ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ এএম

ক. মাড়ি রোগ ঃ ব্রাশ করার সময় যদি দেখা যায় মাড়ির রং লাল হয়ে গেছে তাহলে বুঝতে হবে এটি মাড়ি রোগ বা জিনজিভাইটিসের প্রাথমিক অবস্থা। মুখে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া দাঁতে আঠালো ফিল্ম তৈরি করে যা প্ল্যাক গঠন করে। যদি আপনি দাঁত ব্রাশ করার মাধ্যমে প্ল্যাক অপসারণ না করেন তাহলে ধীরে ধীরে মাড়ি ফুলে যাবে। মাড়ি লাল হয়ে যাবে। এক সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়বে।

খ. দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লস না করা ঃ ঠিক ভাবে দাঁত ব্রাশ না করলে এবং নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার না করলে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। মাড়ি রোগ এবং রক্ত পড়া বন্ধ করতে হলে অবশ্যই মুখের অভ্যন্তরভাগ পরিস্কার রাখতে হবে। দাঁত ব্রাশের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম করে দুই দাঁতের ফাকে ফ্লস করতে হবে। এন্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। বছরে দুবার ডেন্টাল চেকআপ করতে হবে।

গ. ফ্লসিং এর অভ্যাস পরিবর্তন ঃ যদি আপনি দীর্ঘ সময় পর আবার ফ্লসিং আরম্ভ করেন অথবা আপনি ফ্লসিং এর ক্ষেত্রে নতুন তাহলে আপনি মাড়ি থেকে সামান্য রক্ত পড়তে দেখতে পারেন। মাড়ি ধীরে ধীরে এসব বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। ডেন্টাল ফ্লসিং প্ল্যাক অপসারনে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে বাধা দেয়। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে আপনার দাঁত ফ্লসিং করতে হবে, মাড়ি নয়। দাঁত ফ্লসিং করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাড়িতে আঘাত না লাগে।
ঘ. টুথব্রাশ যদি বেশি খসখসে হয় ঃ টুথব্রাশের ব্রিসলগুলো যদি শক্ত হয় তাহলে তা আপনার মাড়িকে আঘাত করতে পারে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে এমন হতে পারে যে, আপনার হয়তো নরম ব্রাশ প্রয়োজন অথবা আপনি জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করছেন। সব সময় নরম টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। পুরন নষ্ট ব্রাশ বাদ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে মাড়ি রোগের কারণে সব সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে না। তাই টুথব্রাশের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

ঙ. ধূমপানের কারণে ঃ ধূমপায়ীদের দ্বিগুণ সম্ভাবনা থাকে মাড়ি রোগের। তামাকের রাসায়নিক পদার্থ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে যা মাড়ি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই ধূমপান করলে মাড়ি রোগের বিরুদ্ধে আশানুরূপ লড়াই করা সম্ভব হয় না। মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সেরে উঠার ক্ষেত্রে ধূমপান বাধা দেয়। তাই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

চ. ঔষধের কারণে ঃ রক্ত পাতলা করার ঔষধ যেমন ওয়ারফেরিন এর কারনে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। এছাড়া এন্টি সিজার জাতীয় ঔষধ, উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ, ইমমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ মাড়ির বৃদ্ধি ঘটায়। তখন ব্রাশ করলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। বিষন্নতানাশক ঔষধ, এন্টি হিস্টামিন, উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ঔষধ শুষ্ক মুখের সৃষ্টি করে যা মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তাই এসব ঔষধ খাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
ছ. গর্ভাবস্থায় ঃ গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের কারনে মাড়িতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। মাড়ি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং মাড়ি থেকে সামান্য রক্ত পড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় জিনজিভাইটিস দেখা যায় যা প্রেগন্যান্সি জিনজিভাইটিস নামে পরিচিত। এই সময় গর্ভবতী মায়ের মুখের বিশেষ যতœ নিতে হবে। গর্ভাবস্থার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দাঁতের স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে।

জ. রক্ত জমাট বাধার সমস্যা ঃ রক্ত জমাট বাধার সমস্যার কারনে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। হেমোফিলিয়া, ভন উইলিব্রান্ড ডিজিজ রোগে যারা আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাধায় সমস্যা হয়। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া রক্ত জমাট না বাধার একটি লক্ষণ হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে ক্লটিং ফ্যাকটর দিয়ে চিকিৎসা রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই মাড়ি থেকে রক্ত পড়া সবসময় সাধারণ একটি বিষয় ধরে নেওয়া ঠিক নয়। কারণ অনেক সিস্টেমিক রোগের কারণে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।
ঝ. লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার ঃ লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের কারণেও মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। কেমোথেরাপি দিয়ে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু কেমোথেরাপির ঔষধ রক্তের প্লাটিলেট এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলেও মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।

ঞ. কৃত্রিম দাঁত ঠিক ভাবে না লাগলে ঃ ডায়বেটিস সহ কিছু সিস্টেমিক রোগে দাঁতের আধুনিক চিকিৎসা যেমন ইমপ্ল্যান্ট, ব্রিজ ইত্যাদি চিকিৎসা সম্ভব হয় না। তখন বাধ্য হয়ে কৃত্রিম দাঁত লাগিয়ে নিতে হতে পারে। কৃত্রিম দাঁত ঠিক ভাবে না লাগলে মুখে ক্ষত হতে পারে এবং রক্ত পড়তে পারে। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ট. ডায়াবেটিস ঃ ডায়াবেটিস থাকলে আপনার মাড়ি রোগ হতে পারে। মাড়ি রোগে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মাড়ির সঠিক যতœ না নিলে পেরিওডন্টাইটিস সহ মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। যথাযথ চিকিৎসা করলে পরিস্থিতি সাভাবিক হয়ে আসবে।

ঠ. মানসিক চাপের কারণে ঃ মানসিক চাপের কারণে শারীরিক স্বাস্থ্যরও ক্ষতি হয়। যখন আপনি মানসিক চাপে থাকেন তখন শরীর কিছু ক্যামিকেলস তৈরি করে যার ফলে প্রদাহ এবং মাড়ি রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যখন আপনি হতাশ বা বিষন্ন তখন আপনি বেশি মিষ্টি, ড্রিকস, এলকোহল এবং ধূমপান করতে পারেন। এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস মুখের অভ্যন্তরে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ড. সিরোসিস ঃ লিভার সিরোসিসে লিভার তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে। লিভার শরীর থেকে আগের মতো টক্সিন অপসারণ করতে পারে না। ফলে শরীরে টক্সিন জমা হতে হতে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হতে পারে। সিরোসিসের একটি লক্ষণ রক্তপাত, নাক থেকে রক্তপাত, মাড়ি থেকে রক্তপাত। অন্যান্য লক্ষণ হলো হলুদ ত্বক, হলুদ চোখ, ওজন হ্রাস এবং পেটের ডান পাশে ব্যথা যেখানে লিভার থাকে।

ঢ. মাড়ি থেকে রক্তপাত পরিবার থেকে আসতে পারে ঃ যদি আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন এর অস্বাস্থ্যকর মাড়ি থাকে তাহলে আপনার উত্তরাধিকার সূত্রে জিন থাকতে পারে যার কারণে আপনার মাড়ি রোগ থেকে শুরু করে রক্ত পড়তে পারে। জিন কোন গন্তব্য নয়। চূড়ান্ত পরিনতি নয়। যদি আপনি মাড়ির যতœ নেন তাহলে আপনি বংশগত বা পারিবারিক সূত্রে পাওয়া এই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দাঁত ও মাড়ির নিয়মিত যতœ নিতে হবে।

ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল-০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল- [email protected]


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শীতকালে মানসিক রোগ বাড়েশীতকালে মানসিক রোগ বাড়ে
ই-সিগারেট নিষিদ্ধ: সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ
লিউকোপ্লাকিয়া এবং মুখের ছত্রাক সংক্রমণ
ভুলে যাওয়া
ঘরের ধূলো থেকে এলার্জি
আরও

আরও পড়ুন

সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ

সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ

রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো  কেজি বাঘাইড় মাছ

রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো কেজি বাঘাইড় মাছ

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা

সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান

সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান

গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!

গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান

দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

বিজয় দিবস রাগবি শনিবার

বিজয় দিবস রাগবি শনিবার

প্রসিকিউটর মাহমুদকে হত্যার হুমকির অভিযোগ

প্রসিকিউটর মাহমুদকে হত্যার হুমকির অভিযোগ

বিএনপি কর্মীকে হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি গ্রেপ্তার

বিএনপি কর্মীকে হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি গ্রেপ্তার

মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মানুষ

মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মানুষ

‘সচিবালয়ের ন্যায় দেশটাও কি অরক্ষিত?’

‘সচিবালয়ের ন্যায় দেশটাও কি অরক্ষিত?’

কসবায় ৪ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেটের জন্য অটোচালক খুন

কসবায় ৪ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেটের জন্য অটোচালক খুন

পরশুরামে মুহুরী নদীতে পানির পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ

পরশুরামে মুহুরী নদীতে পানির পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ

বগুড়া কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে আওয়ামী লীগ  নেতাদের সিরিয়াল মৃত্যু নানামুখি প্রশ্ন

বগুড়া কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সিরিয়াল মৃত্যু নানামুখি প্রশ্ন

যতবার বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, ততবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে: এবিএম মোশাররফ

যতবার বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, ততবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে: এবিএম মোশাররফ

সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্র আছে: সারজিস আলম

সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্র আছে: সারজিস আলম

শীর্ষ ফুটবলে নিজেকে আরও কয়েক বছর দেখেন ফন ডাইক

শীর্ষ ফুটবলে নিজেকে আরও কয়েক বছর দেখেন ফন ডাইক

কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ

কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ

কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত