ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

বর্ষায় মশা বাহিত রোগ বাড়ে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৮ এএম

মশা নিজে কোন রোগ তৈরি করে না। মশা যদি কোন জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত অবস্থায় মানুষকে কামড় দেয়, আর সেই জীবাণু যদি রক্তে প্রবেশ করে, তাহলেই শরীরে রোগ হতে পারে। এই জীবাণু হতে পারে কোন ভাইরাস কিংবা অন্য কোন পরজীবী। মশা বাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, গোদরোগ আর হালের নতুন রোগ চিকনগুনিয়া অন্যতম। এছাড়া মস্তিষ্কে সংক্রমণ এনকেফালাইটিস, পীতজ্বর এই দুইটি অসুখও মশার কারণে ছড়াতে পারে।

১। ডেঙ্গু: ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। সাধারণত এডিস মশা এই ভাইরাসের বাহক। এই সময়টাতে ডেঙ্গু বেশী হলেও সারা বছরই এখন কম বেশী এই রোগ আমাদের দেশে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে রক্তনালী ডেঙ্গুর হয়ে যায়, বিভিন্ন রক্তকোষ কমে যায়, যকৃত ঠিকমত কাজ করে না। ডেঙ্গু জ্বর অনেকসময় লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও হতে পারে। তবে এর বৈশিষ্টপূর্ণ লক্ষণগুলো হচ্ছে উচ্চমাত্রার জ্বরের সাথে শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাথা, পিঠে তীব্র ব্যথা, কাশি, বমি। সাধারণত (সব সময় নয়) জ্বর চলে গেলে শরীরে লাল দানা উঠতে পারে। আর যদি ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয় তখন হাত, পা ঠান্ডা হতে পারে, নাড়ি দুর্বল হয়ে এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে। আরও খারাপ অবস্থায় রোগী ‘শকে’ চলে যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য জ্বর, ব্যথা কমানো আর শরীরের পানি ও লবণের মাত্রা ঠিক রাখা।

২। চিকনগুনিয়া: চিকনগুনিয়া ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়। ডেঙ্গুর সাথে এর বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। তবে এই রোগে শরীর ও গিঁটে ব্যথা বেশি তীব্র হয়, অনেক সময় গিঁটের নড়াচড়া কঠিন হয়ে যায়। প্রচন্ড মাথা ব্যথা, শরীরে ঠান্ডা অনুভূতি, বমি ভাব বা বমি, মাংসপেশিতে ব্যথাও এই রোগের লক্ষণ। ডেঙ্গুর তুলনায় এখানে শরীরে লাল দানা কম হয়। ইদানিং ঢাকার বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু চিকনগুনিয়া রোগী পাচ্ছেন যারা ডায়রিয়া, শরীর ধনুকের মত বেঁকে যাওয়া, পেটে ব্যথা, মুখে ঘা, অজ্ঞান হয়ে আসছেন জাতীয় লক্ষণ নিয়ে আসছেন। এই রোগেও জ্বর, ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার যথেষ্ট। বর্তমানে আইইডিসিআর এবং বিএসএমএমইউ চিকনগুনিয়ার নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনে গবেষণা করছে।

৩। ম্যালেরিয়া: মহিলা এনোফিলিস মশা যদি প্লাজমোডিয়াম নামের পরজীবী দিয়ে আক্রান্ত হয়, আর সেই পরজীবী কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে, তবেই ম্যালেরিয়া হয়। এই জীবাণু যকৃততে সংখ্যা বৃদ্ধি করে, আর পরবর্তীতে লোহিত কণিকায় ঢুকে তা ভেঙে ফেলে। উচ্চমাত্রার জ্বর (অনেক সময় ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা পরপর) সাথে শরীর ব্যথা, পেটে ব্যথা হতে পারে। রক্ত কমে যায়, যকৃত, প্লীহা ফুলে যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে জন্ডিস, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, ‘শক’, অজ্ঞান এসব হতে পারে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগের সাথে দেশের ভৌগলিক অবস্থানও চিন্তায় আনা হয়। ম্যালেরিয়া নাশক ওষুধে দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।

৪। গোদরোগ: এর আরেকনাম ফাইলেরিয়াসিস। এটি কয়েকধরণের কৃমিজাতীয় জীবাণু দিয়ে হয়। মশার (এবং কিছু মাছি) কামড় দিয়ে এই রোগ ছড়ায়। এটি শরীরের লসিকাগ্রন্থি আক্রান্ত করে। ফলে শরীরের লসিকা প্রবাহ কমে গিয়ে অনেকসময় পা, হাত ফুলে মোটা হয়ে যায়। এছাড়া কান, চোখ, অন্ডকোষ, চামড়াতলেও এই কৃমি ক্ষতি করে থাকে।

পাঠকদের জন্য কিছু বার্তা:
১। এই রোগগুলো প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই মশা নির্মূল করা ছাড়া আর কোন বিকল্প উপায় নেই।
২। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ভ্রমনের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ওষুধ সেবন করা উচিত।
৩। যেকোনো ভাইরাসের জ্বরে শরীরে ব্যথা, লাল দানা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। অযথা আতঙ্কিত হবেন না।
৪। দ্রুত ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ, যেমন ডাই-ক্লোফেনাক (ভলটালিন) ব্যবহার করবেন না। এগুলো প্রচন্ড বিপদজনক হতে পারে।
৫। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়াতে এন্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই।
৬। প্রচুর পানি ও তরল পান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর মশারি ব্যবহার খুবই জরুরী।

ডাঃ আহাদ আদনান
রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
শীতকালে মানসিক রোগ বাড়েশীতকালে মানসিক রোগ বাড়ে
ই-সিগারেট নিষিদ্ধ: সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ
লিউকোপ্লাকিয়া এবং মুখের ছত্রাক সংক্রমণ
ভুলে যাওয়া
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম