ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

বাড়তি ওজনে মা হতে সমস্যা

Daily Inqilab ইনকিলাব

০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:২০ এএম

যারা হালকা-পাতলা, চিকন তারা মোটাসোটা হতে চায়। কিন্তু তারা যদি মোটাসোটা হওয়ার সমস্যাগুলো জানত তাহলে ওটা কামনা করত না। ডিসকভারি চ্যানেলে ৬০০ পাউন্ড ওজনের এক মহিলাকে দেখানো হলো। মহিলা বলছে, সে নিজেকে নিজের ঘেন্না করে। মোটাসোটা হয় দু’টি কারণে। প্রথমত বংশগত ও দ্বিতীয় কারণ অর্জিত। যাদের বংশগত ইতিহাস আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যাদের ওজন অর্জিত, তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে স্বাভাবিক হতে পারে। স্থূলতা বা মোটাসোটা হওয়ার নানাবিধ সমস্যা। যারা এমন শরীরের অধিকারী তারাই শুধু জানে এই স্থূলতার কী অসুবিধা।

স্থূলতা নানা রোগব্যাধির কারণ হতে পারে। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন রক্তনালীর সমস্যা, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি রোগের শিকার হয় এরা। মহিলারা মোটাসোটা হলে বা বাড়তি ওজনের হলে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়ে। মা হতে পারে না। এখন প্রশ্ন- বাড়তি ওজন বোঝা যাবে কিভাবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের কথায় বিএমআই দ্বারা বাড়তি ওজন নির্ণয় করা সম্ভব। যেমন কত মিটার লম্বা হলে কত ওজন হওয়া উচিত, এ পদ্ধতি দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব। কারো বিএমআই যদি ১৮.৫- এর কম হয়, তবে তার ওজন কম। ১৮.৫ থেকে ২৪.৯-এর মধ্যে হলে স্বাভাবিক এবং ২৫.৫ থেকে ২৯.৯৯ হলে তার ওজন অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক। যদি ৩০-এর ওপরে হয় তবে সে স্থূল বা অস্বাভাবিক মোটা।

বাড়তি ওজন মহিলাদের কিভাবে সন্তান জন্মদানে অক্ষম করে ফেলে, আসুন সে বিষয়ে আলোচনা করা যাক। অনেকে বলতেই পারেন, অনেক বাড়তি ওজনের মোটাসোটা মহিলারা তো সন্তান জন্ম দিচ্ছে, তাহলে মোটাসোটা মহিলাদের নিয়ে এত কথা কেন? গবেষণা বলছে, যত নিঃসন্তান মহিলারা মা হতে পারছেন না, তাদের বেশির ভাগই মোটাসোটা এবং বেশি ওজনের। এসব মহিলার মাসিক অনিয়মিত এবং ওজন বেশি। চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, যাদের মাসিক অনিয়মিত তাদের ডিম্ব পরিস্ফুটন হয় না। ফলে তারা গর্ভধারণে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মেয়েদের এক প্রকার রোগ হয়, যাকে বলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম। এ রোগে আক্রান্ত মহিলারা মা হতে পারে না এবং এ রোগটি বেশির ভাগ মোটা বা বেশি ওজনের মহিলাদেরই হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, বেশির ভাগ মোটা মহিলারা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয় বলেই সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়ে। তারপর আছে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির প্রভাব। নানাবিধ রোগ সমস্যার মধ্যেও যদি কোনো স্থূলকায় মহিলা গর্ভধারণ করেনও, তাকে নানাবিধ রোগের মোকাবেলা করতে হয়। এসব রোগ যে শুধু মাকে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই নয়, গর্ভস্থ ভ্রƒণেরও ক্ষতি করে। যেসব সমস্যা হয় সেগুলো হচ্ছে- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কখনো অকাল গর্ভপাত, নিদ্রাহীনতা প্রিএকলামশিয়া, থ্রেম্বএমবলিজম ইত্যাদি। আবার এসব মোটা বা বেশি ওজনের মহিলারা যদি টেস্ট টিউব শিশু চান, তাও হয় না। যদি গর্ভবতী হয়ও তাহলে স্বাভাবিক প্রসব হয় না। সিজার করতে হয়। নানা কারণে মোটাসোটা মহিলাদের ডিম্ব পরিস্ফুটন হয় না। একটি প্রধান কারণ হলো, গোনাড্রটপিন হরমোনগুলো সঠিকভাবে নিঃসৃত হলেও ডিম ফোটে না। এর কারণ হচ্ছে, হিউমেন কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন- এর পরিমাণ কম। ডিমের মান অনেক কম। এসব মহিলা গর্ভধারণে অক্ষম। টেস্ট টিউব পদ্ধতিও এদের বেলায় ব্যর্থ হয়। আবার গর্ভধারণ করলেও গর্ভপাত হয়ে যায়। গর্ভপাত না হলেও সন্তান জীবিত আসে না বা থাকে না। এসব সমস্যার মূল কারণ হলো ওজন বেশি হওয়া।

ওজন বেশি থাকলে শরীরে হরমোন ও মেটাবলিক অনেক পরিবর্তন ঘটে। যেমন- স্টেরয়েড ও অন্যান্য হরমোন- লেপটিন, রেসিপ্টিন, প্রোলিন, এডিপোনেকটিন প্রভৃতি হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। কার্যকারিতারও পরিবর্তন হয়। ফলে ডিম ফুটতে সমস্যা হয়। পেটে ভ্রƒণ থাকলেও তার বৃদ্ধি হয় না। এসব সমস্যা সমাধানে দামি ওষুধপত্রেও কার্যকর হয় না। টেস্ট টিউব শিশু নেয়াতেও সমস্যা হয়। রোগীদের অর্থ বিফলে যায়। মহিলারা নানা সমস্যার শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নানাবিধ শারীরিক কষ্ট ও যন্ত্রণা হয়। তাই নানা চেষ্টা করে, বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে যদি গর্ভধারণ করেও, পরবর্তীকালে দেখা যায় গর্ভপাত হয়ে যায়।

কোনো মহিলা যদি টেস্ট টিউব বেবি নিতে চান, তাহলে আগে শরীরের ওজন ঝেড়ে ফেলুন। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করুন। সম্ভব হলে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করে ওজন ঝরিয়ে ফেলুন। আদর্শ ওজনের আওতায় আসুন। তাহলে মা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। স্বাভাবিকভাবে না হলেও টেস্ট টিউব বেবি পেতে পারেন। উল্লেখিত সমস্যাগুলোর মূলে বাড়তি ওজন। তাই স্বাভাবিক কিংবা টেস্ট টিউব বেবি চাইলেও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়ে যে ভুল করেছেন, এখন তার মাশুল দিয়েও লাভ হচ্ছে না। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সারা দিন শুয়ে-বসে কাটাবেন না। কায়িক পরিশ্রম করুন। ঘর ঝাডু ও ঘর ধোয়ামোছা করুন। এতে অসম্মানের কিছু নেই, বরং লাভবান হবেন। সর্বপ্রকার চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, পোলাও, বিরিয়ানি, খাসি ও গরুর গোশত বর্জন করুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন রোজা রাখুন বা উপবাস করুন। প্রয়োজন বোধে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুসরণ করুন। ওজন বৃদ্ধির ফলেই যত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যৌবনের প্রারম্ভে জীবনকে উপভোগ করতে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়ে ওজন বাড়িয়ে যে ভুল করেছেন, তার খেসারত সারাজীবন দিয়েও লাভ হয় না।

গবেষণায় প্রমাণিত বন্ধ্যত্বের প্রধান কারণ বাড়তি ওজন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, যাদের ডিম ফুটত না, ১০ বা ১৫ কেজি ওজন ঝরানোর পর তাদের ডিম ফুটেছে। এদের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। ৭৭ শতাংশ মহিলা গর্ভধারণ করেছে এবং সুস্থ সুন্দর শিশুর জন্মদান করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় নিঃসন্তান নারীদের মধ্যে ওই গবেষণা চালানো হয়েছিল। ওইসব নিঃসন্তান মহিলার ওজন ঝরানোর পর তারা গর্ভধারণ করে সুস্থ সুন্দর ফুটফুটে শিশুর মা হয়েছে। কাজেই বলা যায়, বাড়তি ওজনই বন্ধ্যত্বের প্রধান কারণ। মানুষের জীবনযাপন, রোগ-শোক এবং প্রজনন ক্ষমতার ওপর শরীরের ওজন বিরাট প্রভাব ফেলে। তাই সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও সুষম খাদ্য আমাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারে। যারা বিবাহিত জীবন শুরু করেছেন, তাদের এসব কথা মনে রাখলে মা হওয়ার জন্য কপাল চাপড়াতে হবে না। খাদ্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। সুখী হবেন।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবাইল-০১৭১৬-২৭০১২০।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শীতকালে মানসিক রোগ বাড়েশীতকালে মানসিক রোগ বাড়ে
ই-সিগারেট নিষিদ্ধ: সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ
লিউকোপ্লাকিয়া এবং মুখের ছত্রাক সংক্রমণ
ভুলে যাওয়া
ঘরের ধূলো থেকে এলার্জি
আরও

আরও পড়ুন

হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল

হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল

বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!

বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!

বাগেরহাটে  জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

বাগেরহাটে  জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস

অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস

খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর

খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর

হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী

হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী

তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল

পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল

‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’

‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’

শ্রীনগরে বিদুৎপৃষ্ট হয়ে রং মিস্ত্রির মৃত্যু

শ্রীনগরে বিদুৎপৃষ্ট হয়ে রং মিস্ত্রির মৃত্যু

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবীতে  সিলেট এমসি কলেজে মানববন্ধন

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবীতে  সিলেট এমসি কলেজে মানববন্ধন

সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ

সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ

রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো  কেজি বাঘাইড় মাছ

রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো কেজি বাঘাইড় মাছ

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা

সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান

সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান

গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!

গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান

দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

বিজয় দিবস রাগবি শনিবার

বিজয় দিবস রাগবি শনিবার