এইডস : সচেতনতাই প্রধান দাওয়াই
০১ জুন ২০২৩, ০৮:৫৮ পিএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৫ এএম
এইচআইভি কথাটির অর্থ হল হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। আর এইডস এর অর্থ হল অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত রোগসমূহ। ১৯৮০-৮১ সালে ইউনাইটেড স্টেটসের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনে কয়েকজন সমকামীর মধ্যে এক ধরনের নতুন নিউমোনিয়া দেখা দেয়। পরবর্তীকালে নিউইয়র্কে সমকামীদের মধ্যে এক ধরনের ক্যান্সার লক্ষ্য করা গেল। ইতোমধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশার ওষুধ ব্যবহার করেন এমন কয়েকজনের মধ্যে এক ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। ১৯৮৩ সালে এসবের কারন হিসাবে সম্পূর্ণ নতুন প্রকার ভাইরাস আবিষ্কৃত হল, যা আজকের মরণ ভাইরাস এইচআইভি। ১৯৮৫ সালে এ রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার নাম এলিজা আবিষ্কৃত হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বর হিসেব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন লোক এইচআইভি/এইডস এ আক্রান্ত হন। পৃথিবীর সর্বত্র এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। দেখা গেছে, এ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৪৯। ৩২ শতাংশ হল ১৫-২৯ বছর বয়সের পুরুষ-মহিলা। এ রোগে ধনী-গরীব, শিশু-বয়স্ক নির্বিশেষে সমাজের যে কোনো বয়সের ব্যক্তি যে কোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগে তুলনামূলকভাবে মহিলাদের থেকে ৭০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হন পুরুষ। এইডস হল একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভাইরাসের নাম হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এ জাতীয় ভাইরাসটির প্রথমে নাম রাখা হয় এলএভি বা লিম্প্যাভিনোপ্যাথি আসোসিয়েটেড ভাইরাস। তারপর নাম হয় এইচটিএলভি-৩ বা হিউম্যান টি লিম্ফোসাইট ভাইরাস-৩। ১৯৮৬ সালের মে মাসে এর নাম হল এইচআইভি।
এ ভাইরাসের ব্যাস হল এক মিলিমিটারে দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। অল্প তাপ প্রয়োগেই মারা যায় এ ভাইরাস এবং ইথার ও ইথানলে এর সক্রিয়তা নষ্ট হয়। এ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে, বীর্যে, স্পাইনাল ফ্লুইডে লুক্কায়িত থাকে। এ ছাড়া খুব কম মাত্রায় চোখের পানি, লালা, স্তনদুগ্ধ, মূত্র, জরায়ুর সাদা স্রাবে। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে রক্ত ও রক্তজাত পদার্থের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে শিশুতে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। প্রথমে জ্বর, গলা ব্যথা, শরীরের চামড়ায় দাগ দেখা দেয় ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে। অনেকের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তারা সাধারণত নীরোগ মানুষের মতো প্রথমত উপসর্গহীন থাকতে পারেন এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন যদিও তারা এ রোগ বহন করে অন্যকে সংক্রমণ করতে সক্ষম। একবার সংক্রমিত হলে সারাজীবন সংক্রমিত থাকেন।
এ রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্ত যদি কোন সুস্থ ব্যক্তির রক্তের সান্নিধ্যে আসে সে ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির রক্তে এর জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে একশ শতাংশ। এইডস একটি কালান্তর রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার বেশী। এর একটি কারন এর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এইডস থেকে মুক্তির সম্ভাবনা যেখানে প্রায় নেই সেক্ষেত্রে এ রোগে যাতে আক্রান্ত হতে না-হয় সেদিকে বেশি যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। এ রোগকে প্রতিহত করতে হলে প্রাপ্ত রক্ত পরীক্ষা করার পর এইচআইভি মুক্ত প্রমাণিত হলে কেবল সে রক্ত গ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সংক্রমিত পুরুষ বা মহিলার যৌন মিলন এড়িয়ে চলতে হবে। ইনজেকশন নেবার সময় একমাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহার করতে হবে। কোনো সুস্থ লোকের কাটা-ছেড়া জায়গায় যেন এইডস রোগটি রক্ত বা তদরূপ কোনো সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দাঁত তোলার সময় সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করে অন্য সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। সুস্থ ব্যক্তির মুখে ঘা থাকলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চুম্বন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আক্রান্ত ব্যক্তির দাড়ি কাটার পর সে ক্ষুর অন্য কারো মুখে লাগানো যাবে না। উল্কি করা, নাক বা কান ফোঁড়ানো কাজে ব্যবহৃত সুচ অন্য কারো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অনুচিত। এ রোগে শিকার না হবার জন্য যা প্রয়োজন বিশেষ করে বিয়ের আগে নারী-পুরুষের কাউনসেলিং অত্যন্ত জরুরি।
আর সবশেষে এইডস সচেতনতা নিয়ে লাগাতার শিবির, বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে একমাত্র এ মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কেননা এ রোগ কালান্তক ও সর্বনাশী।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক কলামিস্ট।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট
কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল
পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের
ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ
আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ
পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি
বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন
বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-
মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান
৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ
ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি
ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী
ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস
সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত
সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
আওয়ামী সরকারের অসহযোগীতায় ব্রাজিল থেকে গরুর গোশত আমদানি করা সম্ভব হয়নি : রাষ্ট্রদূত