আর যারা ইনসুলিন, সালফুনাইলইউরিয়া-মেগ্লিটিনাইড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা বেশ বেশি। আবার রক্তের গ্লুকোজ ১৬.৭ মিলিমোল/ লিটার এর বেশি হলেও রোযা রাখা সম্ভব হবে না।

প্রাক-রমযান মূল্যায়নঃ
যেসব ডায়াবেটিস রোগী ডায়াবেটিস নিয়ে রোযা রাখার সব ঝুঁকির কথা জেনেও রোযা রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তাদেরকে রোযা শুরুর কমপক্ষে ১ মাস আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। এর মধ্যে আছে ঘুম থেকে উঠেই ও খাবার ২ ঘন্টা পর (মোট ৪ বার) রক্তের গ্লুকোজ, খালি পেটে রক্তের লিপিড, লিভার, কিডনী ও হৃদপিন্ডের কার্যকারিতার পরীক্ষা এবং এইচবিএ১সি ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিতে হবে।

সকলকেই তার নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হওয়া উচিত। চিকিৎসকগণ এক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা প্রদান করবেন। তবে রমযানের ৩ মাস আগে থেকে ডায়াবেটিস রোগীর রোযা রাখার প্রস্তুতি শুরু করাটা সবচেয়ে বিবেকপ্রসূত পদক্ষেপ হবে।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
ডায়াবেটিস রোগীর রোযা রাখার সময় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে খাদ্য ব্যবস্থাপনায়। পরবর্তী অংশটুকুতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১) সেহ্রীর খাবার সেহ্রীর শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাওয়া উচিত।
২) ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা ভালো।

৩) ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানি শূণ্যতায় না ভোগেন। খেজুর খেলে, একটা খেজুর খেতে পারেন। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই তালিকাভূক্ত করতে পারলে ভালো। ডাবের পানি পান করতে পারেন। যদি কোন পানীয় পান করেন তবে চিনিমুক্ত পানি বেছে নেওয়াই উত্তম। যদি মিষ্টি পানীয় পছন্দ করেন, তবে সুইটনার যেমন- ক্যানডেরাল, জিরো ক্যাল বা সুইটেক্স ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন (তবে এগুলোও বর্জন করাটা বেশি সুস্বাস্থ্যকর হবে)। ভাজা পোড়া খাবার যেমন- পিঁয়াজু, বেগুনী, পুরি, পরোটা কাবাব অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।

৪) খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরণ ঠিক করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাওয়া প্রয়োজন।
৫) রমজানের পূর্বে যে পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতেন রমজানে ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার সময় এবং ধরণ বদলাতে হবে। প্রয়োজন হলে নিউট্রিশনিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবার তালিকা ঠিক করে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ওষুধের সঙ্গে খাবারের যেন সামঞ্জস্য থাকে। ইফতারের সময় অতি ভোজন এবং শেষ রাতে অল্প আহার পরিহার করতে হবে, বরং উল্টোটা হতে পারে।

রোযায় ডায়াবেটিস রোগীর ওষধের সমন্বয়ঃ
১. যারা দিনে ১ বার ডায়াবেটিসের ওষুধ (যে সমস্ত ওষুধ ইনসুলিন এর পরিমান বাড়ায়) খান, তারা ইফতারের শুরুতে (রোযা ভাঙ্গার সময়) সেটি খাবেন, তবে ডোজ একটু কমিয়ে নিতে হতে পারে।

২. যারা দিনে একাধিকবার ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তারা সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটির অর্ধেক পরিমাণে সেহ্রীর আধা ঘন্টা আগে খেতে পারেন।

৩. যে সকল রোগী ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের রমযানের পূর্বেই ইনসুলিনের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নেয়া জরুরী। সাধারনত রমযানের সময় দীর্ঘ মেয়াদী ইনসুলিন নেয়াটা ভালো। দীর্ঘ মেয়াদী এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ইনসুলি যা দিনে এক বার নিতে হয় যেমন ইনসুলিন লেন্টাস অথবা ইনসুলিন ট্রেসিবা কিংবা দিনে একবার থেকে দুবার যেমন, ইনসুলিন লিভেমির, এগুলোতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কম। যারা রোযার আগে সকালের ও রাতের খাবার আগে-২ বার ইনসুলিন (প্রি-মিক্সড) নিতেন, তারা সকালের ডোজটি সমপরিমানেই ইফতারের আগে নিবেন, আর রাতের ডোজটির অর্ধেক সেহরীর আগে নিবেন।

রোজায় ডায়বেটিস রোগীর ব্যয়ামঃ
ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যায়াম খুবই জরুরী কিন্তু রোযা রেখে দিনের বেলায় রোগীদের অধিক ব্যায়াম করা উচিত নয় এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। রাতের বেলায় বিশেষ করে তাহাহ্বীর নামজের পর ব্যায়াম করাই ভাল। মনে রাখতে হবে তারাহ্বীর দীর্ঘ নামাজে কিছুটা ব্যায়াম হয়ে যায়।

বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন
ডায়াবেটিস রোগীরা রোযা রাখতে পারবেন হয়ত। তবে ৩ মাস আগে থেকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিতে হবে। রোযার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। সেহ্রীর খাবার সেহ্রীর শেষ সময়ের কিছু আগে খাওয়া উচিত। ইফতারের সময় বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না। রোযার সময় দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যয়াম করা উচিত নয়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। রোযার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমানে পানি (সম্ভব হলে ডাবের জল), কম মিষ্টি রসালো ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে যে, রোযার সময়ে ওষুধ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা পুরোটাই পাল্টে যাবে এবং রমযানের পর আবার নূতন করে স্বাভাবিক সময়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ফিরে আসতে হবে।

ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার
১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা
মোবাঃ ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৯১৯০০০০২২
ইমেইল:[email protected]


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ
অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশে ডাক্তারি করে যাচ্ছেন ভারতীয়রা: ডা. রফিকুল
কিটোজেনিক ডায়েটের ভালো-মন্দ
শীতকালে বাতব্যথা বৃদ্ধি পায়
শীতে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন
আরও

আরও পড়ুন

গণধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক যুগ পর গ্রেপ্তার

গণধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক যুগ পর গ্রেপ্তার

ভূঞাপুরে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত

ভূঞাপুরে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত

আমরা নির্বাচন নিয়ে ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত: জামায়াত আমির

আমরা নির্বাচন নিয়ে ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত: জামায়াত আমির

ভূরুঙ্গামারীতে নিজ ভটভটি উল্টে যুবকের মৃত্যু

ভূরুঙ্গামারীতে নিজ ভটভটি উল্টে যুবকের মৃত্যু

মিজানুর রহমান আজাহারীর আগমনে পেকুয়ায় দশ লক্ষ মুসল্লি সমাগমের সম্ভাবনা

মিজানুর রহমান আজাহারীর আগমনে পেকুয়ায় দশ লক্ষ মুসল্লি সমাগমের সম্ভাবনা

ক্ষমতা ছাড়ার আগে রাশিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা বাইডেনের

ক্ষমতা ছাড়ার আগে রাশিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা বাইডেনের

আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

চট্টগ্রাম বোর্ডের নূরানি কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : পাশের হার ৯৭.৮৮%

চট্টগ্রাম বোর্ডের নূরানি কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : পাশের হার ৯৭.৮৮%

বিপিএলের সূচি

বিপিএলের সূচি

পিআইবির উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন করেন  ডঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা

পিআইবির উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন করেন  ডঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা

বিজয় দিবস হ্যান্ডবল আজ শুরু

বিজয় দিবস হ্যান্ডবল আজ শুরু

শান্তি ও মানবতার জয়গানেই খুলনায় বড়দিন উদযাপন

শান্তি ও মানবতার জয়গানেই খুলনায় বড়দিন উদযাপন

চুয়াডাঙ্গায় সারাবাংলা ৮৮ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সপ্তাহ ব্যাপী কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু

চুয়াডাঙ্গায় সারাবাংলা ৮৮ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সপ্তাহ ব্যাপী কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু

কালিগঞ্জে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ডাম্পার

কালিগঞ্জে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ডাম্পার

রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে জামির আলী মার্কেট দখলের পাঁয়তারা

রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে জামির আলী মার্কেট দখলের পাঁয়তারা

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট, অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট, অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি

সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর

সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর

শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ

শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ

নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১

নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১

জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত

জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত